১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্রান্তিকালে চামড়া শিল্প

ক্রান্তিকালে চামড়া শিল্প - ফাইল ছবি

ক্রমবর্ধমান রফতানি প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ধুঁকছে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত। কয়েক বছর ধরেই দুর্দিন যাচ্ছে এই খাতের রফতানি খাতে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২১ সালে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রফতানি আয়ের পরিকল্পনা নিছক কল্পনাই থেকে যাবে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ১৩৮ কোটি ডলার ছিল। আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এটা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ১২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ডলার। চামড়া ২৪ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ২৩ দশমিক ৭১ শতাংশ কমে গিয়ে রফতানি হয়েছে ১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ছিল ২৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।

চামড়াজাত পণ্য থেকে ৫৪ কোটি ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে মাত্র ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। জুতা ও অন্যান্য পণ্যের লক্ষ্যমাত্রায় ৬০ কোটি ডলারের বিপরীতে আয় হয়েছে ৫৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয়েছে ৫৩ কোটি ডলার। এ ছাড়া, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১১৩ কোটি ডলারের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রফতানি করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছিল ১১৬ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার।

কিন্তু তা গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ কম। এবার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ছিল। গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সারা দেশে ছাগলের লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং প্রতি বর্গফুট বকরির চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের অনেকে মনে করছেন, দাম কমে গেলে প্রতিবেশী ভারতে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে চামড়ার দাম কমানোর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাদরাসা ও এতিমখানাগুলো।

এ দেশের অর্থনীতিতে চামড়া শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কয়েক বছর ধরে চামড়া কেনাবেচা নিয়ে বিশৃঙ্খলা চলছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সিন্ডিকেট দাম নিজেদের ইচ্ছামতো নির্ধারণ করে। যারা কোরবানি দেন, তাদের এ নিয়ে খুব একটা সচেতন হতে দেখা যায় না। সাধারণত কোরবানির চামড়া বা তার বিক্রীত অর্থ মাদরাসা ও এতিমখানায় দেয়া হয়। এ থেকে যা আয় হয় তার মাধ্যমেই মাদরাসা ও এতিমখানার লাখ লাখ শিক্ষার্থীর বছরের বেশির ভাগ সময়ের ভরণপোষণ ও পড়ালেখার খরচ চলে। চামড়ার দাম কমিয়ে দিলে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর খরচ জোগানো তখন কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

কোরবানির চামড়ার দাম কমানোর মধ্য দিয়ে দেশের চামড়া শিল্পের দৈন্য ফুটে উঠেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এবার চামড়া রফতানির প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ কমেছে। চামড়া শিল্প দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, সাভারে স্থানান্তরিত চামড়া শিল্প এলাকা আজো পুরোপুরি চালু না হওয়া। এ ক্ষেত্রে কর্র্তৃপক্ষের গাফিলতির বিষয়ে বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেই রয়েছে ৪১৮টি ট্যানারি। সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে অগ্রিম অর্থ বিনিয়োগ করেন বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে অর্থনৈতিক পরাশক্তি দেশগুলোর চামড়া শিল্পে বিনিয়োগের আকাক্সক্ষা প্রবল। চামড়ার বিশ্ববাজারের ৬০ শতাংশই দখলে রাখছে চীন। ২০ শতাংশ ইতালির, ১০ শতাংশ ভারতের, মাত্র ৭ শতাংশ বাংলাদেশের। বাকি দেশগুলো মিলে চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে থাকে।

শিল্প বিপ্লবের সূচনায় ইতালির টাসকানি প্রদেশের রাজধানী ফ্লোরেন্সে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। ডিপ্লোমা ইন লেদার টেকনোলজিস্টরা ফ্লোরেন্সে দীর্ঘকাল ধরে চামড়ার পণ্য প্রস্তুত করে আসছেন। ভারতের উত্তর প্রদেশের শহর কানপুরে রয়েছে বৃহৎ চামড়ার বাজার। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সৈনিকদের চামড়ার জুতা, রাইফেলের ফিতাসহ নানা পণ্য এখানে তৈরি করা হতো।

ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে ১৯০৫ সালে ইতালির টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের আদলে উত্তর প্রদেশের কানপুরে লেদার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিল। এরপর পাকিস্তান সরকার ১৯৫৫ সালে ঢাকার হাজারীবাগে ইস্ট পাকিস্তান লেদার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৮৩ সালে এক অজানা কারণে হাজারীবাগে দেশের একমাত্র লেদার ইনস্টিটিউট বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ডিপ্লোমা ইন লেদার টেকনোলজিস্টদের অভাবে দেশের চামড়া শিল্পের অধঃপতন ঘটতে থাকে। উপযুক্ত প্রযুক্তি এবং দক্ষ জনবলের সঙ্কটে পেশাদারিত্ব গড়ে ওঠেনি।

চামড়া খাতে দেশীয় চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বিদেশী অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার এবং অবকাঠামোগত সমস্যাও বড় চ্যালেঞ্জ। চামড়াজাত শিল্পের প্রধান কাঁচামাল চামড়া দেশের সব স্থান থেকে সারা বছর সংগ্রহ করা হয়। প্রতি বছর যে পরিমাণ চামড়ার প্রয়োজন, তার ৫০-৫৫ শতাংশই সংগ্রহ করা হয় ঈদুল আজহার সময়। তবে সচেতনতা ও পেশাদারিত্বের অভাবে শুধু কোরবানির ঈদ মওসুমে তিন হাজার কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ‘ভিশন-২০২১’ এর আওতায় দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয়ের যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার, তা বাস্তবে পরিণত করতে দরকার বিপুল সংখ্যক ডিপ্লোমা লেদার প্রযুক্তিবিদ। এ ক্ষেত্রে আটটি বিভাগে সরকারিভাবে আটটি এবং বেসরকারিভাবে ২০ থেকে ৩০টি লেদার ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনোলজিস্টরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব নিয়েই ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন।
khanaranjanroy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ, প্রতিদ্বন্দ্বী আ'লীগ নেতাকে ইসির শোকজ বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা চরফ্যাশনে স্কুল শিক্ষিকাকে কোপানো মামলার আসামি গ্রেফতার ফরিদপুরে মাইক্রোবাস-মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ ভেটো ছাড়াই ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘ সদস্যপদ ঠেকানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র সখীপুরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা ভারী বৃষ্টিতে দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা, দুর্বিসহ অবস্থা বেসিক ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ভরিতে ২০৬৫ টাকা বেড়ে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড ইরানি জবাব নিয়ে ভুল হিসাব করেছিল ইসরাইল! কূটনীতিতে বাইডেনবিরোধী হতে চান ট্রাম্প

সকল