২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আমেরিকার ভুয়া প্রচারণার নজির ৯/১১ : বিমানে সেদিন কী ঘটেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা - ছবি : সংগ্রহ

‘৯/১১ কমিশন’ রিপোর্ট (২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সঙ্ঘটিত) ঘটনার প্রায় ‘প্রত্যক্ষ’ বিবরণ তুলে ধরেছে। ‘আরব ছিনতাইকারীদের’ ছিনিয়ে নেয়া চারটি বিমানের কেবিনে সেদিন কী ঘটেছিল, এর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা ফুটে উঠেছে এতে।

সে বিমানগুলোর কোনো যাত্রী আর বেঁচে নেই। সংশ্লিষ্ট বিমানের যাত্রীরা তাদের সেলফোন কিংবা এয়ার ফোনের মাধ্যমে প্রিয়জনের সাথে যে কথোপকথন করেছেন, এর ভিত্তিতে ‘সহায়ক সাক্ষ্য’ নির্মিত হয়েছে। আলোচ্য রিপোর্ট মোতাবেক, ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ‘৯/১১’-এর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চারটি বিমানের মাত্র একটির ক্ষেত্রে (ইউএল-৯৩)।

বিমানযাত্রীদের ব্যক্তিগত নাটকীয়তার ওপর জোর দিয়ে ওই কমিশন ফোনে তাদের কথোপকথনের বেশির ভাগ বয়ান বানিয়েছে। বলা হয়েছে কয়েকজন আরবের হাতে ছিল ছোরা আর বাক্স কাটার হাতিয়ার। তারা ‘আল্লাহর নামে পরিকল্পনা করেছিল বিমানগুলো নামিয়ে এনে সেগুলোকে ‘বৃহৎ ও নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রে’ পরিণত করার জন্য।
তারবিহীন সম্প্র্রচার প্রযুক্তি
আলোচ্য কমিশনের রিপোর্ট এ ধারণাই দেয় যে, মহাশূন্যে অনেক উঁচুতে অবস্থান এবং নিচে ভূমির মধ্যে সেলফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল ভালো মানের এবং বেতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো বড় বাধা ছিল না। সেদিন বিমানযাত্রীদের কিছু কথোপকথন হয়েছে এয়ারফোনে।

বেতার টেলিযোগাযোগ শিল্পের বিশেষজ্ঞ মতামত কিন্তু ৯/১১সংক্রান্ত এই কমিশনের ‘অনুসন্ধানের ফলাফল’ সম্পর্কে গভীর সন্দেহ পোষণ করেছে। এটি অ্যান্ডটির মুখপাত্র অ্যালেক্সা গ্রাফ ৯/১১-এর ঘটনার পরে মন্তব্য করেছিলেন, ‘সে দিনের ফোনকলগুলো যে গন্তব্যে পৌঁছেছিল, তা হয়েছে ঘটনাক্রমে। মহাকাশে বেশ উচ্চতা থেকে ফোনকলের শব্দ মানসম্মত হয় না। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কলড্রপের অভিজ্ঞতাই হয়ে থাকে। মহাশূন্যে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত ফোনে কথা বলা যায় সামান্যই।’

নতুন বেতার প্রযুক্তি
৯/১১-এর পরপরই বিমান থেকে সেলফোনে ভূমিতে যোগাযোগ করা প্রসঙ্গে গভীর সন্দেহ করা হয়েছে। তদুপরি আরো একটি ব্যাপার ৯/১১ কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণœ করেছে। এই বিরাট ব্যাপারটি হলো, ২০০৪ সালের জুলাই মাসে ৯/১১ কমিশনের রিপোর্ট বের হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই আমেরিকান এয়ারলাইন্স ও কোয়ালকম গর্বের সাথে ঘোষণা দেয় যে, তারা একটি নতুন বেতার (ডরৎবষবংং) প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যার ফলে ভবিষ্যতে কোনো একসময়ে বিমানযাত্রীরা পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে বাণিজ্যিক বিমান থেকে সেলফোনে যোগাযোগ করতে পারবেন। এটা ২০০৪ সালের কথা। সে মাসের প্রথম দিকে আমেরিকান এয়ারলাইন্স একটি বিশেষ ধরনের বিমানে সেলফোনে যোগাযোগের বিষয়ে মহড়া দিয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, ভ্রমণকারীরা বিমান থেকে ব্যক্তিগত সেলফোনে যোগাযোগ করতে পারবেন ২০০৬ সাল থেকে। ২০০৪ সালের ২০ জুলাই ‘অ্যাভিয়েশন উইক’ একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদনে এ নয়া প্রযুক্তির খবর দিয়েছিল।

উচ্চতা ও সেলফোনে যোগাযোগ
সংশ্লিষ্ট শিল্পের বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান থেকে সেলফোনে যোগাযোগের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ভূপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা। একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার ওপরে বিমান উঠে গেলে যাত্রীরা আর সেলফোনে ভূপৃষ্ঠে যোগাযোগ করতে পারেন না। সাধারণত উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই বিমান সে উচ্চতায় পৌঁছে যায়। মোট কথা, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারবিহীন যোগাযোগের প্রযুক্তি যে পর্যায়ে ছিল, তাতে বিমান উঁচু অবস্থানে থাকলে যাত্রীদের পক্ষে সেলফোনে কথা বলা সম্ভব ছিল না। বিমান যদি তখন আট হাজার ফুটের কম উচ্চতা দিয়ে উড়ে যায়, কেবল তখনই যাত্রীরা সেলফোনের মাধ্যমে তাদের পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলতে পারতেন। এমনকি তখনো সেলফোনে খুব ভালোভাবে যোগাযোগ করা যেত না।
এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো ৯/১১-তে যাত্রীরা যখন সেলফোনে কথা বলছিলেন, তখন তাদের বহনকারী বিমান কত উচ্চতায় উড়ে যাচ্ছিল?

ইউনাইটেড এয়ার ফ্লাইট ১৭৫
৯/১১-এর দিন সকাল ৮টায় ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট ১৭৫ বিমানটি লস অ্যাঞ্জেলেসের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এটি লোগান এয়ারপোর্ট থেকে আকাশে ওড়ে ৮টা ১৪ মিনিটে। ৯/১১ কমিশন রিপোর্টে নিশ্চিত হয়ে বলা হচ্ছে, সেদিন সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটের মধ্যে ওই বিমান উড্ডয়নের নির্ধারিত উচ্চতা ৩১ হাজার ফুট ওপরে উঠে গিয়েছিল। একই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, এই উচ্চতা বিমানটি বজায় রেখেছিল ৮টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত। এর পরই এটি ‘নির্ধারিত উচ্চতা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছিল’।

ফ্লাইটটিতে ৮টা ৪৭ মিনিটে সর্বপ্রথম ধরা পড়ে, ‘অস্বাভাবিক কোনো কিছু’ ঘটছে। কারণ বিমানে ১ মিনিটের মধ্যেই দুইবার ‘বিকন কোড’ পরিবর্তন করা হয়। ৮টা ৫১ মিনিটে নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে বিচ্যুত হওয়ার ১ মিনিট পরেই নিউ ইয়র্কের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (এটিসি) বারবার বিমানটির সাথে যোগাযোগের প্রয়াস চালিয়ে ব্যর্থ হলো।

ঠিক ওই সময়ে লি হ্যানসন তার ছেলে পিটারের ফোনকল পেলেন। তার বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ইস্টনে। ইউনাইটেড ১৭৫-এর যাত্রী পিটার তাকে বিমানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ফোনে জানান, “মনে হয় ‘ওরা’ ককপিটের নিয়ন্ত্রণ দখল করেছে। বিমানের একজন অ্যাটেনডেন্টকে ছুরি মারা হয়েছে। আরো একজন সম্ভবত নিহত হয়েছেন। আমাদের বিমানটি অস্বাভাবিকভাবে চলছে।” হ্যানসনকে পিটার বলেন, আপনি ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সকে ফোনে জানান, এটা ফ্লাইট ১৭৫ এবং বোস্টন থেকে যাচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলেস : প্রকাশিত খবর মোতাবেক, পিটার কথা বলছিলেন সেলফোনে। অন্য দিকে সেদিন সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে বিমানটি অনেক উচ্চতায় স্থিরভাবে অবস্থান করছিল, যে পর্যন্ত না হঠাৎ মুখ থুবড়ে বিমানটি মাটিতে পড়ে যায়।

সেই সকালে, ৮টা ৫২ মিনিটে বিমানের একজন পুরুষ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ফোন করেন সান ফ্রান্সিসকোতে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স দফতরে। তিনি সেখানকার মার্ক পলিকাস্ট্রো নামের এক ব্যক্তিকে জানান, ‘বিমানটি ছিনতাই হয়েছে; দুই পাইলটকেই হত্যা করা হয়েছে; একজন কর্মচারীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং সম্ভবত ছিনতাইকারীরাই বিমান চালিয়ে যাচ্ছে।’ দুই মিনিট কথা বলার পর তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পলিকাস্ট্রো এবং তার একজন সহকর্মী ফোনে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

কয়েক মিনিট পরে, সকাল ৯টায় পূর্বোক্ত লি হ্যানসন ছেলে পিটারের কাছ থেকে আবার ফোনকল পেলেন। পিটার জানান, ‘বাবা, অবস্থার অবনতি ঘটেছে। ওরা একজন নারী স্টুয়ার্ডকে ছোরা মেরেছে। ওদের কাছে ছোরার সাথে ডাণ্ডাও আছে মনে হয়। ওরা বলছে যে, ওদের কাছে একটি বোমাও নাকি আছে। যাত্রীরা ছিটকে পড়ছেন এবং অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। বিমানটি দুলছে। মনে হয় না পাইলট এটি চালাচ্ছেন। মনে হচ্ছে বিমান নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। ওরা বোধহয় শিকাগো বা কোথাও যেতে চায়, যাতে উড়ে গিয়ে বিমানটি কোনো ভবনে ধাক্কা দিতে পারে। বাবা, দুশ্চিন্তা করো না। এটা ঘটলে খুব দ্রুতবেগেই ঘটবে। মাই গড, মাই গড।

হঠাৎ পিটারের ফোনকল বন্ধ হয়ে যায়। বাবা হ্যানসন ফোনে শুনেছেন, শেষ মুহূর্তে একজন মহিলা চিৎকার দিচ্ছেন। হ্যানসন তাড়াতাড়ি টিভি সেট চালু করলেন। টিভিতে দেখা গেল, নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে দ্বিতীয় একটি বিমান আঘাত হেনেছে। সকাল ৯টা ৩ মিনিট ১১ সেকেন্ডে ইউনাইটেড ফ্লাইট ১৭৫ এই ভবনের সাউথ টাওয়ারে ধাক্কা খায়। বিমানের সবাই এবং টাওয়ারের অজ্ঞাতসংখ্যক মানুষ সাথে সাথেই মারা যান।

আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭
আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭ ওয়াশিংটনের ডালাস বিমানবন্দর থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। এর ৩৬ মিনিট পরে এটি নির্ধারিত ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে যায়।

৮টা ৫১ মিনিটে এই ফ্লাইট শেষবারের মতো বেতার যোগাযোগ করেছিল। ৮টা ৫১ থেকে ৫৪ মিনিটের মধ্যে বিমান ছিনতাই শুরু হয়ে যায়। আমেরিকান ১১ এবং ইউনাইটেড ১৭৫-এই দুই ফ্লাইটের মতো এই বিমানেও ছিনতাইকারীরা ছোরা ব্যবহার করেছিল বলে জানা যায়। তিনটি বিমানেই সব যাত্রী এবং সম্ভবত ক্রুদেরকেও বিমানের পেছন দিকে ওরা জড়ো করে। ফ্লাইট ৭৭-এ ছিনতাইকারীদের কাছে বাক্স কাটার হাতিয়ারও ছিল। পাইলট ‘বিমান ছিনতাই করা হয়েছে’ বলে ঘোষণা দেন।

ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেয়া হয়
পেন্টাগনে আঘাত হেনেছিল এ ফ্লাইট ৭৭। সকাল ৮টা ৫৬ মিনিটে এর ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেয়া হয়। ৯/১১ কমিশন রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর ১৬ মিনিট পরে, ৯টা ১২ মিনিটে যাত্রীদের সেলফোনে যোগাযোগ শুরু হয়। এর ২০ মিনিট পরে ৯টা ৩২ মিনিটে বিমানটি আঘাত হানে পেন্টাগন ভবনে।

৯টা ১২ মিনিটে রেনি মে তার মাকে ফোন করেন। মা ন্যান্সি থাকেন লাস ভেগাসে। মেয়ে জানালেন, ‘ছয়টি লোক তাদের বিমানকে ছিনতাই করেছে এবং ওরা তাদের জড়ো করেছে বিমানের ভেতরে, পেছন দিকে।’ কমিশন জানিয়েছে, সকাল ৯টা ২৯ মিনিটে বিমানটি পেন্টাগনের ৩৮ মাইল পশ্চিমে সাত হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ছিল। দুই মিনিট পরেই এ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল।
ফ্লাইট ৭৭-এর বেশির ভাগ ফোনকলে কথা বলা হয়েছিল ৯টা ১২ থেকে ২৬ মিনিটের মধ্যে। ৯টা ২৯ মিনিটে অটোম্যাটিক পাইলটিং ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যায়। কমিশন রিপোর্টে এ কথা বলা হয়নি যে, বিমানটি সাত হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছার আগে সেদিন এর থেকে নিচু দিয়ে উড্ডয়ন করছিল।

ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৯৩
সেদিন চারটি বিমানের মধ্যে একমাত্র ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৯৩-ই কোনো ভবনের গায়ে আঘাত হানেনি। দৃশ্যত ফোনকলের মাধ্যমে সজাগ হয়ে এর যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের কব্জা করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এটা প্রতিরোধের জন্য ওরা পেনসিলভানিয়ায় বিমানটিকে বিধ্বস্ত করে দেয়। অবশ্য কেউ কেউ বলেছেন, এই বিমানকে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছিল।

কমিশনের রিপোর্ট মোতাবেক, ‘এই ফ্লাইটের প্রথম ৪৬ মিনিটের উড্ডয়ন রুটিনমাফিক ছিল স্বাভাবিক। ফলে বেতারে যোগাযোগে অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। যাত্রার দিক, গতি ও উচ্চতা পরিকল্পনা অনুসারে ঠিকই ছিল। কিন্তু সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে বিমানের ককপিটে সতর্কবাণী পাঠালেন ব্যালিঞ্জার। দুই মিনিটের মধ্যে পাইলট জ্যাসন ডাহল বিস্ময়ের সাথে জবাব দিলেন : ‘এই বার্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন’। ৯টা ২৮ মিনিটে ছিনতাইকারীরা হামলা চালায়। পূর্ব ওহাইও অঞ্চলে ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উড্ডীয়মান বিমানটি ৭০০ ফুট নেমে যায়। বিমানটি নামতে শুরু করার ১১ সেকেন্ডের মাথায় ক্লিভল্যান্ডে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (এফএএ) এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টার এই বিমান থেকে প্রেরিত প্রথম দুটি বেতারবার্তার সর্ব প্রথমটি রিসিভ করে। ফ্লাইট ৯৩-এ সেলফোনের কমপক্ষে ১০টি কলের কথা জানা যায়। কমিশন জোর দিয়ে উল্লেখ করেছে, বিমানযাত্রীরা ফোনে কল করা শুরু করেন ৯টা ৩২ মিনিট থেকে। কমিশনের রিপোর্ট মতে, ‘এর ৪ মিনিট আগে বিমানটি ৩৫ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল।

অপর দিকে ৯টা ৪১ মিনিটে ক্লিভল্যান্ডের এয়ার ট্রাফিকের সাথে বিমানটির যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। সকাল ১০টা ৩ মিনিটে এই বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল পেনসিলভানিয়ায়। ৯টা ৪১ মিনিটে এয়ার ট্রাফিক ইউনাইটেড ৯৩ ফ্লাইটের ট্রান্সপন্ডার সিগনাল হারিয়ে ফেলে। অন্যান্য বিমানের অবলোকনের ভিত্তিতে এর অবস্থান জেনে সে অনুযায়ী অনুসরণ করে দেখা গেল, বিমানটি প্রথমে পূর্বে মোড় নিয়ে এরপর দক্ষিণমুখী হয়েছিল।’ এর অর্থ ট্রান্সপন্ডার সিগনাল হারানো পর্যন্ত এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টার জানত, বিমানটি কত উচ্চতায় উড্ডয়ন করছিল। (৯টা ৪১ মিনিট থেকে ১০টা ৩ মিনিট পর্যন্ত রাডার ও প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে এ ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছিল)।

অধিকন্তু আলোচ্য রিপোর্টে এমন কোনো ইঙ্গিত ছিল না যে, বিমানটি অনেক নিচে নেমে এসেছিল। শুধু এটাই জানা গেছে, ৯টা ২৮ মিনিটে বিমানটি ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে নেমে এসেছিল মাত্র ৭০০ ফুট।
সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে এ বিমানে একজন ছিনতাইকারী যাত্রীদের উদ্দেশে ঘোষণা দেয় : ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন, পাইলট বলছি। মেহেরবানি করে বসে পড়ুন, আর চুপ থাকুন।’

বিমানে একটি বোমা!
‘আমাদের সাথে বোমা আছে। অতএব বসে থাকুন।’ (এটা ছিল ওই ঘোষকের শেষ বাক্য)। ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার উদ্ধারের পর জানা যায়, জাররাহ নামের সেই ঘোষণাদাতা একজন ছিনতাইকারী। সে অটোপাইলটকে নির্দেশ দেয় বিমান ঘুরিয়ে পূর্বমুখী করার জন্য। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে দেখা গেছে, একজন মহিলাকে (খুব সম্ভবত তিনি ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট) ককপিটে জিম্মি করা হয়েছিল। তিনি এক ছিনতাইকারীর সাথে ধস্তাধস্তি করার পর তাকে নীরব করে দেয়া হয় হত্যা করে কিংবা অন্য কোনোভাবে।

এর সামান্য পরই যাত্রী এবং ক্রুরা এয়ারফোন ও সেলফোন থেকে কল করতে থাকেন। বিমানটির উড্ডয়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের সাথে ফোনে তাদের কথা চলছিল। এর মধ্য দিয়ে যাত্রীরা বিমানের অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বাইরে জানান এবং তারাও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেলেন। যেমনÑ তাদের আপনজনরা ফোনে জানালেন, দুটি বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ধাক্কা খেয়ে পড়েছে। জানা গেছে, ছিনতাইকারীরা যাত্রীদের ফোন করতে দেখেও তা না দেখার ভান করেছিল।

ছিনতাইকারীদের গলায় বন্ধনী
ছিনতাইকারীরা গলায় পরেছিল উজ্জ্বল বর্ণের বন্ধনী যার গায়ে ছিল ফোঁটা ফোঁটা ছাপ। এরা যাত্রীদের বিমানের ভেতরে, পেছনে জড়ো হতে বাধ্য করে। ফোনে যাত্রীরা জানান, তাদের একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। আর দু’জন পড়ে আছেন মেঝেতে। তারা সম্ভবত পাইলট ও ফার্স্ট অফিসার। মরে কী বেঁচে আছেন, বোঝার উপায় নেই। একজন ফোনে জানালেন এক ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট নিহত হওয়ার খবর। কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, ছিনতাইকারীদের কাছে বন্দুক আছে। তবে ওদের বন্দুক আছে বলে কেউ দেখেননি এবং জানাননি। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গায় ছিনতাইকারীদের অস্ত্রের প্রমাণ মেলেনি এবং তাদের কাউকে শনাক্তও করা যায়নি। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি যে, গুলি ছোড়া হয়েছিল অথবা কখনো বন্দুকের উল্লেখ করা হয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস, বিমান ছিনতাইকারীদের কাছে বন্দুক থাকলে তারা ফ্লাইটের শেষ কয়েক মিনিটে এটা ব্যবহার করত। কারণ তখন যাত্রীরা তাদের মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।

অপর দিকে সংশ্লিষ্ট তিনটি ফ্লাইটের ৮২ জন যাত্রী জানিয়েছিলেন, ছিনতাইকারীরা দাবি করেছিল যে, ওদের কাছে বোমা আছে। কিন্তু এফবিআই আমাদের বলেছে, তারা বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার স্পটে বিস্ফোরণের হদিসমাত্রও পায়নি। এমনকি যাত্রীদের মধ্যে যিনি বোমা ছিল বলে সন্দেহ করেছেন, তিনি বলেছেন যে, ওই বোমা ভুয়া বলেই তার বিশ্বাস। বিমান ছিনতাইকারীরা বোমার মতো বেআইনি জিনিস নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের চেকপোস্টকে ফাঁকি দিয়ে পার করাতে চেয়েছে বলে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় বিশ্বাস করা যায়, সেই ছিনতাইকারীদের সাথে আসল নয়, নকল বোমা ছিল।

৯/১১ তারিখ সকালে বিধ্বস্ত বিমানগুলোর যাত্রীদের অন্তত পাঁচজনের ফোনকলের বক্তব্য থেকে জানা যায়, যাত্রী ও ক্রুদের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তারা বলেছেন, ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাই ছিল উদ্দেশ্য। এমনকি যাত্রী ও ক্রুদের মত নেয়া হয়েছিল, ছুটে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বিমানের নিয়ন্ত্রণ আবার নেয়া হবে কি না সে ব্যাপারে। সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা কাজে নেমেছিলেন। ৯টা ৫৭ মিনিটে যাত্রীদের পক্ষ থেকে হামলা আরম্ভ হয়ে যায়। এতে অংশ নেয়ার জন্য কয়েকজন বিমানযাত্রী স্বজনের সাথে ফোনে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

একজন কথা শেষ করে দেন এটা বলে : সবাই বিমানের প্রথম শ্রেণীর আসনগুলোর দিকে দৌড়াচ্ছে। আমাকেও যেতে হবে। বিদায়। ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে শোনা যায়, যাত্রীরা পাল্টা হামলা করছেন আর ককপিটের দরজায় কী যেন বাধা পেল। যারা এ রেকর্ডার পরে শুনেছেন, তাদের কারো কারো প্রিয়জনের কণ্ঠও শোনা গেছে সে হামলার সময়ে। কিছুক্ষণ অব্যাহত থাকে হামলা। জবাবে জাররাহ নামের বিমান ছিনতাইকারী তাড়াতাড়ি বিমানটিকে ডানে-বামে দোলাতে থাকে। তার উদ্দেশ্য ছিল, যাতে যাত্রীরা ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান। ৯টা ৫৮ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে জাররাহ ককপিটে আরেক ছিনতাইকারীকে বলছিল দরজাটা বন্ধ করে দিতে। এ দিকে সে নিজে বিমানকে ডানে-বামে দোলাচ্ছিল যদিও এতে যাত্রীরা হামলা বন্ধ করেননি। ৯টা ৫৯ মিনিটে জাররাহ কৌশল বদলিয়ে ফেলে এবং ওদের ওপর হামলা নস্যাৎ করার জন্য বিমানের ‘নাক’টা তীব্রভাবে ওপর-নিচ করতে থাকে। তখনকার অবস্থা বোঝা যায়, পরে রেকর্ডারে সজোরে ধাক্কা, পতন, চিৎকার এবং কাচ ও প্লেট ভাঙার শব্দ শুনে।

১০টা ৩ সেকেন্ডে জাররাহ বিমানটিকে মোটামুটি সুস্থির করে ফেলে। ৫ সেকেন্ড পরই তার গলা শোনা যায় : ‘আমি কি এটা খতম করে দেবো’? আরেক ছিনতাইকারীর জবাব : ‘না, এখনো সময় হয়নি। তারা সবাই এলে আমরা এটা শেষ করে দেবো।’ এ সময়ে ককপিটের বাইরে সংঘর্ষের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। জাররাহ আবার বিমানের ‘নাক’ ওপর-নিচ করল। ১০টা ২৬ সেকেন্ডে পেছনের এক যাত্রী বলে ওঠেন, ‘ককপিটে... আমরা না করলে শেষ হয়ে যাবো।’ ১৬ সেকেন্ড পরে এক যাত্রীর চিৎকার : ‘দোলাতে থাকো’। ১০টা ১ মিনিটে জাররাহ তার ভয়ঙ্কর দুলুনি থামিয়ে বলে ওঠে, ‘আল্লাহু আকবর’। ককপিটে সহদুর্বৃত্তকে সে প্রশ্ন করে, ‘এটাকে ভূপাতিত করব নাকি’? তার দোসর ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেয়। ওই দিকে যাত্রীরা তাদের বাধা দিয়েই যেতে থাকেন। ১০টা ২ মিনিট ২৩ সেকেন্ডে এক ছিনতাইকারী বলে, ‘এটা শেষ করে দাও, শেষ করে দাও।’ ছিনতাইকারী বুঝতে পেরেছিল আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরেই তারা যাত্রীদের হাতে পরাস্ত হবে। তখন বিমানটি নিচের দিকে ছুটে গেল।

বিমানটি পেছন দিকে কাত হয়ে যায়। ছিনতাইকারীদের একজন চিৎকার করে ওঠে, ‘আল্লাহু আকবর’। এ দিকে যাত্রীদের পাল্টা হামলা চলছিল। এ অবস্থায় বিমান পেনসিলভালিয়ার শ্যাঙ্কসভিলে একটি খালি মাঠে গিয়ে পড়ল। তখন বিমানটির গতি ছিল ঘণ্টায় ৫৮০ মাইল। ওয়াশিংটন থেকে ওড়ার প্রায় ২০ মিনিট পরে এ ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারী জাররাহর মতলব ছিল, বিমানটিকে দিয়ে আমেরিকার প্রতীকগুলোয় আঘাত হানা। কিন্তু সজাগ ও নিরস্ত্র যাত্রীদের কারণে সে তা করতে পারেনি।

একটি রহস্যজনক ফোনকল
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের এই ফ্লাইটের (ইউএএল-৯৩) ভাগ্যে কী ঘটেছিল সেদিন, তার একাংশ জানা গিয়েছিল এডওয়ার্ড ফেল্ট নামের এক বিমানযাত্রীর ফোনকল থেকে। কথিত আছে, তিনি ওই বিমান থেকে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন পেনসিলভানিয়ার একজন ইমারজেন্সি কর্মকর্তার সাথে। কিন্তু ফেল্ট কী করে তার ফোন নম্বর জোগাড় করতে পেরেছিলেন এবং কী করেই বা যোগাযোগে সফল হয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়।

প্রতীয়মান হয়েছে, তার কলটি সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে রিসিভ করা হয় এবং এর ৮ মিনিট পরেই বিমানটি পেনসিলভালিয়ার মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছিল। স্থানীয় ইমার্জেন্সি কর্মকর্তারা বলেছেন, ৯-৫৮ মিনিটে তারা মোবাইল বা সেলফোনের একটি কল পেয়েছিলেন। যিনি ফোন করেছেন, তিনি নিজের পরিচয় দেন আলোচ্য ‘বিমানের একজন যাত্রী’ হিসেবে। তার বক্তব্য অনুসারে, তিনি তখন নিজেকে বিমানের বাথরুমে তালা মেরে রেখেছেন। তিনি ফোনে জানান, বিমানটি ছিনতাই হয়ে গেছে। বারবার তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাই করে’।

আরো জানা গেছে, ক্যালিফোর্নিয়ার এক ব্যক্তি নিজের পরিচয় দেন ‘টম বার্নেট’ হিসেবে। তিনি স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, ‘বিমানে একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। সবাই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের তিনজন কিছু একটা করতে যাচ্ছে।’

যা হোক, পূর্বে উল্লিখিত এডওয়ার্ড ফেল্ট বিমানের টয়লেট থেকে ফোনকল করেছিলেন, তার জবাব দিয়েছেন পেনসিলভালিয়ার ইমার্জেন্সি সুপারভাইজার গ্লেন ক্রেমার। এটা লক্ষণীয় যে, ক্রেমারকে এরপর ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা এফবিআই নীরব করে দেয় (দ্রষ্টব্য ডেইলি মিরর-এ রবার্ট ওয়ালেসের তীক্ষè বিশ্লেষণ। সেপ্টেম্বর, ২০০২)। এটা পরিহাসতুল্য যে, এডওয়ার্ড ফেল্টের ফোনকলের বক্তব্য ছিল তাৎপর্যপূর্ণ এবং এটি ‘৯/১১ কমিশন’-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষ্য হতে পারত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে, কমিশনের রিপোর্টে এর কোনো উল্লেখই নেই।

আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট
ফ্লাইট ১১ উড্ডয়ন করেছিল সেদিন সকাল ৭টা ৫৯ মিনিটে। কমিশন উল্লেখ করেছে, ৮টা ১৪ মিনিটের পূর্বমুহূর্তে এর ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট বেটি ওং কিছু কথা বলেছেন। তবে এ ফ্লাইটে সেলফোন ব্যবহারের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো উল্লেখ নেই। রিপোর্ট মোতাবেক, সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে বিমানটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারের গায়ে আছড়ে পড়ে।

সমাপনী মন্তব্য
(বিমানযাত্রীরা সেদিন নিজেদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে মোবাইল ফোনে যেসব কথা বলেছেন, এর ওপর ভিত্তি করে কমিশন তার রিপোর্টে ১৯ জন ছিনতাইকারীর অনেক বর্ণনা দিয়েছেন। বিমান নিচু দিয়ে ওড়ার সময় এসব ফোনকলের কয়েকটির মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে যোগাযোগ করা সম্ভব হওয়ার কথা। তবে সে সময় ওয়্যারলেস টেকনোলজি বা বিনা তারে যোগাযোগের প্রযুক্তি ছিল না)। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট টেলিযোগাযোগ শিল্পের সব বিশেষজ্ঞই একমত। আমেরিকান এয়ারলাইন বা কোয়ালকম ঘোষণা দিয়েছিল, ‘মহাকাশে অধিক উচ্চতা থেকে সেলফোনে বিমানযাত্রীদের যোগাযোগের প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হওয়ার কথা ২০০৬ সালে’। এই সত্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

জনগণের অভিমত হলো, আমেরিকা সন্ত্রাসী হামলার সম্মুখীন- এ বিভ্রান্তিকর প্রচারণা যাতে হালে পানি পায়, সে জন্য বিমানযাত্রীরা সেলফোনে আরব ছিনতাইকারীদের সম্পর্কে বলার কথা প্রচার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বিমানের আরব ছিনতাইকারীদের সম্পর্কে ‘রিয়েল টাইম সাক্ষ্য’-এর ওপর এই লড়াই অনেকটা নির্ভর করেছে। বলা যায়, ‘আরব’ বলতে বাইরের দুশমন আলকায়েদাকে বোঝানো হয়েছে, যারা আমেরিকার জন্য হুমকি।

৯/১১ কমিশনের রিপোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আরব ছিনতাইকারীদের সাথে বিমানে কী ঘটেছে, তার বিবরণ। মার্কিন প্রশাসনের ভুয়া তথ্য এবং বানোয়াট প্রপাগান্ডার অবিচ্ছেদ্য অংশ এটি। প্যাট্রিয়ট আইনের আওতায় সন্ত্রাসবিরোধী বিধান প্রণয়ন এবং আফগানিস্তান ও ইরাকে আমেরিকার আগাম হামলার যুদ্ধ বাধানো যাতে যুক্তিযুক্ত হিসেবে দেখানো যায়, সে জন্য এমন প্রচার চালানো হয়েছে।
লেখক : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক ও কলামিস্ট
ভাষান্তর : মীযানুল করীম
[গ্লোবাল রিসার্চ-এর সৌজন্যে]


আরো সংবাদ



premium cement