১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মহাসঙ্কটে সৌদি আরব!

মহাসঙ্কটে সৌদি আরব! - ছবি : সংগ্রহ

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর অভিযান নিয়ে সৌদ পরিবার তীব্র আক্রমণের মুখে। প্রথমত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিসিসিপিতে তার সমর্থক একটি দলের সাথে আলাপকালে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের সাথে তার সাম্প্রতিক কথোপকথন নিয়ে বিশদ কথা বলেছেন, যেখানে ট্রাম্প সালমানকে বলেছিলেন, ওয়াশিংটনের সমর্থন ছাড়া তিনি দুই সপ্তাহের বেশি ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না।

মার্কিন রাষ্ট্রপতির মন্তব্য সৌদি রাজতন্ত্রের অহঙ্কারকে আঘাত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। একই সাথে মার্কিন-সৌদি সম্পর্কের অবস্থা নিয়ে ধারণা করতেও তা ছিল পর্যাপ্ত। এই সম্পর্ক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ক্রমাগতভাবে উন্নতির দিকে এগোচ্ছিল। আবার ট্রাম্পের বক্তব্যটির একটি বিশেষ দিক ছিল যে, রিয়াদ মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে যে দীর্ঘ ও জটিল যৌথ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে, সে সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।

মনে হতে পারে, সৌদিরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোট গঠন এবং এ অঞ্চলে ইরানবিরোধী গোষ্ঠী গঠন করার চেষ্টায় রিয়াদের অনুসৃত কক্ষপথে অর্থ ব্যয় করবে কি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্কের ফলে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সিদ্ধান্তে প্রায়ই ভঙ্গুরতা দেখা দেয় এবং তাতে তাদের জাতীয় স্বার্থের লঙ্ঘন ঘটে। এসব দেশের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর নগদ কেনাকাটার ব্যাপারেও কোনো স্বায়ত্তশাসন থাকে না, যা একটি বিরক্তিকর বিষয়। আর প্রয়োজন মনে করা হলে তাদের নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে হুমকি দেয়া হতে থাকে।

ট্রাম্পের কাঁচা কথাবার্তাকে জাতিসঙ্ঘে তার বক্তব্য থেকে আলাদাভাবে দেখা উচিত নয়। সেখানে তিনি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন (ওপেক)কে তেলের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে সাবধান করে দিয়েছেন। আর সৌদি আরব বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদকদের অন্যতম। অন্য কথায়, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থ প্রদানের জন্য সৌদিদের তেলের দাম বাড়াতে দিতে চায় না।

ট্রাম্পের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তার দেশের অহঙ্কারকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ক্রাউন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, রিয়াদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা অস্ত্রগুলোর জন্য নগদ অর্থ প্রদান করেছে। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন দশক আগে ১৭৪৪ সাল থেকেই সৌদি আরব ছিল। স্পষ্টত, এই শব্দগুলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনার উদ্দেশ্যে বলা নয়। রিয়াদ ওয়াশিংটনের অগ্রাধিকারগুলোর সাথে তার নীতিকে সংশোধন করার জন্য বেশ কঠিনভাবে কাজ করে। এই উদ্দেশ্যে সৌদিরা ফিলিস্তিন ও জেরুসালেমের ওপর ইসরাইলি অবস্থানকে মেনে নিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী সৌদি পররাষ্ট্র নীতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এই রূপান্তরের জন্য বিশাল ঝুঁকি গ্রহণের পরও ‘হাউজ অব সৌদ’ মনে করে, ট্রাম্পের সাথে আলিঙ্গন করার বাইরে তার জন্য কোনো বিকল্প নেই। তাই মার্কিন রাষ্ট্রপতির মন্তব্যকে গুরুত্বহীন করার চেষ্টাই শুধু করেছেন ক্রাউন প্রিন্স। তিনি যুক্তি দেন, একজন বন্ধু, ভালো বা খারাপ সব কিছুই বলতে পারেন।

বিশ্বের অন্যতম মনোযোগ আকর্ষণকারী আরেকটি ঘটনা হলো ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সৌদি সাংবাদিক ও ভিন্ন মতাবলম্বী জামাল খাশোগির অদৃশ্য হয়ে যাওয়া। গত সপ্তাহে তিনি তুরস্কে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি কাগজপত্র পাওয়ার জন্য সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করে আর সেখান থেকে ফিরে আসেননি। তুর্কি পুলিশ উদ্বিগ্ন যে, খাশোগি সেখানে খুন হয়েছেন এবং তাকে টুকরো টুকরো করে একাধিক ব্যাগে করে সৌদি কনস্যুলেট থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বিরোধীদের অপহরণ ও জোরপূর্বক অন্তর্ধানের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে রিয়াদের। ১৯৭৯ সালে বৈরুতে ভিন্ন মতের সৌদি নাসির আল-সাইদ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে জেনেভায় প্রিন্স সুলতান বিন তুর্কিকে অপহরণ করা হয়। এর পর সৌদ ইবনে সাইফ আল নাসেরের সন্দেহজনক অন্তর্ধান ঘটে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি আটক এবং তাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোর ঘটনা খুব বেশি আগের নয়।

খাশোগির কেলেঙ্কারি তুরস্ক-সৌদি সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুতর আঘাত সৃষ্টি করতে পারে। কী ঘটছে কর্তৃপক্ষ তা সঠিকভাবে উদঘাটন করতে পারলে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে একজন ভিন্ন মতাবলম্বীকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো তা ব্যাখ্যা করা কঠিন হবে রিয়াদের জন্য। তুর্কি রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, তিনি ‘খুবই দুঃখিত’ আর তদন্তের ওপর ‘নিবিড়ভাবে নজর’ রাখার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তুর্কি ও সৌদি কর্মকর্তাদের এই ঘটনায় একত্রে কাজ করা দরকার।

তা ছাড়া, আমাদের অবশ্যই সামনে রাখা উচিত, ব্যাপারটি সৌদিদের গুরুতর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি করেছে। ওয়াশিংটনে নিজেকে ‘সংস্কারবাদী’ হিসেবে চিত্রিত করার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স নিজে এখন সেখানে প্রচণ্ড সমালোচনার সম্মুখীন। মার্কিন কংগ্রেসে সৌদি আরবকে ‘শাস্তি’ দেয়ার কথা হয়েছে- যা মিসর, জর্দান এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের ছয় সদস্যকে একত্র করার উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত জোট তৈরির চলমান প্রচেষ্টাকে বিঘিœত করতে পারে। অবশ্যই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সহযোগিতার সীমা এবং বিপদগুলো বুঝতে হবে রিয়াদকে। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তুরস্কের সাথে কাজ করা ছাড়া অন্য কোনো ভালো বিকল্প নেই সৌদি আরবের জন্য। লোভকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। গোপন অপারেশন শুধু বন্ধুত্বকে বিনষ্ট করতে সহায়তা করে।
ডেইলি সাবাহ থেকে অনুবাদ মাসুমুর রহমান খলিলী


আরো সংবাদ



premium cement
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২

সকল