ইভিএমে সুষ্ঠু নির্বাচন কি সম্ভব?
- খালিদ জামান সেজান
- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:৩৩
আগামী ডিসেম্বরেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে এখন থেকেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে তৃণমূলের রাজনীতি। প্রার্থী বাছাই নিয়েও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তবে হঠাৎ করে নতুন বিতর্ক উঠেছে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না তা নিয়ে। যদিও নির্বাচন কমিশন এতদিন বলেছিল, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি নেই। সম্প্রতি বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ইসি থেকে বলা হয়েছে ১০০টি আসনে ব্যবহার করা হতে পারে ইভিএম। প্রশ্ন হচ্ছে- ইভিএমের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন কি সম্ভব?
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বাংলাদেশে আর্থসামাজিক যে পরিবর্তন এসেছে, তা ইতিবাচক। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। তবে নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে ইভিএম পরিচালনার মতো দক্ষ জনশক্তি কি বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে? খোদ ইলেকশন কমিশনারদের প্রায় প্রত্যেকেই স্বীকার করেন বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের মতো প্রশিক্ষিত জনবল আমাদের নেই। তা ছাড়া, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও মতবিভেদ রয়েছে। গত বছর ইসির সংলাপে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে অংশ নেয়া ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে ২৩টি ইভিএম নিয়ে ইসিকে মতামত জানিয়েছিল। এর মধ্যে বিএনপিসহ ১২টি দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ সাতটি দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে এবং তিনটি দল পরীক্ষামূলক ও আংশিকভাবে এবং একটি দল শর্ত সাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দেয়। এসব দলের মতামতের ওপর ভিত্তি করে ইসি এতদিন বলে এসেছে, সব দল না চাইলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। তবে আকস্মিকভাবে ইভিএম নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হওয়াতে আমাদের মতো আমজনতার মনে প্রশ্ন জেগেছে, ইভিএমে সুষ্ঠু নির্বাচন কি সম্ভব?
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে ইভিএম নেই। যেসব দেশে ছিল, সেসব দেশেও ইভিএম বাদ দেয়া হয়েছে। আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ডসহ অনেক দেশে ইভিএমকে বলা হয়েছে অগ্রহণযোগ্য। মার্কিনিরা মনে করেন- ভোট কারচুপি রোধে ইভিএম যথেষ্ট নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতও ফের ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত থেকে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে ইভিএম ব্যর্থ। তা ছাড়া, ইভিএমে জালিয়াতি করা তুলনামূলক সহজ। আইটি বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যানুযায়ী, ইভিএমের মাধ্যমে একবারে ৫০টি ভোটও দেয়া সম্ভব। দেশের বাইরে বসে ইভিএম হ্যাক করাও সহজ, এমনকি তা মাত্র এক মিনিটেই সম্ভব। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে তড়িঘড়ি করে ইভিএম চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে কেন, সে ব্যাপারে ইসির উচিত খোলাসা করে একটি বিবৃতি দেয়া।
প্রশ্ন হচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি রয়েছে আর অল্প সময়। এত অল্প সময়ে ইভিএমের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারবে তো ইলেকশন কমিশন? এসব প্রশ্ন আমরা যারা আমজনতা তাদের মনে দানা বাঁধছে। তাই ইসিকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় ইভিএম চালু করা বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবসম্মত হবে কি না। ইভিএম উদ্ভাবনকারী দেশগুলো এ প্রযুক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কী ভূমিকা পালন করে তা-ই এখন দেখার বিষয়।
লেখক : শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা