২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মদন ঢুলীর যুদ্ধযাত্রা

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে নানা হিসাব নিকাশ -

‘সাজ সাজ বলিয়ারে শহরে পৈল সাড়া, সাত হাজার বাজে ঢোল চৌদ্দ হাজার কাড়া’ দেশে এমনই একটা রণ প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক শক্তিগুলো নির্বাচনপূর্ব রিহার্সেল শুরু করেছে। তারা এখন নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য ও উপযোগিতা পরখ করে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তাই এবারের যুদ্ধটা বেশ উপভোগ্য হবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।

এখনো নির্বাচনের তসফিল না হলেও কমিশন সচিব ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ হবে বলে যে ঢাক বাজিয়েছেন, এতেই নাচুনীদের পালে হাওয়া লেগেছে। আবার ‘২৭ ডিসেম্বর নির্বাচন’ এমন কানাঘুষাও বিষয়টিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ফলাফল কাঙ্ক্ষিতই হোক আর ইভিএম এর ‘হাতের প্যাঁচ’ হোক একটা ‘রণ’ যে অপেক্ষা করছে তা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে এই যুদ্ধে যাতে যথাযথভাবে জনমতের প্রতিফলন ঘটে সে দিকেই দৃষ্টি গণতন্ত্রমনা ও শান্তিপ্রিয় সব মানুষের।

তবে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর তৎপরতায় মনে হচ্ছে খেলাটা খুব সহজ হবে না। ৫ জানুয়ারি ক্ষমতাসীনরা ফাঁকা মাঠে গোল দিলেও এবারের প্রেক্ষাপট আলাদা। যদিও বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভা থেকে ‘খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে’ এবং ‘সরকারের পদত্যাগ’ ছাড়া নির্বাচন নয় এমনটাই বলা হয়েছে। রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দল যাতে নির্বাচনে না আসে- সরকার সে বিষয়টিই নিশ্চিত করতে চাইছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সাথে যেকোনো ধরনের সংলাপ খোদ প্রধানমন্ত্রীই নাকচ করে দিয়েছেন। বিএনপি যদি খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে সরকার নিশ্চিত হয় তবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর কারাবাস যে দীর্ঘ হতে যাচ্ছে তা প্রায় নিশ্চিতই মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।

কারণ, সরকার কোনোভাবেই ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি নেবে বলে মনে হয় না। রাজনীতিতে যে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে তাতে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি নেয়াটাও স্বস্তিদায়ক নয়। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক এবারের নির্বাচনটা যে ৫ জানুয়ারি মার্কা হবে না তা অনেকটাই নিশ্চিত। কারণ, রাজপথের বৃহত্তর বিরোধী দল ছাড়াও অন্য বিরোধী দলগুলোও এ বিষয়ে বেশ তৎপর। তারা ‘বিনাযুদ্ধে নাহি দেব সূচাগ্র মেদিনী’ এমন মনোভাব নিয়েই কোমর বেঁধেছেন। বিষয়টি সরকারি শিবিরের কপালে অনেকটা ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে তারা হাল ছাড়ছেন না। মূলত রাজনীতি যে প্রান্তিকতায় এসে ঠেকেছে, তাতে ক্ষমতার বাইরে থেকে রাজনীতি করার সুযোগ তেমন একটা আছে বলে মনে হয় না।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যাসন্ন হওয়ায় কিভাবে নির্বাচনে জিতে নতুন মেয়াদে ‘দণ্ডমুণ্ডের কর্তা’ হওয়া যায় তা নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ভাবনার শেষ নেই। অভিযোগ আছে, সরকার নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের সব এজেন্সিকে ব্যবহার করছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি সরকার অপশাসন, দুঃশাসন ও গণনিপীড়নের কারণে ইতোমধ্যেই গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা শিক্ষার্থীদের কোটাসংস্কার আন্দোলন ও শিশু-কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে উদাহরণ হিসেবে টানছেন। সরকারের ওপর যে জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ মিলেছে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততায়। যা বিরোধী শিবিরের পালে হাওয়া দিয়েছে। ক্ষমতাসীনরা এসবকে গুজব বললেও সাম্প্রতিক ইভিএম ইস্যুর কারণে তাদের দাবি হালে পানি পাচ্ছে না। অস্বচ্ছতার অভিযোগে প্রায় সব দেশ থেকে ইভিএম বিতাড়িত হলেও এই বিতর্কিত যন্ত্র নিয়ে ইসি ও সরকারের যুগপৎ অতিভক্তিকে কেউই ভালো চোখে দেখছেন না।

এমনকি মহাজোটের শরীকরাও এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন। নির্বাচনে অংশীজন, সুশীলসমাজ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও আইটি এক্সপার্ট ও একজন কমিশনারের প্রবল আপত্তির পরও নির্বাচন কমিশনের আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব পাশ ও সরকারি দলের নেতাদের বগল বাজানোয় জনমনে নানা সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তড়িঘড়ি না করার কথা বলেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেননি। কিন্তু জাতীয় সংসদের মতো বৃহত্তর পরিসরে ইভিএম ব্যবহারে মতো যোগ্য ও প্রশিক্ষিত জনবল নির্বাচন কমিশনে নেই বলে মন্তব্য করেছেন খোদ কমিশন সংশ্লিষ্টরাই।

আবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের হাতে এত সময় নেই যে, তারা তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলবে। এ ছাড়া আমাদের দেশের ভোটাররাও ইভিএম ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। এমনকি এ যন্ত্র ব্যবহারে ভোটারদের মধ্যে একটা অনীহাভাবও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এত প্রতিবন্ধকতার পরও সরকার ও নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আমাদের দেশের বাস্তবতায় দলীয় সরকারের অধীনেই যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়, তা দিবালোকের মতোই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আসলে আমাদের দেউলিয়াপনার কারণেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারকে অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কেয়ারটেকার সরকার আমাদের দেশের রাজনীতিকদের কলঙ্কতিলক হলেও ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’র কারণেই তা উপেক্ষা করার সুযোগ খুব একটা নেই।

এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, দীর্ঘ দিন থেকেই দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে। আর বিষয়টি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে কেন্দ্র করেই। নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি নিয়ে আমরা একবার জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছতে সমর্থ হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দেউলিয়াপনা, পশ্চাৎপদ মানসিকতা ও উচ্চাভিলাষী মনোভাবের কারণেই সে অর্জনও আমরা ধরে রাখতে পারিনি। হংস উদরের স্বর্ণসম্ভারের মালিকানাকে চিরস্থায়ী করতেই আমাদের অনাকাক্সিক্ষত বিচ্যুতি ঘটেছে। যদিও এই রতœভাণ্ডারের মালিকানা কখনোই চিরস্থায়ী হয় না।

নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো সরব হয়ে উঠলেও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

বিরোধীরা এই প্রশ্নের একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ খুঁজলেও ক্ষমতাসীনরা এ বিষয়ে একেবারেই উদাসীন। প্রধান প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা এসব দাবিকে মোটেই পাত্তা দেয়নি বরং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে এবং সে নির্বাচনকে ভিত্তি ধরেই তারা এখন মেয়াদপূর্তির দ্বারপ্রান্তে। আগামীতেও তারা একই কায়দায় নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে আবারো ক্ষমতায় আসতে চায় বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচনে যে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে তা অনেকটা স্পষ্ট।

রাজনীতিকদের অদূরদর্শিতা ও স্বার্থান্ধতার কারণেই অনাকাক্সিক্ষতভাবে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশের রাজনীতি গতিপথ হারানোর কারণে প্রচলিত রাজনীতি এখনো গণমুখী হয়ে ওঠেনি। ফলে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছে। এমনকি গণতন্ত্রের আত্মপক্ষ সমর্থনের পথও রুদ্ধ করা হয়েছে। মূলত আমাদের দেশে গণতন্ত্রের নামে আত্মতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র এবং উচ্চাভিলাষের চরিতার্থ চলছে, এ কথা এখন মানুষের মুখে মুখে।

দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের ক্রান্তিলগ্নেই আমাদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যাসন্ন। অবস্থা যা চলছে তাতে এই নির্বাচন নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ থাকছে না। তবে আশাবাদী মানুষরা একেবারেই আশাহত নন। বিগত বছরগুলোতে আমাদের দেশে যে ধরনের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা হয়েছে বা এখনো হচ্ছে তা আমাদের নিরাশার দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে। আর এই রূঢ় বাস্তবতা ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে নতুন করে রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়েছে। সরকার ও বিরোধী পক্ষ এ ক্ষেত্রে প্রায় সমান্তরাল। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য জোট সম্প্রসারণ ও মহাজোটের ঐক্য মজবুত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। বিরোধী দলগুলোও সরকার পরিবর্তনে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে অগ্রগতি হলেও চূড়ান্ত সাফল্য এখনো আসেনি। আর আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয়টা এখনো কেটে যায়নি।

সরকার ও প্রধান বিরোধী পক্ষের এ ধরনের রণ প্রস্তুতির মধ্যেই রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের কথা চাউর হচ্ছে বেশ জোরেশোরেই। সরকার ও প্রধান বিরোধী শক্তির সমান্তরালে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক দৃষ্টিতেই দেখছেন। ড. কামাল হোসেন, ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী (বীরোত্তম), মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম রব ও ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী এই তৃতীয় শক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। কেউ কেউ এদের ঐক্য প্রচেষ্টাকে ‘কাকভূশণ্ডি সমিতি’ উপাখ্যান হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের কিছু কূটনীতিক এই প্রক্রিয়ায় নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছেন বলে বাজারে কিছু খুচরো কথা চালু আছে। এমনকি সরকার পক্ষও এমন অভিযোগ বরাবরই করে আসছে। সরকারের এই সরল স্বীকারোক্তি ও হাওয়া থেকে পাওয়া খবর তৃতীয় শক্তিকে কিছুটা হলেও অস্তিত্ব দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

তৃতীয় শক্তির উত্থানে সরকার পক্ষকে প্রথম দিকে বেশ চিন্তিত বলে মনে হলেও কিছু ক্ষেত্রে সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ফলে সরকারের শরিক দলের নেতা রাশেদ খান মেনন তৃতীয় শক্তির শীর্ষনেতাকে ‘কানা পোলার নাম পদ্মলোচন’ তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করেছেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী এই তৃতীয় শক্তিকে স্বাগতই জানিয়েছেন। মূলত, ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপিকে সংযুক্ত করতে যেয়ে তৃতীয় শক্তির রথী-মহারথীরা দলটিকে যেসব শর্ত দিয়েছে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। কারণ, তাদের প্রধান অ্যাজেন্ডা হলো সরকারবিরোধী একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্লাটফর্ম তৈরি করা। কিন্তু তারা বিএনপিকে যেসব শর্ত দিয়েছে তা নিয়েও নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এখানে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তারা যদি সরকারবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যই প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে অযৌক্তিক শর্ত কেন? তাই ঐক্যের নামে যদি বিভক্তিকেই উসকে দেয়া হয়, তাহলে তাদের দিয়ে দেশ ও জাতির কোনো কল্যাণ হবে বলে মনে হয় না। আর তারা এসব কথা বলার আগে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যটা নিজ আয়নায় দেখে নেয়া জরুরি বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল। কচ্ছপ দোহন করে যে ভাণ্ড পূর্ণ করা যায় না তা তো আর অস্বীকার করা যায় না। তাই চর্যাকবি আক্ষেপ করেই বলেছেন, ‘দুলি দুহি পীড়া ধরন ন যাই’।

তৃতীয় শক্তির সাম্প্রতিক কর্মতৎপরতায় জনগণ বেশ আশান্বিতই হয়েছিল। ক্ষমতাসীনরা দীর্ঘ ১০ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে ক্ষমতায় থাকলেও তাদেরকে শক্ত ধাক্কা দেয়ার শক্তি রাজনৈতিক ময়দানে আবির্ভূত হতে পারেনি। তাই মনে করা হয়েছিল যে, রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি হয়তো সে শূন্যতা কিছুটা হলেও পূরুণ করতে সমর্থ হবে। কিন্তু শুরুতেই তারা যেভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন তাতে তাদের দ্বারা এই মহতি কাজ কতদূর এগোতে পারবে তা নিয়ে বেশ সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, কে রাষ্ট্রপতি হবেন, প্রধানমন্ত্রীর পদই বা কে অলঙ্কৃত করবেন, কে মন্ত্রী হবেন আর সংসদের কার কত আসন হবে-এ নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে এই ‘প্রবীণ হিতৈষী সঙ্ঘ’। বিষয়টি গুজব হলে ভালো। কিন্তু সত্য হলে, তারা তাদের লক্ষ্যে কতখানি সফল হবেন, গণেশ উল্টানো আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। তারা তাদের শক্তি-সামর্থ্যরে কথা একবারও ভাবছেন না। তাদের ভাবসাব মহররমের জারির মদন ঢুলীর যুদ্ধযাত্রার কথায় বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে-
‘প্রথমে সাজিল মর্দ তুরুক আমানি
সমুদ্দুরে নামলে তার হৈত আঁটুপানি।
তারপরে সাজিল মর্দ নামে লোহাজুড়ি
আছড়াইয়া মারত সে হাতির শুঁড় ধরি।
তারপরে সাজিল মর্দ নামে আইন্দ্যা ছাইন্দা
বাইশ মণ তামাক নেয় তার লেংটির মধ্যে বাইন্ধ্যা।
তুগুলি মুগুলি সাজে তারা দুই ভাই,
ঐরাবতে সাইজা আইল আজদাহা সেপাই’।
এসব বীরগাথা তখনই সফল ও সার্থক হবে যখন জনগণ নির্বিঘœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। কিন্তু ‘প্রবীণ হিতৈষী সঙ্ঘ’ কি জনগণকে সে নিশ্চয়তা দিতে পারে ?
smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement