সড়ক দুর্ঘটনা
- অধ্যক্ষ মো: নাজমুল হুদা
- ১২ আগস্ট ২০১৮, ১৮:১৫, আপডেট: ১২ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৩৬
প্রাণী মাত্রই জন্ম ও মৃত্যু অবধারিত। তবে স্বাভাবিক মৃত্যু ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর মাঝে কিছুটা হলেও পার্থক্য বিদ্যমান। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সমগ্র পৃথিবীতে মৃত্যুর হার হিসেবে স্ট্রোকে মৃত্যু ঘটে সবচেয়ে বেশি। এরপরই সড়ক দুর্ঘটনার স্থান। ইসলামি জীবন দর্শনের আলোকে মানুষের মৃত্যুর উপলক্ষ্য পূর্বনির্ধারিত। তবে স্বাভাবিক জীবনের জন্য চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সবার কাম্য। যেকোনো বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা এবং আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা করা সবার কর্তব্য। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অবিরত ‘স্লোগান উঠেছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। বাংলাদেশের অনেক জ্ঞানীগুণী, ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। সড়ক দুর্ঘটনা জাতীয় সমস্যায় পর্যবসিত হয়েছে। যখনই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তখন প্রচারমাধ্যম সোচ্চার হয়। বিশিষ্টজনের বিবৃতি হয় প্রচারিত। নিরাপদ সড়কের জন্য মিছিল-মিটিং হয়। কিছু দিন পর সেই চেতনা আবার নিয়মিত হয়ে আসে। স্থায়ী সমাধানের পথে আমরা অগ্রসর হই না। নিম্ন লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে সড়ক দুর্ঘটনার হার সহনীয় মাত্রায় কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
১. বাঁক : বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে রাস্তার বাঁকে। এই বাঁক যানবাহন চলাচলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝে মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ হয়, অথচ জীবনঘাতী বাঁক অপসারণের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ থাকে না। সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও দূরদর্শী পরিকল্পনা না থাকায় এসব মারণফাঁদ বা বাঁক অদ্যাবধি সারা দেশের সড়ক ও মহাসড়কে রয়েছে। এ বিষয়ে আশুপদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
২. গতি : যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত গতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জনসচেতনতাও একান্ত কাম্য। আমরা যানবাহনের যাত্রী অনেক ক্ষেত্রে চালককে জোরে গাড়ি চালাতে উদ্বুদ্ধ করি। অনেক ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ করি, এমনকি কিছু দিন আগে বেশির ভাগ গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হতো; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। সরকারি উদ্যোগের ফলে রাতারাতি যানবাহন থেকে হাইড্রোলিক হর্ন অপসারিত হয়েছে। তাই বলা যায়, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে আইনের যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যানবাহন আইনে সড়কে গতিমাত্রার নির্দেশনা দেয়া আছে। সরকারের কর্তব্য আইনের মাধ্যমে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা। প্রচারমাধ্যমের এ বিষয়ে বিশেষ ভ‚মিকা রয়েছে। গতি নিয়ন্ত্রিত হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে লাঘব হবে বলে আশা করা যায়।
৩. ফিটনেসবিহীন গাড়ি : আমাদের দেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হচ্ছে, যা অনেক ক্ষেত্রে সড়ক বা মহাসড়কে চলাচলের উপযুক্ত নয়। দীর্ঘ দিনের পুরনো গাড়ি ফিটনেসবিহীন অবস্থায় সড়কে চলাচল করছে। এসব গাড়ি মানুষের জান ও মালের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তদারকির মাধ্যমে ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকে উচিত সড়ক ও মহাসড়ককে মুক্ত করা।
৪. চালকের অদক্ষতা : জাতীয় পত্রিকাগুলোতে অদক্ষ ও স্বল্পশিক্ষিত চালকদের লাইসেন্স দেয়া নিয়ে অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। পরিবহনমন্ত্রী লাইসেন্স দেয়া সম্পর্কে বিবৃতি দিয়েছেন। যেকোনো কর্মে শিক্ষা ও দক্ষতার বিকল্প নেই। সে কারণে অদক্ষ ও স্বল্পশিক্ষিত ব্যক্তিদের লাইসেন্স দেয়া অনেক ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ, এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে সড়ক দুর্ঘটনার হার বহুলাংশে হ্রাস পাবে।
৫. গতি নিরোধক : বাংলাদেশে জনবসতির ঘনত্ব অত্যধিক। সে কারণে সড়ক ও মহাসড়কে বেশির ভাগ সময় মানুষের যাতায়াত অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশের অনেক সড়ক ও মহাসড়কের পাশে হাটবাজার বসে। এসব কারণে যানবাহন চলাচলের ব্যাঘাত ঘটে। জননিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে রাস্তার ওপরে গতি নিরোধক বসানো হয়। দূর থেকে এগুলো চেনা বা বোঝার উপায় থাকে না। কারণ, গতি নিরোধকের ওপরে সাদা দাগ দেয়ার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সে দাগ দেয়া হয় না। ফলে দূর থেকে যানবাহনের চালকেরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। জননিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে প্রয়োজনে গতি নিরোধক অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় এর ওপর সাদা রঙের স্পষ্ট দাগ দিতে হবে।
৬. অসমতল সড়ক : বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় রাস্তার অব্যবস্থাপনা অনেকাংশে দায়ী। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না। সে কারণে বাংলাদেশের বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ভেঙে যায় এবং সড়ক ও মহাসড়কের মাঝখানে খাদ, গর্ত ও অসমতলতার সৃষ্টি হয়। এর ফলেও সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় এনে সড়ক ও মহাসড়কের উন্নয়ন করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমবে বলে আশা করা যায়।
৭. মাদকতা : মাদকতার থাবা দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। পরিবহন খাতের শ্রমিকের বেশির ভাগ মাদকাসক্তিতে আক্রান্ত। অনেক বাস ও ট্রাকের চালক ও হেলপার মাদক সেবন করে থাকে। মাদকে আক্রান্ত চালক ও হেলপারের কারণে অনেক ক্ষেত্রে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। পরিবহন খাতের শ্রমিক ও কর্মচারীদের লাইসেন্স দেয়ার সময় মাদক সেবনের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে আইনি প্রক্রিয়ায় মাদকসেবী পরিবহন খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের লাইসেন্স বাতিল করার প্রক্রিয়া থাকা বাঞ্ছনীয়।
৮. জেব্রা ক্রসিংয়ের অভাব : জনবহুল স্থানে ও সড়ক নিরোধকে ওপরে জেব্রা ক্রসিংয়ের চিহ্ন থাকা একান্ত জরুরি। তাহলে জনসাধারণ চিহ্নিত স্থান দিয়ে পারাপারের সুবিধা পেতে পারে। দুর্ঘটনাও বহুলাংশে হ্রাস পেতে পারে।
৯. অসচেতনতা : মানুষকে ট্রাফিক আইন ও যানবাহন বিধির ব্যাপারে সচেতন করা একান্ত কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও বিশেষ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। অসচেতন নাগরিকদের অনেকে ওভারব্রিজ বা বিকল্প রাস্তায় পারাপারের নিরাপদ সুযোগ গ্রহণ না করে, সদাব্য¯Í রা¯Íায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে অনেকে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই হ্রাস পাবে।
১০. বিরতিহীন গাড়ি চালনা : আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো চালকের বিরতিহীন ও বিশ্রামহীন গাড়ি চালনা। প্রত্যেক মানুষের কর্মের মাঝে বিশ্রাম প্রয়োজন। দীর্ঘ সড়কযাত্রায় সতর্কতা হিসেবে চালকের একজন সহকারী থাকা বাঞ্ছনীয়। তিনি চালকের শারীরিক অসুবিধা ও ক্লান্তিজনিত সময়ে চালকের ভ‚মিকা পালন করতে পারেন। আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাড়িচালকের কোনো সহকারী থাকেন না। তদুপরি বিভিন্ন সময় প্রয়োজনের তাগিদে পরিবহনের চাকা সচল রাখার স্বার্থে চালককে বিরতিহীন গাড়ি চালাতে হয়। ফলে চালকের ক্লান্তিজনিত কারণে পরিবহন সড়ক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। সে কারণে পরিবহন চালকের দক্ষ সহকারীসহ নিয়মিত বিশ্রামের খুবই প্রয়োজন। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা বহুলাংশে লাঘব হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা