২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কাণ্ড - ছবি : সংগ্রহ

‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বেড়াল’। সুকুমার রায়ের হ-য-ব-র-ল-এর সেই ভুতুড়ে কাণ্ড বাস্তবেও ঘটে। আর তা ঘটেছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকেই। ছিল স্বর্ণ, হয়ে গেছে মাটি। জমা রাখা হয়েছিল তিন কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের চাকতি ও আংটি। তা নাকি হয়ে আছে মিশ্র বা শঙ্কর ধাতু। ছিল ২২ ক্যারেট স্বর্ণ, হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ অবিশ্বাস্য অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। দৈবচয়ন ভিত্তিতে নির্বাচন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি স্বর্ণ পরীক্ষা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ অনিয়ম ধরা পড়েছে। প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। গত জানুয়ারিতে কমিটি অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়। পরিদর্শন দল ভল্টে রাখা স্বর্ণের যাচাই-বাছাই শেষে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যবেক্ষণ ছিল একটি স্বর্ণের চাকতি ও আংটি নিয়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টমস হাউজের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি স্বর্ণের চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আংটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ স্বর্ণ হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) স্বর্ণ পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ স্বর্ণ (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে, ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, ভল্টে থাকা স্বর্ণের চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল- এগুলো স্বর্ণের নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রণে তৈরি। এতে সরকারের এক কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিদর্শন দল প্রতিটি রসিদের অনুকূলে জমা হওয়া স্বর্ণ যাচাই করেছে। তাতে দেখা গেছে, স্বর্ণের অলঙ্কার এবং স্বর্ণের বারে ক্যারেটের তারতম্য করা হয়েছে। ২৪ থেকে ২০ ক্যারেটের ৯৬০ কেজি স্বর্ণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভল্টে ১৮ ক্যারেট হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। কম ক্যারেটে নথিভুক্ত থাকায় নিলাম বা অন্য উপায়ে বিক্রির সময় অতিরিক্ত ক্যারেটের বিপরীতে প্রাপ্য টাকা থেকে সরকার বঞ্চিত হবে। স্বর্ণের ক্যারেটের তারতম্য ঘটানোর কারণে সরকারের এক কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা ক্ষতির সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

ক্যারেটের তারতম্য হলে স্বর্ণের দামের কী পার্থক্য হয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নির্বাহী কমিটির সদস্য দেওয়ান আমিনুল ইসলাম জানান, ক্যারেটের মাধ্যমে স্বর্ণের মান নির্ধারিত হয়ে থাকে। আর মান অনুসারে স্বর্ণের দাম কমবেশি হয়। ২২ ক্যারেট বা ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ এবং ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দামের মাঝে বড় অঙ্কের পার্থক্য আছে। শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমসসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক হওয়া, স্বর্ণ নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়। কাস্টমস হাউজের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন স্বর্ণ জমা রাখা হয়, তখন ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্বর্ণকার দিয়ে পরীক্ষা করে স্বর্ণের মান নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংক, এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওইসব স্বর্ণ মান নির্ধারণপূর্বক ব্যাংক গ্রহণ করে রসিদ দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিষয়টি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এটি অকল্পনীয়। যারা কাস্টডিয়ান, তাদের হাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে বিস্মিতই হতে হয়। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে কাজ করার সূত্রে আমি জানি, এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকেন হাতেগোনা কয়েকজন। পরিদর্শন প্রতিবেদনে যে তথ্য এসেছে, ঘটনার সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের এর ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বের হয়ে আসবে। এই ঘটনাকে ছোট ভাবার কারণ নেই। ভল্টের মতো উচ্চ গুরুত্বের জায়গায় এমন অনিয়মকে গুরুত্ব না দিলে আরো বড় ঘটনা ঘটতে পারে।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আধা-সরকারি পত্র পাঠিয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁঁইয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে সামনাসামনি অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়ও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেবাশীষ চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তার মেইলে লিখিত প্রশ্ন পাঠালে ৯ দিনেও তিনি জবাব দেননি। পরে তার সাথে আবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই অবহিত করার মতো সুস্পষ্ট কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আশা করি, বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তদন্ত করবে এবং সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেবে। কী কী প্রক্রিয়ায় এটা করা হয়েছে, কারা সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছে, তা বের করা তাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ ব্যাংক এটা করতে না পারলে তাদের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হবে, তাদের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement
কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত এগিয়ে নিয়ে গিয়েও জেতাতে পারলেন না ত্রিস্তান

সকল