১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রভু-ভৃত্যের রাজনীতি

প্রভু-ভৃত্যের রাজনীতি - ছবি : সংগ্রহ

আমাদের গণতন্ত্রের সঙ্কটটা শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। সংশ্লিষ্টদের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণে তা আরো ঘনীভূত হয়েছে। সে ধারা অব্যাহত আছে এবং আগামী দিনেও থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। দেশে অবাধ গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণের জন্য আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার সুফলগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কাছে অধরাই রয়ে গেছে। আমাদের রাজনীতির কক্ষচ্যুতি এর অন্যতম কারণ। তাই কক্ষচ্যুত রাজনীতিকে গতিপথে ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূল বলে মনে হচ্ছে না বরং প্রতিকূলতা দিন দিন বাড়ছে বৈ কমছে না।

মূলত শ্রেণিবিশেষকে ক্ষমতালিপ্সা অতিমাত্রায় পেয়ে বসেছে। সঙ্গত কারণেই আমাদের রাজনীতির লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা অর্জন এবং তা চিরস্থায়ী বা দীর্ঘায়িত করার একটা অশুভ প্রবণতা ও প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে একশ্রেণীর উচ্চাভিলাষীদের মধ্যে। রাজনীতিকে আত্মপূজার উপলক্ষ বানানোর চেষ্টাও বেশ প্রবল। এ বিষয়ে সাফল্যও একেবারে কম নয়। তাই গণমানুষের জন্য কল্যাণের রাজনীতি এখন গণবিরোধী হয়ে ওঠেছে, যা আগামী দিনে আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক অতিক্রান্ত হলেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় আমাদের সাফল্য খুবই সামান্য। এমনকি আমরা আজো আমাদের নির্বাচনপদ্ধতি গ্রহণযোগ্য ও সর্বজনীন করতে পারিনি। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা সমসাময়িক বৈশি^ক রাজনীতিতে আর দেখা যায় না। মূলত দেশের ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক চর্চাই আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান অন্তরায়। জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাবটাও বেশ প্রবল। খুব সঙ্গতকারণেই জাতীয় রাজনীতিতে অনাকাক্সিক্ষত বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় ক্ষমতাসীন আর ক্ষমতাহীনেরা এখন মুখোমুখি। শুধুই যে মুখোমুখি এমনটি হলে তবুও কিছুটা স্বস্তিবোধ করা যেত; কিন্তু আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে, এ বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক এখন ‘অহি-নকুল’ পর্যায়কেও অতিক্রম করেছে। তাই দেশে সুস্থ ধারার গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এখন গড়ে ওঠেনি, যা আমাদের সব অর্জনকেই অন্তঃসারশূন্য করে ফেলেছে।

যে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম তা আজো সঙ্কটের আবর্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই সঙ্কটটা আরো প্রবল আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু সংবিধানে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের বিধান অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর মনে করা হয়েছিল যে, আমাদের দেশের গণতন্ত্রের ভাগ্যাকাশ থেকে কালো ছায়া কেটে যেতে শুরু করেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এটিই ছিল গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন। আমরা এই সাংবিধানিক বিধানকে গণতন্ত্র ও অবাধ নির্বাচনের রক্ষাকবচ হিসেবেই মেনে নিয়েছিলাম। এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আমাদের ভাগ্য মোটেই সুপ্রসন্ন ছিল না। তাই আমরা এই অর্জনকেও বিতর্কিত করতে মোটেই কসুর করিনি। সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের বিধানকে ঝেঁটিয়ে তাড়ানো হয়েছে। ফলে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আবারো গভীর সঙ্কটে পড়েছে। আর এ সঙ্কট উত্তরণের আশু কোনো সম্ভাবনা লক্ষ করা যাচ্ছে না, বরং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণেই তা আরো জটিল থেকে জটিলতরই হচ্ছে।

সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় আমাদের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আরো সমস্যাসঙ্কুল হয়ে পড়েছে। একটি মীমাংসিত ইস্যুকে নতুন করে ইস্যু বানিয়ে কৃত্রিমভাবে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরির দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও বিশেষ গরজেই কাজটি করা হয়েছে। কারা, কী কারণে, কোন উদ্দেশ্যে এই কাজটি করেছে তা কারোরই জানাশোনার বাইরে নয়। কিন্তু কাজটি অতি যতœসহকারে করা হয়েছে, এটিই বাস্তবতা। আর এর মাধ্যমে দেশ ও জাতি আবারো নতুন করে সঙ্কটে পড়েছে। কিন্তু ‘পোয়া বারো’ হয়েছে বিশেষ শ্রেণী ও গোষ্ঠীর। গুটিকয়েক মানুষের আত্মপূজাকে নির্বিঘœ করার জন্যই গোটা জাতিকেই জিম্মি করা হয়েছে। আর এই প্রায়শ্চিত্য যে আমাদেরকে কত দিন করতে হবে তার সময়সীমা নির্ধারণ করা না গেলে তা যে দীর্ঘ হবে বিষয়টি বাতাসের বেগ দেখেই অনুমান করা যায়।

মূলত সংবিধান থেকে নির্বাচনকালীন সরকার বাতিল হওয়ার পর গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পারদটা বেশ নি¤œমুখীই হয়েছে বা আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। কেউ বলছেন, পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আস্থার সঙ্কটে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচনে গণসম্পৃক্ততা নিয়েও প্রায় সর্বমহলেই প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সে নির্বাচন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও সে নির্বাচনকে ভিত্তি ধরেই দশম সংসদ ও বর্তমান সরকার মেয়াদপূর্ণ করতে যাচ্ছে। দৈব-দুর্বিপাক কিছু না ঘটলে সরকার যে মেয়াদপূর্ণ করতে যাচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ করার অবকাশ থাকছে না।

দশম সংসদ ও বর্তমান সরকার মেয়াদপূর্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলেও তা সরকারের জন্য মোটেই নির্বিঘœ হয়নি বরং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলা এবং চোখ, কান, নাক বন্ধ করেই বর্তমান পর্যায় পর্যন্ত আসতে হয়েছে। এককথায় সরকারের এই যাত্রাপথ মোটেই নির্বিঘœ হয়নি। তাই বিরোধী দলগুলোকে বিভিন্ন নৈতিক ও অনৈতিক পন্থায় নিয়ন্ত্রণে কাজটাও করতে হয়েছে অতি সন্তর্পণে। সরকারের বিরুদ্ধে বিরাজনীতিকরণ, এনকাউন্টারের নামে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, অপহরণ ও গুপ্তহত্যার অভিযোগগুলোও প্রবল। গণনিপীড়নের বিষয়টিও উপেক্ষা করার মতো নয়। মূলত দেশে গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার না থাকার কারণে সরকারকে এসব অনিয়মতান্ত্রিক পন্থা বেছে নিতে হয়েছে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। আর সুস্থ ধারার গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি রাজনীতিতে নতুন নতুন উপসর্গ সৃষ্টি করবে এটিই স্বাভাবিক।

যা হোক ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষা ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নির্বাচন বলে দাবি করেছিলেন ক্ষমতাসীনেরা। অল্প সময়ের ব্যবধানে আবারো একটি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল বলে সংলাপে অংশ নেয়া বিরোধী দল ও কূটনৈতিক মহল সূত্রে অবহিত হওয়া গিয়েছিল; কিন্তু সরকার সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে বা তারা সে পথে অগ্রসর হতে চায়নি। ফলে রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে।
কিন্তু সরকার পরিস্থিতিটা কোনো মতে সামাল দিয়ে মেয়াদপূর্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর এ সংসদের মেয়াদপূর্তির বিষয়ে বিরোধী মহলও কোনো প্রশ্ন তুলছে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে। সংসদের বাইরে বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হলেও সরকার তার বিপরীত মেরুতে। তারা দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের পক্ষে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের বিপরীত মেরুতে অবস্থান সচেতন মানুষকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। তারা আশঙ্কা করছেন হয়তো আগামী নির্বাচনও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ভাগ্যই বরণ করতে যাচ্ছে। সরকারের ভাবসাবটাও সে দিকেই অঙুলি নির্দেশ করে। আর বাস্তবতা যদি তাই হয় তাহলে দেশের চলমান সঙ্কট যে গভীর হতে গভীরতর হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়, যা কারো জন্যই শুভ ইঙ্গিত বহন করে না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনৈতিক মহলও বেশ নড়েচড়ে বসেছে। দেশের বুদ্ধিজীবী মহল ও সুশীলসমাজও এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য ও অবস্থান তুলে ধরছেন। মূলত সব পক্ষই তারা আসন্ন নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য দেখতে চায়। আর তা করা গেলে আমরা একটা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারি। কূটনৈতিক মহলও সরকার ও বিরোধী দলকে আলোচনার টেবিলে এনে আগামী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টা করছেন, যা তাদের সদিচ্ছারই পরিচয় বহন করে। যদিও তা আমাদের জন্য কিছুটা হলেও সম্মানহানিকর। কারণ, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে এভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হয় তা কালেভদ্রেও দেখা যায় না। মূলত আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা রীতিমতো আত্মপ্রবঞ্চণার শামিল। কিন্তু আমরা সে বৃত্ত থেকে কোনোভাবেই বেরিয়ে আসতে পারছি না।
যা হোক, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কূটনৈতিক মহলকে বেশ তৎপরই মনে হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে যে, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। গত গত ১৪ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। দু’টি আলোচনায়ই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ও এতে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

জানা গেছে, কূটনৈতিকভাবে বিভিন্ন দেশ ও জোট ক্ষমতাসীন দলকে চাপ দিচ্ছে। অনুরোধ করা হচ্ছে, যেন নির্বাচনের আগে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাথে রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা করা হয়। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক যেন হয় সেই কথা বলছে ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জানা গেছে, আলোচনায় সরকারপক্ষের প্রতিনিধিরা কূটনীতিকদের কাছে বিএনপি সাথে আলোচনায় যেতে পাঁচটি শর্ত দিয়েছেন। শর্তগুলোর তাত্ত্বিক পর্যালোচনায় না গিয়েও বলা যায় যে, সরকার নিজেদের ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তির অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায় না। তারা বিরোধী দলগুলোর সাথে সম্মানজনক রাজনৈতিক সম্পর্ক রাখতে চায় না বরং তারা যে প্রভু-ভৃত্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী সে কথা আবারো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা পুরো জাতিকে হতাশই করেছে। শর্তগুলো হচ্ছে-

১. বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়া ৭ ধারা পুনর্বহাল করতে হবে। বিএনপির নেতৃত্ব হতে হবে দুর্নীতিমুক্ত। দুর্নীতিবাজ কোনো নেতৃত্বের সাথে আওয়ামী লীগ নীতিগতভাবে কোনো সংলাপ করতে পারে না।
২. যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে বিএনপিকে। যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী এবং জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টদের সাথে বিএনপি নিবিড় যোগাযোগ। উগ্র মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধী, দেশদ্রোহীদের দোসর কারো সাথে আওয়ামী লীগ বৈঠকে বসতে পারে না।
৩. বিএনপি এখনো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকার করে না এবং শোক দিবস পালন করে না। অথচ সাংবিধানিকভাবেই এটি স্বীকৃত। বিএনপিকে যদি বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হয়, আওয়ামী লীগের সাথে সংলাপ করতে হয় তাহলে অবশ্যই জাতির পিতাকে স্বীকার করে নিতে হবে। এই দিনে শোক দিবস পালন করতে হবে। একই সাথে ১৫ আগস্টে বেগম জিয়ার ভুয়া জন্মদিন পালন করা যাবে না। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার সব ধরনের উৎসব বাতিল করতে হবে।
৪. বিএনপিকে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। অন্যায্য ও অযৌক্তিক কোনো দাবি নিয়ে আলোচনা হতে পারে না। আলোচনা হতে হবে সংবিধানের আওতায় নির্বাচন। সাংবিধানিকবহির্ভূত কোনো নির্বাচন বা কোনো কথা গ্রহণযোগ্য হবে না।
৫. বিএনপিকে নিয়ে সংলাপ হবে নির্বাচন কিভাবে আরো সফলভাবে করা যায় তা নিয়ে। নির্বাচনে যাওয়া-না-যাওয়া নিয়ে কোনো সংলাপ হবে না। নির্বাচন কিভাবে ভালো করা যায় তা নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে যাওয়ার অঙ্গীকারপূর্বক বিএনপিকে সংলাপে যেতে হবে।

বিরোধী দলের সাথে সরকারি দলের আলোচনার শর্তাবলি দেখলে মনে হয় সরকার বিরোধী দলগুলোকে সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে মনে করছে। তারা দেশে কোনো রাজনৈতিক দলের স্বাধীন সত্তাকেই স্বীকার করেন না। তারা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র ও তাদের কার্যপরিধি সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এমনকি সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সামাজিক কর্মকাণ্ডের ওপরও খবরদারি ও অনাকাক্সিক্ষত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। আর নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেই সরকার বিরোধী দলের সাথে সংলাপ করবে এমন শর্ত রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী বলেই মনে হয়। মূলত ক্ষমতাসীনেরা দেশকে এমন একটি প্রেক্ষাপট ও পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে যে, তারা শুধু দেশের মালিক-মোক্তার। আর অন্যদের রাজনীতি করতে হলে সরকারের কাছে দাসখত দিয়েই করতে হবে, এমন দাবি কোনো গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান সমান্তরালে হওয়ায় বাঞ্ছনীয়।

নির্বাচনে অংশ নেয়ার দাসখত দিয়েই সরকারের সাথে সংলাপে যেতে হবে আর বর্তমান সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন করতে হবে তাহলে সংলাপটা কিসের? মূলত সরকার দেশের মানুষকেই ভৃত্যে পরিণত করে নিজেরা প্রভুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের নেতিবাচক মানসিকতা যেমন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক, তেমনিভাবে এর অতীতও সুখকর নয়। দেশের মানুষকে ভৃত্যে পরিণত করার কারণে ঔপনিবেশিক শাসন টিকতে পারেনি, পাকিস্তানি শাসনও দীর্ঘায়িত হয়নি। তাই জনগণকে আস্থায় নিয়ে রাজনীতি করা এখন সময়ের দাবি। রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। আর এর আবেদন এখনো শেষ হয়ে যায়নি বরং তা হচ্ছে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যত তাড়াতাড়ি এ কথা উপলব্ধি করতে পারবে ততই মঙ্গল।

smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল