২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য এবং ‘মৌচাকে ঢিল’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী - ছবি : সংগ্রহ

জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ দেশে একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনি একজন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা। প্রতিষ্ঠা করেছেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র। তিনি মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় সাক্ষাৎ দিয়ে থাকেন, যা পড়ার চেষ্টা করি। সম্প্রতি নয়া দিগন্তে তিনি বাজেট নিয়ে বড় একটি নিবদ্ধন লিখেছেন। একবার আমার ভায়রার ছেলেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সে তখন যশোর জেলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। সে দিন ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সে দিনের আলোচনায় তিনি স্মৃতিচারণ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারত কিভাবে আমাদের দেশের সম্পদ লুট করেছে। বিশেষ করে যশোরের বর্ডার থেকে ভারতে নেয়া হয় সে সময়ে অনেক মূল্যবান জিনিস।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মৃতিচারণ শুনে আমার ভায়রার কিশোর ছেলেও অবাক হয়েছে এটা জেনে, আমাদের দেশকে কিভাবে ভারত লুট করেছে। টিভি টকশোতে জনাব চৌধুরীর কোনো আলোচনা থাকলে আমি তা শুনি। সম্প্রতি এক বেসরকারি টিভি টকশোতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাজেট নিয়ে কথা বলেছেন। টকশোতে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবদুুল মান্নান। সে দিন জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার আলোচনায় মসজিদ নির্মাণ নিয়ে যে কথা বলেছেন, তা আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয়নি। তিনি বলেছেন সরকার কেন টাকা খরচ করে প্রতি উপজেলায় মসজিদ নির্মাণ করবে? এটাতে নাকি সরকারের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে। তিনি বলেছেন, এভাবে মসজিদ নির্মাণ না করে সেই টাকা দিয়ে প্রতি উপজেলায়, প্রতি ইউনিয়নে বিশেষ করে মেয়েদের জন্য খেলাধুলার মাঠ এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করলে অনেক ভালো হবে। তিনি বলেছেন, এ দেশে আগে যাত্রা অনুষ্ঠান হতো, সেগুলো এখন চলছে না। সেগুলো চালু করলে মাদকাসক্তি কমতে পারে। তিনি আরো বলেছেন, মসজিদ আমাদের বাড়িতে আমার দাদা নির্মাণ করেছিলেন। এই মসজিদ নির্মাণ করতে হবে ব্যক্তি উদ্যোগে। এগুলোর দায়িত্ব কেন সরকার নিতে চাচ্ছে ইত্যাদি অনেক কথা তিনি সে দিন বলেছেন। টকশোতে উপস্থিত অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভদ্র ও সুন্দরভাবে উত্তর দিয়েছেন যে, এই মসজিদগুলো নির্মাণ করা হবে সৌদি সরকারের অর্থ-সহায়তায়। তা ছাড়া একটি মুসলিমপ্রধান দেশে মসজিদ নির্মাণ হতেই পারে। এখানে শুধু মসজিদ থাকবে না, সাথে থাকবে কালচারাল কমপ্লেক্সও। ইতিবাচক কথার জন্য আমি তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি অবশ্যই জানেন, ব্যক্তিগতভাবে এ পৃথিবীতে শুধু মসজিদই নয়; বহু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। আমাদের দেশে এমন নজিরের অভাব নেই। তারপরও সে ধরনের প্রতিষ্ঠান সরকারও প্রতিষ্ঠা করছে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানেও সরকার বড় অনুদান দেয়। এ ছাড়া সরকার জনগণের টাকা খরচ করছে অনেক অপ্রয়োজনীয় কাজেও ব্যয় হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। সুতরাং মসজিদ সরকারি টাকায় নির্মাণ করলে অসুবিধা কোথায়? বরং জনগণ বেশি উপকৃত হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, পবিত্র জুমার দিনে দেশের বেশির ভাগ মসজিদে স্থানাভাবে মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে অসুবিধা হয়। সবাই যদি মসজিদমুখী হয়, তাহলে আরো কত মসজিদ নির্মাণ করতে হবে সেটা ভেবে দেখুন। গাজীপুরের কাশিমপুরে এক বড় ব্যবসায়ী এক মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজের সময় জায়গা পাননি। পরে তিনি তার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের এলাকার মধ্যে মাত্র ছয় মাসেই ছয়তলা একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন।

দেশের সবাই তো তার মতো মসজিদ নির্মাণ করতে পারবে না। তাই সরকারের প্রতি উপজেলায় কেন, প্রতিটি গ্রামে মসজিদ নির্মাণেও ক্ষতি নেই। উল্লেখ্য, জাফরুল্লাহ চৌধুরী যখন টিভি টকশোতে এমন আলোচনা করছিলেন, তখনো একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেননি যে, এই মসজিদগুলো সরকার নিজ খরচেই নির্মাণ করবে। পরে জানা গেছে, সৌদি সরকার এখনো ওই অনুদানের টাকা দেয়নি। সরকার নিজ খরচে এই মসজিদ নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো বিজ্ঞ ব্যক্তির বলা উচিত, সরকার যেন ধর্মকে নিয়ে কোনো ব্যবসা না করে। তারা ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন চালায় নানা মিথ্যা অভিযোগে। ক্ষমতাসীন মহল অনেক ধর্মব্যবসায়ী, ভণ্ড পীরদেরও মিত্র। আবার চরম ধর্মবিরোধী লোকগুলোরও মিত্র তারা। এসব ব্যাপার মিডিয়াতে পরিষ্কারভাবে তথ্য তুলে ধরা দরকার। আমাদের দেশে লাখ লাখ লোক কুরআন পড়তে পারেন না। বহু লোক ইসলামের মৌলিক শিক্ষা থেকে অনেক দূরে। সরকার যে ধরনের মসজিদ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তার মাধ্যমে দেশের জনগণের বড় একটি অংশকে নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান করা যায়। ইসলামি সঙ্গীতচর্চাও সেখানে করানো যায়। এসবের মাধ্যমে মাদকবিমুখ করা সম্ভব তরুণদের।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক শফিক রেহমান একসময় দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকা চালাতেন। সেটা তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি মৌচাকে ঢিল নামে মাসিক একটি ম্যাগাজিনও প্রকাশ করতেন। ক্ষমতাসীন সরকার বিভিন্ন চাপ তৈরি করে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে। এতে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী লেখালেখি করত। এর পাঠকও ছিল প্রচুর। সম্প্রতি মৌচাকে ঢিলের ক’জন লেখক-লেখিকা ঢাকার আফতাব নগরে এক আড্ডায় বসেছিলেন। সেখানে আমিও ছিলাম।

মৌচাকে ঢিলে একবার শাড়ি নিয়ে লেখা আহ্বান করেছিল। এতে নাকি ১০ হাজার লেখা এসেছিল। কিন্তু তারা মাত্র ৩০০ লেখা ছাপাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই উদাহরণ দিলাম এ জন্য যে, জাফরুল্লাহ চৌধুরী যাত্রা অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। যাত্রা অনুষ্ঠানে সরাসরি জুয়া খেলা চলে। আরো চলে মাদক সেবন, তার চেয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই মৌচাকে ঢিল এবং আরো কিছু পত্রিকা আছে, সেগুলো চালু হলে তরুণ-তরুণীদের বড় একটি অংশ মোটামুটি ভালো সাংস্কৃতিক চর্চায় নিয়োজিত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement