২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিকাশমান ওষুধ শিল্প

বিকাশমান ওষুধ শিল্প - ছবি : ইন্টারনেট

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে এ দেশে ব্যবহৃত ওষুধের বেশির ভাগই আমদানি করা হতো বিদেশ থেকে। সামান্য যে ওষুধ তৈরি হতো দেশে তার গুণগত মান নিয়েও ছিল প্রশ্ন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর বাংলাদেশ চাহিদার বেশির ভাগ ওষুধই নিজেরা উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রফতানি হচ্ছে পৃথিবীর ১৬০টি দেশে। এর মধ্যে ইউরোপ আমেরিকার বাজারেও জেঁকে বসেছে বাংলাদেশের ওষুধ। যেসব দেশ ওষুধের মানের ব্যাপারে আপসহীন তারাও বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ওষুধ রফতানি হয়েছে। এ সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ কোটি ডলার। তার বিপরীতে ওষুধ রফতানির পরিমাণ ৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ওষুধ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ৫৪টি ওষুধ রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান ১২৭টি দেশে রফতানি করে থাকে। ২০১১ সালে রফতানিকারী দেশের সংখ্যা ছিল ৪৭টি। এর পর কয়েক বছর কোনো প্রতিষ্ঠান চালু হয়নি। কিন্তু ২০১৫ সালে কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১৩টিতে। বর্তমানে ১২৭টিতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণের ২৫টি দেশে। ইউরোপের ২৬টি, অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি, আফ্রিকার ৩৪টি ও এশিয়ার ৩৭টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হয়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ২০১৫ সালের জুন মাসে দেশের প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি হিসেবে ইউএস এফডিএ কর্তৃক নিরীক্ষিত ও অনুমোদিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটি ৫০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করছে। বেক্সিমকো ফার্মা ইউএস এফডিএ, এজিইএস (ইইউ), টিজিএ অস্ট্রেলিয়া, হেলথ কানাডা, জিসিসি এবং টিএফডিএসহ বিশ্বের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত।
অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গেল কয়েক বছরে দেশ থেকে ওষুধ রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সব মিলিয়ে ওষুধ রফতানি হয় ৪২৬ কোটি টাকা। ১২ সালে রফতানি হয়েছে ৫৫১ কোটি টাকা। ’১৩ সালে ৬১৯ কোটি টাকা। ’১৪ সালে ৭৩৩ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে রফতানি হয়েছে ৮৩২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছর ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে থেকে ওষুধ রফতানি হয়েছে দুই হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, দেশে বিশ্বমানের ওষুধ পরীক্ষাগারের কাজ চলছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে। এসব কাজ শেষ হলে এ শিল্পের অবস্থান আরো দৃঢ় হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিকাশ খুবই আশাব্যঞ্জক। বছর কয়েক আগেও জীবনরক্ষাকারী ৫০ শতাংশেরও বেশি ওষুধ আমদানি করতে হতো। এখন সেটি অনেক কমে এসেছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তথ্য মতে, এখনো দেশের বেশির ভাগ ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে ওষুধের কাঁচামালের বাজার প্রায় ১২০০ কোটি টাকার।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের অগ্রযাত্রার মূল কারণ আমাদের ওষুধনীতির যথার্থ বাস্তবায়ন। ১৯৮২ সালে এ দেশে যে ওষুধনীতি করা হয় তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। দেশে ওষুধ প্রস্তুতের কাঁচামাল উৎপাদন বাড়াতে পারলে উৎপাদনব্যয়ও কমবে, ওষুধের দামও মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।
বিজিএমইএর তথ্যে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে দুই হাজার ৮১৫ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। তার আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২,৮০৯ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৪ শতাংশ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য তৈরী পোশাক খাতনির্ভর। রফতানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে ওষুধ শিল্প খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দ্বার। বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি প্রতি বছরই বাড়ছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামীতে এটি রফতানির অন্যতম প্রধান খাত হয়ে উঠবে। এ উদ্দেশ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ওষুধ শিল্পকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনকারী কোম্পানিকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত দেয়া হয়েছে শুল্ক মওকুফের সুবিধা। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্কছাড় পাবেন আমদানিকারকেরা। দেশে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে প্রথম ওষুধ শিল্প পার্ক। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এটি পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করবে। এরই মধ্যে ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে ৪২টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দেশের ওষুধ শিল্প এখন কাঁচামালের জন্য ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর নির্ভরশীল। দেশে কাঁচামাল তৈরি হলে তা বিপুল অর্থ সাশ্রয় করবে। ওষুধের উৎপাদন খরচও হ্রাস পাবে। এর ফলে বিদেশে ওষুধ রফতানির ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। ওষুধের মতো মানসম্মত পণ্য রফতানি বিদেশে দেশের ভাবমর্যাদা বাড়াতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের অন্যান্য পণ্য রফতানিতেও এ ভাবমর্যাদা অবদান রাখবে। ওষুধ শিল্পের পরিসর বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও রাখবে ইতিবাচক প্রভাব। 
লেখক : চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ
Email: chairman@ifadgroup.com


আরো সংবাদ



premium cement