২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নতুন যুগে তুরস্ক

রজব তাইয়েব এরদোগান - ছবি : এএফপি

সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে তুরস্ক। গত রোববারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তুরস্কের শাসনব্যবস্থায় যোগ হয়েছে নতুন একটি মাত্রা। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো নির্বাহী প্রেসিডেন্সি পেতে যাচ্ছে দেশটি। প্রত্যাশামতো প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের হাতেই যাচ্ছে তুরস্কের নির্বাহী ক্ষমতা। তুর্কি জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে এরদোগান নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে যোগ করেছেন আরো একটি সাফল্যের মুকুট। যদিও এত জনসমর্থনের পরও বহির্বিশ্বের কিছু জায়গা থেকে তাকে পেতে হচ্ছে ‘একনায়ক’ তকমা। নির্বাহী ক্ষমতা হাতে পেলে একনায়ক হয়ে উঠতে পারেন বলে দাবি করছেন অনেকে। যদিও তুর্কি সরকার বলছে, কাজের গতিশীলতা আনতে, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে সাহায্য করবে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা। তবে বাস্তবতা যাই হোক, রাষ্ট্রশাসনের নতুন অধ্যায়ে এরদোগানকে যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে তা নিশ্চিত।

জনপ্রিয়তার তিন কারণ

তুরস্কের রাজনীতিতে এরদোগান কতটা জনপ্রিয় তা বুঝতে হলে পেছন ফিরে তাকাতে হবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দিকে। গত দেড় দশকে ১৪টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এরদোগান। প্রতিটিতেই জয় পেয়েছেন। এর মধ্যে ছয়টি পার্লামেন্ট নির্বাচন, তিনটি গণভোট, তিনটি স্থানীয় নির্বাচন ও দু’টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। শুধু তুরস্ক নয়, বর্তমান বিশ্বরাজনীতিতেই সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের একজন এরদোগান। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যেও তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়। এবারের নির্বাচনের ফলাফলেও পাওয়া যাচ্ছে সেই একই চিত্র। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় ৫৩ শতাংশ, অর্থাৎ সারাদেশে যে ভোট পড়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই নির্বাচনে এরদোগান ছাড়াও আরো ছয়জন প্রার্থী লড়েছেন। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বেন এরদোগান; কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। এরদোগানকে কোনো চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেননি অন্য প্রার্থীরা। ফলাফল বিশ্লষণ করে দেখা যায়, অন্য পাঁচজন প্রার্থীর সবাই মিলে যে ভোট পেয়েছেন, তার চেয়ে প্রায় ২৬ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। সংবিধান অনুযায়ী তিনি অর্ধেকের বেশি ভোট পাওয়ায় প্রথম দফা নির্বাচন শেষেই তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

এই জনপ্রিয়তা এক দিনে হয়নি। এর পেছনে রয়েছে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ। একসময়ের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা তুরস্ককে তিনি পাল্টে দিয়েছেন নিজ হাতে। ৮২ শতাংশ মুসলিমের দেশ তুরস্কে এরদোগান-পূর্ব যুগে সবচেয়ে বেশি বাধা ছিল ইসলাম ধর্ম পালনে। কামাল আতাতুর্ক দেশটিতে সেকুলারিজমের নামে ইসলামচর্চার ওপর চরম আঘাত হেনেছিলেন, তা চলে এসেছে বছরের পর বছর। কিন্তু এরদোগান সব সম্প্রদায়ের মানুষকে দিয়েছেন ধর্মপালনের অবাধ স্বাধীনতা। পাশাপাশি মুসলিম কৃষ্টি-সংস্কৃতি সংরক্ষণে নিয়েছেন কার্যকরী উদ্যোগ। তবে এসব বিষয়ে কোনো তাড়াহুড়া করেননি তিনি। তাল মিলিয়ে চলেছেন ইউরোপীয় সমাজব্যবস্থার সাথেও। আবার দেশের সেকুলার জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত নাগরিকদের ওপরও চাপিয়ে দেননি কোনো ধর্মীয় বিধান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তুরস্ক সফরকালে বারাক ওবামা বলেছিলেন, ‘একজন নেতা কিভাবে একই সাথে ইসলামিক, গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু হতে পারেন, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এরদোগান।’

আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে অর্থনীতি। ১৫ বছরের শাসনামলে তুরস্কের খুঁড়িয়ে চলা অর্থনীতিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সহযোগিতা করেছেন এরদোগান। একসময়ের ঋণে জর্জরিত দেশটির অর্থনীতি এখন পুরোপুরি স্বাবলম্বী। ২০০২ সালে যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৬৫০ কোটি ডলার, ২০১১ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২২০ কোটি ডলারে। তুর্কি নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান অনেক গুণ উন্নতি হয়েছে তার সময়ে। শুধু অর্থনীতিই নয়, প্রতিটি সেক্টরের রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। প্রতিটি প্রদেশে কমপক্ষে একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। এয়ারপোর্টের সংখ্যা ২৬ থেকে নিয়ে গেছেন ৫০টিতে। শুধু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছেই তুরস্কের ঋণ ছিল দুই হাজার ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ক্রমান্বয়ে সব ঋণ শোধ করে ২০১২ সালে এরদোগান ঘোষণা দেন- ‘এবার আইএমএফ চাইলে তুরস্কের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারে’।

আরেকটি বড় পরিতর্ন তুরস্ক দেখেছে এরদোগানের নেতৃত্বে। তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অকল্পনীয় উত্থান। রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই। একসময় পশ্চিমা বিশ্বের মুখাপেক্ষী দেশ ছিল তুরস্ক; কিন্তু স্বাধীনচেতা এরদোগান এই জায়গা থেকে বের করে এনেছেন দেশকে। কারো মুখাপেক্ষী নয়, বরং সবার সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের নীতিতে চলছেন তিনি। ইউরোপের নাকের ডগায় থেকেও যে তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায়, তা এরদোগানের কাছেই প্রথম জেনেছে তুর্কিরা। দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাওয়া মার্কিন ও ইউরোপীয় নীতির সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে সম্পর্ক জোরদার করেছেন রাশিয়ার সাথে। সামরিক শক্তি ও প্রভাব বাড়ছে তুরস্কের। মুসলিম বিশ্বের যেকোনো ইস্যুতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছেন। কাতার সঙ্কট, জেরুসালেম ও ফিলিস্তিন ইস্যু, রোহিঙ্গা নির্যাতন- সব বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠছেন এরদোগান। এসব কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুরস্কের প্রভাব বেড়েছে বহু গুণ, যা এরদোগানের এই বিপুল জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ।

নির্বাহী প্রেসিডেন্সি

২০১৭ সালে তুরস্কের সংবিধান পাল্টে শাসনব্যবস্থায় কিছু সংস্কার আনা হয়। এই সংস্কারের মূল দিক ছিল নির্বাহী প্রেসিডেন্সি বা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা। যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টরা একক স্বাক্ষরে যে ধরনের আইন পাস করার ক্ষমতা রাখেন, বিষয়টি তেমনই। এর ফলে তুরস্কের নতুন প্রেসিডেন্ট ভোগ করবেন অনেক একক ক্ষমতা। বিলুপ্ত হবে প্রধানমন্ত্রীর পদ। প্রেসিডেন্ট একাই রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রয়োজনে এক বা একাধিক ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করতে পারবেন তিনি। এ ছাড়া মন্ত্রী, বিচারক ও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা পাবেন। দেশের আইনি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতাও থাকবে। নির্বাহী ক্ষমতার কারণে একক সিদ্ধান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন প্রেসিডেন্ট। আবার একক সিদ্ধান্তে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ক্ষমতাও থাকবে প্রেসিডেন্টের হাতে।

নির্বাহী প্রেসিডেন্সির সরকারপদ্ধতিতে যাওয়ার বিষয়টিতে তুরস্ক তার দেশের জনগণের মতামত নিয়েছে। গত বছরের গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এর পক্ষে রায় দিয়েছে। ফলে সংবিধান সংশোধন অনুমোদন হয়েছে। নির্বাহী ক্ষমতার বিষয়ে ক্ষমতাসীন এ কে পার্টির যুক্তি ছিলÑ প্রধানত রাষ্ট্রীয় জরুরি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা এড়ানো। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা থাকলে। আর বিষয়টি যে জনগণের সমর্থন নিয়েই হয়েছে তার প্রমাণ তো গণভোটেই পাওয়া গেছে।

পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা

এরদোগানের বিজয়কে যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না পশ্চিমা দেশগুলো। বিশ্বপরিমণ্ডলে এরদোগানের উত্থান ও তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদে শাসন করার বিষয়টি যে পছন্দ নয় তার খোলামেলা প্রকাশ ঘটেছে। যদিও তুরস্কের উত্থানে পশ্চিমা বিশ্বের নেতিবাচক মনোভাবের পেছনে ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। এরদোগান রাষ্ট্র পরিচালনায় ও বিদেশনীতিতে যে মুসলিম জাতীয়তাবাদী চেতনায় উসমানীয় শাসনের ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না ইউরোপ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে একটি অনুগত সেকুলার রাষ্ট্র হিসেবে তারা দেখে আসছে। এরদোগান তুরস্কের এই ধারা বদলে ফেলেছেন। স্বভাবতই পশ্চিমা বিশ্বের কাছে তা ভালো লাগার মতো বিষয় নয়। অনেক দিন ধরেই পশ্চিমাদের সাথে তুরস্কের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। দীর্ঘ দিনের মিত্র পশ্চিমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। গত বছরের গণভোটে প্রবাসীদের মধ্যে এরদোগানের পক্ষে প্রচারণার সময় ব্যাপক বাধার সৃষ্টি করেছে জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ।

এবারের বিজয়ের পরও এরদোগানকে অভিনন্দন জানায়নি বড় পশ্চিমা দেশগুলো। ন্যূনতম সৌজন্যতার বিষয়টিও রক্ষা করেনি তারা। যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের মুখপাত্র স্টিফেন সেইবার্ট বলেছেন, যথোপযুক্ত সময়ে চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে অভিনন্দন জানাবেন। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র ব্রিটেনও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারাও সরাসরি অভিনন্দন জানায়নি এরদোগানকে। লুক্সেমবার্গ সফরে থাকা ইউরোপ ও আমেরিকা-বিষয়ক ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্যার অ্যালান ডানকান বলেছেন, তুরস্কের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী ব্রিটেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো অভিনন্দন জানিয়েছে এরদোগানকে। ন্যাটো-প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ এরদোগানকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার যে ভিত্তির ওপর ন্যাটো গঠিত হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তার এই অভিনন্দনবার্তার মধ্যেও ছিল ভিন্ন সুর। প্রসঙ্গত ন্যাটো জোটের অন্যতম সদস্য তুরস্ক। জোটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এ ছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সুইডেন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুরস্কের কুর্দি নেতার কারাবরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে সার্বিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
অপর দিকে এরদোগানকে অভিনন্দন জানিয়ে টেলিফোন করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদারের আশা প্রকাশ করেছে চীন, ইরান, কাতারসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো।

চ্যালেঞ্জসমূহ

সাফল্যের জোয়ারে ভেসে এরদোগান নির্বাহী প্রেসিডেন্সির যুগে প্রবেশ করলেও তাকে এই নতুন অধ্যায়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে তা অনুমান করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। প্রধান বিরোধী প্রার্থী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির পার্লামেন্টারি দলের নেতা মুহারেম ইনজ। তিনি ভোট পেয়েছেন ৩০ শতাংশের কিছু বেশি। সংখ্যার হিসাবে তার ভোট এক কোটি ৫৩ লাখের কিছু বেশি। এরদোগানের চেয়ে অর্ধেকের কিছু বেশি ভোট পেলেও আগের প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে তিনি কিছুটা হলেও সমর্থন জোরালো করেছেন নিজের পক্ষে। তার ওপর এরদোগানের দল একে পার্টি পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে করে জোট সরকার গঠন করে এ কে পার্টিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুর্কি লিরার মান এক বছর ধরে পড়তির দিকে। এ জন্য দেশে-বিদেশে সমালোচনা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এরদোগান ভিশন-২০২৩ এর রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি বিশ্বের সেরা ১০টি আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ দেশের মধ্যে স্থান করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নও হবে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর কয়েক হাজার সরকারি অফিসার, শিক্ষাবিদসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের জেলে বন্দী রাখা ও দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয় নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চাপের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশ শাসন করতে হবে এরদোগানকে।

যেভাবে আজকের এরদোগান

ইস্তাম্বুলের কাশিমপাশায় ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহন করেন এরদোগান। বাবা ছিলেন তুর্কি কোস্ট গার্ডের ক্যাপ্টেন। পরিবারে সচ্ছলতা থাকলেও তরুণ এরদোগান নিজের খরচ চালানোর জন্য লেবুর শরবত ও তিলের রুটি বিক্রি করেন। মারমারা ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসনে পড়ার সময় ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। যোগ দেন কমিউনিজম বিরোধী ন্যাশনাল টার্কিস স্টুডেন্ট ইউনিয়নে। ফুটবলও খেলতেন স্থানীয় একটি নামকরা ক্লাবে। ছাত্রজীবন শেষে যোগ দেন নাজিমউদ্দিন আরবাকানের ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টির যুব সংগঠনে। ১৯৮০ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দলটি বিলুপ্ত করা হলে আরবাকানের নতুন দল ওয়েলফেয়ার পার্টিতে যোগ দেন। এ দল থেকেই ১৯৯৪ সালে নির্বাচিত হন ইস্তাম্বুলের মেয়র। বিশৃঙ্খল আর অনুন্নত ইস্তাম্বুলকে আমূল পাল্টে দেন তিনি। কয়েক বছরের মধ্যে ইউরোপের বড় শহরগুলোর সাথে পাল্লা দিতে শুরু করে ইস্তাম্বুল। বাড়তে থাকে এরদোগানের জনপ্রিয়তা। যা তাকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে দেশের সর্বোচ্চ পদে।

১৯৯৮ সালে তৎকালীন সেক্যুলার সরকার ওয়েলফেয়ার পার্টি নিষিদ্ধ করলে হাজারো নাগরিকের সাথে বিক্ষোভে অংশ নেন এরদোগান। বিক্ষোভে একটি কবিতা আবৃত্তির কারণে তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় সরকার। কবিতাটি ছিল, ‘মসজিদ আমাদের ক্যান্টনমেন্ট, গম্বুজ আমাদের হেলমেট, মিনার আমাদের বেয়নেট আর বিশ্বাসীরা আমাদের সৈনিক।’ কয়েক মাস জেল খাটতে হয় তাকে, সেই সাথে পরতে হয় রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে। কেড়ে নেয়া হয় মেয়র পদও। ২০০১ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টি। ২০০২ সালে প্রথম পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েই জয়লাভ করে দলটি। মূলত এরদোগানের সুনাম আর জাদুকরী নেতৃত্বই ছিল দলটির প্রধান পুঁজি। রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে এমপি ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি তিনি। ২০০৩ সালে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলে এক উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে পার্লামেন্টে আসেন এবং প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০০৭ ও ২০১১ সালের নির্বাচনেও জয় লাভ করে তার দল। তুরস্কের ইতিহাসে প্রথম নেতা হিসেবে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে শপথ নেন তুরস্কের ১২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলেন প্রেসিডেন্ট।


আরো সংবাদ



premium cement