২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজনীতিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা

রাজনীতিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা - ছবি : সংগ্রহ

শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি নয়, বরং রাজনীতিতে শিক্ষা চাই! শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের সরিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। দেশে জ্ঞানী-গুণীর অভাব নেই। তাদের পরামর্শ নিতে হবে। এমন অনেককে নিয়ে একটা কমিটি করা যেতে পারে এজন্য। এই শিক্ষাব্যবস্থারই যদি বেহালদশা হয় তবে রাজনীতি দুর্বল হবে; আর দেশ শুধু অশিক্ষিত নেতার হাতে ধাক্কা খাবে। শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের পাশাপাশি রাজনীতিতেও শিক্ষাকে গুরুত্ব প্রদান করা উচিত। দেশের সব ক্ষেত্রে যোগ্যতার বিচার শিক্ষা দিয়ে করা হলে রাজনীতিতে কেন শিক্ষাগত যোগ্যতাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে? এ দিকে, দেশজুড়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন হতে পারে জনগণের মতামতের স্বচ্ছ আয়না। গণতন্ত্রের বাহনের কাজ করতে পারে এমন নির্বাচন কমিশন। সর্বশেষ, রংপুরের মেয়র নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পেরেছে। চূড়ান্ত নির্বাচনে জনগণের আশার প্রতিফলন হয় কি না দেখা যাক। ফলাফল যাই হোক না কেন, মানুষ চায় ভোট দিতে; শিক্ষিত বা সৎ মানুষকে নির্বাচিত করতে। সাধারণ মানুষ প্রার্থীর যোগ্যতাকে বিচার করতে শিখে গেছে। এটি খুব ভালো লক্ষণ। গ্রাম থেকে গঞ্জে আর দূর থেকে দূরান্তে আজ ডিজিটালের ছোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে। দেশের অনেক সেক্টরেও উন্নতি হচ্ছে। সব কিছুর পাশাপাশি আমরা রাজনীতির ক্ষেত্রেও উন্নতি দেখতে চাই। প্রার্থী মনোনয়নেও এমন অগ্রণী পদক্ষেপ দেখতে চাই। শিক্ষিত ও সৎ লোকেরা নির্বাচিত হলে দেশের দৃশ্য দ্রুত বদলে যেতে বাধ্য।

আমরা ডিজিটাল দেশ চাই, তবে ডিজিটালের নামে সন্ত্রাসী লালন পালনকারী নেতা, লুটপাটকারী কিংবা ইয়াবার কারবারি নেতা চাই না। নেতা হতে হবে ‘মাটির মানুষ’, সৎ ও শিক্ষিত। আমাদের প্রতিনিধিকে দেখতে চাই শিক্ষিত আর আন্তরিক। প্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। বেশির ভাগ অশিক্ষিত মানুষ প্রকৃত ভালো-মন্দই বুঝতে পারে না, তারা দেশের অন্ধকার কিভাবে দূর করবে? তাই রাজনীতিতে শিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দেয়া দরকার। সৎ লোককে গুরুত্ব দেয়া দরকার।

গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে যে কেউ নেতৃত্বে আসতে পারে কিন্তু অশিক্ষিত আর চরিত্রহীন কেউ যদি টাকা আর পেশীর জোরে নেতৃত্বে এসে যায় তার ফলাফল ভালো হয় না। আমরা দেখেছি অনেকেই ক্ষমতায় বসে বা প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের ধনসম্পদ মোটাতাজা করার দিকেই বেশি ছুটেছেন। দুর্নীতি আর লুটপাট করতে ব্যস্ত যারা, তারা ভেবে দেখে না যে- তারা একেকজন বড় মাপের চোর বৈ আর কিছু নয়। রাজনীতি নাকি এখন একটা সফল ব্যবসাক্ষেত্র। বর্তমানে রাজনীতির এমন অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে শিক্ষিত ও ভদ্র লোকের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে না পারা। তাই এমন লোকেরা রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান সেদিকে নজর দেয়া উচিত। কিছু অসৎ নেতা রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেন অস্ত্র ও পেশীর জোরে। এদের কারণে অনেক মানুষ রাজনীতিকে অন্য চোখে দেখেন। বেশির ভাগ অভিভাবক তাদের সন্তানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চান। তারা মনে করেন, রাজনীতি মানে দলাদলি, মারামারি, খুনখারাবি, সন্ত্রাস সহিংসতা আর জেল-জরিমানা।

কিন্তু নিজের অধিকার নিয়ে সচেতন থাকাটাও রাজনীতির মধ্যে পড়ে। আমাদের সোনালি ইতিহাসের রাজনীতির প্রতি এমন মনোভাব তৈরি হওয়ার কারণ কী, তা নিয়ে ভাবা দরকার। রাজনীতিকেরা ক্ষমতার জন্য একে অপরের হাতে প্রাণ দিচ্ছেন বা দলাদলিতে হেনস্তা হচ্ছেন। একজনের বুলেট আরেকজনের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। প্রভাব দেখানোর জন্য কুপিয়ে, জ্বালিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এর অবসানে সুশিক্ষার বিকল্প নেই। প্রকৃত শিক্ষিতদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই, তাদের বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতা শিক্ষিত। আর যাদের বেশি শিক্ষা নেই তারা জনপ্রিয়তা বা আন্তরিকতা নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

তাদের মাঝে আমাদের মতো হিংসাত্মক মনোভাব নেই। নেই মামলাবাজি, বোমাবাজি আর জ্বালাও-পোড়াও তো নেই বললেই চলে। আর যা হোক, দেশের স্বার্থে সবাই অনড় থাকেন। যারা দেশ পরিচালনার আসনে আছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ গাঁজাখুরি কথা বলে আলোচনার ঝড় তোলেন। তদন্ত করলে দেখা যাবে, সব নেতার শিক্ষার সার্টিফিকেট নেই। অথবা প্রকৃত শিক্ষার জ্ঞান নেই। প্রধানমন্ত্রী একজন শিক্ষিত মানুষ। এ ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের দেশে যারা অসৎ রাজনীতি নিয়ে মেতে থাকেন, শিক্ষিত ও ভদ্র লোকেরা তাদের ভয় করে চলে। শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় তাহলে রাজনীতিতে কেন এই শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না? এটা তৃণমূলপর্যায় থেকে শুরু করা যেতে পারে। যেমন, ইউনিয়ন মেম্বারের প্রতিনিধিত্বের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক এবং চেয়ারম্যানের জন্য স্নাতক বা সমমানকে যোগ্যতা করা যেতে পারে। তেমনি সংসদ সদস্যদের জন্য মাস্টার্স বা সমমান বিবেচনা করা যেতে পারে।

আর যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই তাদের মনোনীত করার আগে জরিপ চালিয়ে দেখতে হবে, জনসমর্থন আছে কি না বা ওই নেতা সৎ কি না। এটা আমরা উন্নত দেশগুলোতে দেখে থাকি। একজন শিক্ষিত লোক যতই অন্যায় করুন একসময়ে তার বিবেক জেগে ওঠার সম্ভাবনা থাকে; একসময় অনুশোচনা জাগতে পারে। অপর দিকে, অশিক্ষিত নেতারা বিচার-বুদ্ধির অভাবে নানা অঘটনের জন্ম দিচ্ছে। অথচ দলের হাইকমান্ড থেকে কেউ স্বীকার করেন না যে, নিজ দলে খারাপ লোক থাকতে পারে। সব দোষ প্রতিপক্ষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। বলতে চাচ্ছি, শিক্ষাই যদি না থাকে বিবেক কিভাবে জেগে উঠবে? আর বিবেকই যদি না জাগে দেশ ও জাতির উন্নতিতে ভূমিকা রাখবেন কিভাবে? এখনই সময় পরিবর্তনের। আমাদের দেশপ্রেম দিন দিন শুধু নি¤œমুখী হচ্ছে। দেশের বড় অঘটনগুলোর পেছনের কারণ খুঁজলে দেখা যাবে- অশিক্ষিত ও মন্দ লোকের রাজনৈতিক উত্থান এর জন্য দায়ী। এসব কিছুর মূলে হচ্ছে যথার্থ শিক্ষিত নেতার অভাব। সবকিছুতে যখন শিক্ষার মূল্যায়ন করা হচ্ছে, রাজনীতিতেও শিক্ষার গুরুত্ব দেয়া হোক।

Arefin.feni99@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে, নিহত ৪৫, বাঁচল একটি শিশু ইসরাইলের রাফা অভিযান পরিকল্পনা স্থগিত

সকল