১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাবুলে তালেবান এরপর...

কাবুলে তালেবান এরপর... - ছবি : সংগৃহীত

অস্ত্র ছাড়াই কাবুলে প্রবেশ করেছে তালেবান। মাত্র কয়েক দিন আগে যা প্রায় অসম্ভব মনে হয়েছিল, ঈদুল ফিতরের যুদ্ধবিরতিতে তা-ই সম্ভব হয়েছে। কেবল কাবুলে প্রবেশই করেনি, তারা সরকারি বাহিনীর সদস্যদের সাথে কোলাকুলি পর্যন্ত করেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করাও হয়েছে।
আফগান যুদ্ধের যে অবসান হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে সব পক্ষই একমত। যে যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, তারা পর্যন্ত এখন যুদ্ধটির অবসান চাচ্ছে। চীন, পাকিস্তান, ভারত সবাই চাচ্ছে যুদ্ধটি বন্ধ হোক। অবশ্য প্রত্যেকেরই লক্ষ্য আলাদা।

যুদ্ধটি অবসান না হলে বিপুল ব্যয়ভার বহনের পাশাপাশি মুখরক্ষারও উপায় থাকে না যুক্তরাষ্ট্রের। আর কত দিন? এমন প্রশ্ন তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। অবশ্য আফগানিস্তান নিয়ে তাদের বড় ধরনের পরিকল্পনা আছে। আফগানিস্তানে তাদের উপস্থিতি প্রয়োজন অবশ্য অন্য কারণে। আশপাশের এলাকায় নজরদারি চালাতে আফগানিস্তান তাদের প্রয়োজন। কিন্তু অশান্তি চলতে থাকলে খুব বেশি দিন তাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সম্ভব হবে না।

আবার চীন চাচ্ছে যুদ্ধ বন্ধ হলে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে। আফগানিস্তানকে তাদের খুবই প্রয়োজন। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হলে তা করা সম্ভব হবে না। পাকিস্তানও মনে করে, আফগানিস্তান স্থিতিশীল না হলে পাকিস্তান স্থিতিশীল হবে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈশি^ক যুদ্ধে একমাত্র পাকিস্তানি ভয়াবহ মাত্রায় প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। ভারতের যে ইরানের চাহাবার বন্দর নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে, সেটা ফলপ্রসূ করতে হলে শান্ত আফগানিস্তান প্রয়োজন। সব পক্ষ একমত হওয়াতে আফগানিস্তানে শান্তির সম্ভাবনা বেড়ে গেছে।

এমন প্রেক্ষাপটেই যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করা হয় এবং তা বাস্তবায়নও করা হয়। ঈদের দিন তালেবান সদস্যদের দেখা যায় অস্ত্র ছাড়াই কাবুলে ঢুকতে, সরকারি বাহিনীর সদস্যদের সাথে কোলাকুলি করতে। তারা একসাথে ঈদের নামাজ পড়ে, অনেকে সাধারণ লোকের সাথে সেলফি তোলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আফগান সেনারা তালেবানের যোদ্ধাদের সাথে কোলাকুলি করছে এই দৃশ্য দেখে তারা নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেন, এ দৃশ্য প্রমাণ করে যে আমরা সবাই শান্তির পক্ষে।
আফগানিস্তানের অন্যান্য শহর থেকেও সৈন্যরা তালেবানের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছে, এমন ছবি এবং ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে।

আফগান প্রেসিডেন্ট অবশ্য চেয়েছিলেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে। কিন্তু তালেবান রাজি হয়নি। তালেবান আফগান সরকারকে স্বীকার করে না। তাদের মতে, এই সরকার মার্কিন তাবেদার। আলোচনা করতে হলে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই করতে হবে।
ওই আলোচনার সম্ভাবনাই এখন প্রবল হচ্ছে। আর তাতে কেবল আফগান সরকার বা তালেবানই জড়িত নয়, আরো অনেকেই সক্রিয় রয়েছে।

এর মধ্যে আরেকটি ঘটনা ঘটে গেছে। তা হলো কুখ্যাত সন্ত্রাসীপ্রধান মোল্লা ফজলুল্লাহ মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো তার হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ড্রোন হামলায় হাকিমুল্লাহ মেহসুদ নিহত হওয়ার পর নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-পাকিস্তানের (টিটিপি) প্রধান হয়েছিলেন মোল্লাহ ফজলুল্লাহ। তিনি বেশ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।

গত ১৩ জুন দানগাম জেলার নূর গুল কেলে গ্রামে ওই ড্রোন হামলাটি হয়। এতে অপর চার টিটিপি কমান্ডারও নিহত হন। তারা হলেন- আবু বকর, উমর, ইমরান ও সাজিদ। তারা তখন ইফতারে বসেছিলেন। ওই সময়ই মার্কিন ড্রোন তাদের ওপর হামলা চালায়। মোল্লা ফজলুল্লাহই মালালা ইউসুফজাই, পেশোয়ারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী স্কুল ও অন্যান্য সামরিক স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সোয়াত ও ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করলে তিনি আফগানিস্তানে পালিয়ে যান। অবশ্য ফজলুল্লাহর নিহত হওয়ার পর দিন টিটিপি সন্ত্রাসীরা নর্থ ওয়াজিরিস্তানের শিওয়ালে পাকিস্তানি চেক পোস্টে হামলা চালায়।

এই ঘটনা আরেকটি বিষয় প্রমাণ করে। তা হলো পাকিস্তান বলে আসছিল, আফগানিস্তান থেকে তাদের দেশে সন্ত্রাসী হামলা হয়ে থাকে। ফজলুল্লাহর আফগানিস্তানে নিহত হওয়ায় পাকিস্তানের দাবি প্রমাণিত হলো।
তবে এখানেই শেষ নয়, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে ব্লেম গেমের অবসান ঘটিয়ে শান্তির পথে আসতে হবে। সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক না কেন, তাদের নির্মূল করতে হবে।
এই ইস্যুতে এখন পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। এই তিন পক্ষের মধ্যে আলাদা আলাদা বৈঠকও হচ্ছে।

গত ২ জুন কাবুলে পাকিস্তান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ও আফগান প্রেসিডেন্ট গনি ‘অ্যাকশন প্লান ফর পিস’ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেন। আইএসপিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল গফরের মতে, আফগান রাজনৈতিক এলিট ও পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের মধ্যকার বৈঠকে আফগানিস্তানের প্রতি পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এর মাত্র কয়েক দিন আগে আফগান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মোহাম্মদ হানিফ আতমারের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের আফগান নিরাপত্তা প্রতিনিধিদল ইসলামাবাদে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন। তারা বাণিজ্য, জনগণপর্যায়ে যোগাযোগ, গোয়েন্দা সহযোগিতা এবং একে অপরের মধ্যকার ‘ব্লেম গেম’ অবসানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

আর ৭ জুন জেনারেল কামার বাজওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইয়ের ফোন পান। তারা সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা করেন, আফগানিস্তানে রাজনৈতিক সমন্বয় সাধন নিয়ে কথা বলেন। এসব পর্যায়ে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর ব্যাপারে জেনারেল বাজওয়া তার উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।

যুক্তরাষ্ট্র অবগত রয়েছে যে ২০১৫ সালে কাবুল ও তালেবানের মধ্যে প্রথম যে সরাসরি আলোচনা হয়েছিল, তার আয়োজন করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের মৃত্যুর কথা কাবুল ঘোষণা করলে তা অব্যাহত থাকেনি।
যাই হোক, এখন সময় সম্ভবত যুদ্ধ বন্ধের অনুকূলে। সুযোগটি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো কতটা কাজে লাগাতে পারে, তাই এখন দেখার বিষয়।


আরো সংবাদ



premium cement
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা চরফ্যাশনে স্কুল শিক্ষিকাকে কোপানো মামলার আসামি গ্রেফতার ফরিদপুরে মাইক্রোবাস-মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ ভেটো ছাড়াই ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘ সদস্যপদ ঠেকানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র সখীপুরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা ভারী বৃষ্টিতে দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা, দুর্বিসহ অবস্থা বেসিক ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ভরিতে ২০৬৫ টাকা বেড়ে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড ইরানি জবাব নিয়ে ভুল হিসাব করেছিল ইসরাইল! কূটনীতিতে বাইডেনবিরোধী হতে চান ট্রাম্প পেনাল্টিতে সাফল্য রিয়ালের জয়ের মানসিকতার প্রমাণ

সকল