১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শান্তিচুক্তির পরও কেন পাহাড় রক্তাক্ত?

শান্তিচুক্তির পরও কেন পাহাড় রক্তাক্ত? - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘রাঙ্গামাটিতে আধিপত্যের জেরে তিন ইউপিডিএফ কর্মী নিহত’, ‘এবার ইউপিডিএফের তিন কর্মীকে গুলি করে হত্যা’, ‘আবার রক্তাক্ত পাহাড়, গত ছয় মাসে নিহত ২১’, ‘মে মাসেই ১০ খুন’। বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম থেকে সংগৃহীত খবরে এই হলো আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের চিত্র।
মহান গৌতম বুদ্ধের অমর বাণী ছিল- ‘জীব হত্যা মহাপাপ, অহিংসা পরম ধর্ম।’ আমাদের পার্বত্যবাসী উপজাতি ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বেশির ভাগই বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, পাংখু, লুসাই, বম, মুরং, চাক, নেপালী, রাখাইন, গুর্খা, অহমিয়া প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বসবাস। তারা খুবই সহজ-সরল এবং নিজ নিজ ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারীও বটে।

বর্তমানে খুনখারাবি, বন্দুকযুদ্ধ, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ, গুম, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, এবং ফল বাগানে বিষ প্রদান, কচি কচি সেগুন চারা, আম, কাঁঠাল, বটবৃক্ষ, রাবার বাগান ও চা বাগান ধ্বংস করার জন্য অহরহ যারা সশস্ত্র নাশকতামূলক তৎপরতা চালাচ্ছে; তারাও বৌদ্ধধর্মেরই অনুসারী। সে পরিচয়ে এরা ছদ্মবেশে অনেক বৌদ্ধমন্দিরে ও ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারের ছাত্রাবাসে বিনা ব্যয়ে থাকা-খাওয়ার সুযোগও পেয়ে আসছে। এরাই যখন নিরাপত্তা বাহিনীর অ্যামবুশে পড়ে তখন তারা মহামতি বুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশে-বিদেশে তারা অপপ্রচার চালিয়ে বলে বেড়ায়- বাঙালিরা তাদের বৌদ্ধমূর্তি ভেঙে দিচ্ছে, কিয়াং ঘরে আগুন দিচ্ছে। ওরা লুটপাট কথাটিও যথেচ্ছ ব্যবহার করে থাকে; অথচ এই পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা কি আদৌ সহিংস বৌদ্ধধর্মের অনুসারী? কারণ এরা তো জীব হত্যাকে ডালভাত মনে করে থাকে। হিংসাই তাদের সবচেয়ে বড় ধর্ম। এত দিন বাঙালি হত্যা ও বাঙালিদের প্রতি হিংসা করেই তারা সন্তুষ্ট ছিল, কিন্তু এখন স্বজাতির ওপরও তাদের শাণিত কৃপাণ ও আগ্নেয়াস্ত্র পরিকল্পিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেকোনো দল বা সংগঠন করুক না কেন, এদের প্রকৃত পরিচয় এরা ঘাতক, চাঁদাবাজ, রাষ্ট্রদ্রোহী এবং বৌদ্ধজাতির কলঙ্ক।

বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র আয়তনের অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। স্বাধীনতার পর থেকেই পাহাড়ে তথাকথিত শান্তিবাহিনী পৃথকভাবে ‘স্বাধীন জুম্মল্যান্ড’ ঘোষণা করে তিন পার্বত্য জেলায় গণহত্যা শুরু করেছিল। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে পাহাড়ের সরলপ্রাণ যুবসমাজকে ‘বাঙালি হত্যার’ দীক্ষা দিয়ে গঠন করা হয়েছিল শান্তিবাহিনী বা জুম্ম লিবারেশন আর্মি। পাহাড়ের উপজাতিদের বানানো হয়েছিল ‘জুম্মজাতি’ (বাঙালি বা বাংলাদেশী নয়)। তখনো আদিবাসী বলে পাহাড়ে কোনো নব্য সম্প্রদায়ের উত্থান ঘটেনি। কথিত জুম্মজাতির মুখপাত্র ছিল জুম্মকণ্ঠ, জুম্ম নিউজ বুলেটিন, রাডার, স্যাটেলাইট ইত্যাদি। স্বপ্নের ‘জুমল্যান্ড’ পেতে এম এন লারমা ও সন্তু লারমারা এ পর্যন্ত পাহাড়ে ৩০ হাজার বাঙালিকে বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর মতো নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছেন। সেই গেরিলা ট্রেনিং আজ ব্যবহৃত হচ্ছে উপজাতিদেরই স্বজনদের বিরুদ্ধে। মানুষ হত্যার যে মহান (?) প্রশিক্ষণ তারা পেয়েছিলেন, শান্তিচুক্তি করেও তা আজো ভুলতে পারছেন না। জিঘাংসা ও মানবহত্যার প্রেতাত্মারা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে উপজাতি বহু যুবককে। সেই দুঃসাহসিক মানবহত্যার ধারাবাহিকতার বলি হচ্ছেন শক্তিমান চাকমা, তপন জ্যোতি চাকমা (বর্মা), স্মৃতি চাকমা, অটল চাকমা, সজীব চাকমাসহ সম্ভাবনাময় অনেক উপজাতি তরুণ ও যুবক; যারা পাহাড়ে আগামী দিনের জাতি গঠনে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারতেন। ৩০ হাজার বাঙালি হত্যার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন হবে জনসংহতি সমিতি, ইউপিডিএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল ওমেন ফেডারেশনসহ সন্তু বাবুদের নতুন প্রজন্মের জন্য।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দেশের এক-দশমাংশ অঞ্চল রক্ষার এবং দুই যুগের হিংসা ও হানাহানি বন্ধের জন্য ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি। এর ৯০ শতাংশই বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং পাহাড়ে গঠিত হয়েছে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ, যার চেয়ারম্যান হলেন বাবু সন্তু লারমা এবং সদস্য তারই পছন্দনীয় জনসংহতি সমিতি জেএসএস নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া, তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হয়েছে, যার চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা বেশির ভাগই চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর।
বলা যায়, পাহাড়ে তাদের ইশারা ছাড়া প্রশাসন চলতে পারে না। তাদের কথায় উঠেন-বসেন ডিসি, এসপি, জেলা প্রশাসনসহ সবাই। এমনকি পাহাড়ে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্ষমতা কার্যত অনেক হ্রাস পেয়েছে। এরপরও সন্তু বাবুরা আর কী ক্ষমতা চান, জাতিকে খুলে বলুন। কেন এত রক্তপাত, কেন এত বন্দুকযুদ্ধ- জাতি জানতে চায়।
আজ পাহাড়ে বাঙালি হত্যা বন্ধ হলেও উপজাতি হত্যা বন্ধ হচ্ছে না কেন? সাধারণ মানুষ মনে করে, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আজ অন্ধ হয়ে গেছেন উপজাতি নেতৃবৃন্দের বিরাট অংশ। ‘সন্ত্রাস কোনো দিন মুক্তি আনতে পারে না’ এই নীতিবাক্য অনেকবার পাহাড়ে যুবসমাজকে জানানোর পরও আজ তাদের মধ্যে জিঘাংসা ও সহিংস মনোবৃত্তি কেন? এ জন্য উপজাতি নেতারাই কি দায়ী নন? উপজাতি যুবসমাজকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিতে হবে সরকার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং উপজাতি নেতৃবৃন্দকে। হ
লেখক : মহাসচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন এবং সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাঙ্গামাটি জেলা ইউনিট


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল!

সকল