২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মানবতা ও মুক্ত ফিলিস্তিনের প্রতীক রাজান

-

কোনো যুদ্ধ ক্ষেত্রে স্নাইপাররা এত কাছে থাকে না। স্নাইপারদের লক্ষ্যই থাকে দূর থেকে ‘ওয়ান শট, ওয়ান ডেড’ যুদ্ধ কৌশলে কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিকে হত্যা করা। কিন্তু গাজা ও ইসরাইলি সীমান্তে ৫০ থেকে ২০০ গজের মধ্যে মোতায়েন করে রাখা হয়েছে ইসরাইলি স্নাইপারদের। মাত্র ১০০ গজ দূরে তাদের গুলিতে নিহত ১১৯তম ব্যক্তি হলেন ফিলিস্তিনি নার্স রাজান আল-নাজার।

গত মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে রাজান বলেছিলেন, আহতদের চিকিৎসা ও সেবা করা শুধু পুরুষদের কাজ হতে পারে না। কখনো কখনো ইসরাইলি স্নাইপাররা নারী ও শিশুদের গুলি করে হত্যা করে। তখন কে তাদের সেবা করবে? এটা নারীদেরও কাজ। আমাদের লক্ষ্য একটি মানুষকে রক্ষা করা এবং আহতদের সেবার জন্য দ্রুত নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া। আমাদেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে এখানে এবং তা হচ্ছে বিশ্বকে এ বার্তা পৌঁছে দেয়া অস্ত্র ছাড়াও আমরা সব কিছু করতে পারি। যখন ইসরাইলি স্নাইপারদের গুলি এসে তার বুকে লাগে তখন সে একজন আহত ফিলিস্তিনির সেবা করছিলেন। প্রথম নারী সেবিকা হিসেবে রাজানই ফিলিস্তিনিদের সেবা করতে এগিয়ে যান। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার অনলাইনে রাজানের ২ মিনিট বক্তব্যের ফুটেজ ভাইরাল হয়ে গেছে বিশ্বে।

ওই সাংবাদিককে রাজান বলেন, এই যে তাঁবু দেখছেন, এখানেই আমরা প্রতিদিন আহতদের সেবা দেই। প্রতিদিন আমরা আসি, ইসরাইলি স্নাইপারদের গুলিতে হতাহতদের সেবা দেই। আমরা এটা করি স্বদেশ প্রেম থেকে, মানবতার জন্য। আমরা টাকার জন্য এ সেবা দেই না, আল্লাহর রাহে এ কাজ করি। কোনো পারিশ্রমিকের জন্য এ কাজ করছি না, চাকরিও নয়। মানুষ আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করে, এখানে আমি কি করছি, কোনো বেতন ছাড়া। তিনি তাদের বলেছেন, আমি আমার মেয়ের জন্য গর্ববোধ করি। ও আহত শিশুদের সেবা দিচ্ছে, নারীদের শ্মশ্রƒষা করছে। দেশের জন্য কাজ করছে।

রাজান খুব দৃঢ়তার সাথে বলেন, কাজ করছি বিশেষভাবে আমাদের সমাজের জন্য। প্রায়ই নারীদের প্রতি অবিচার করা হয়। কিন্তু সমাজকে আমাদের মেনে নিতেই হবে। তারা যদি আমাদের স্বীকৃতি না দেয় তাহলে তা তাদের অভিরুচি। কিন্তু নারীদের স্বীকৃতি দিতে তাদের বাধ্য করা হবে। কারণ নারীরা যেকোনো পুরুষের চেয়ে শক্তিশালী। যে শক্তি আমি ইসরাইলি দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রথম দিনের প্রতিবাদে এখানে দেখিয়েছি, তা হচ্ছে আমি কাউকে পরোয়া করি না, সে যদি অত্যাচারী হয়ে থাকে...।

গত ৩০ মার্চ থেকে গাজায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি দখলদারদের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করে আসছেন, তাদের ওপর ¯œাইপারদের গুলিতে আহতদের চিকিৎসা করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ২৩৮ জন প্যারামেডিক আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৫৫ জন সাংবাদিক। একাধিক সাংবাদিক মারা গেছেন। কারণ ইসরাইল চায় না বর্বরতার এ তথ্যচিত্র বিশ্ববাসী জানুক, আর পশ্চিমা মিডিয়া তো বরাবরই এসব ব্যাপারে অন্ধ। অথচ ৩৮টি এআম্বুলেন্সে হামলা করেছে ইসরাইলিরা। এ হিসেব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু’এর। এ পর্যন্ত আহত হয়েছে ১৩ সহস্রাধিক নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি।

ফেসবুকে শেষ পোস্টে রাজান লিখেছিলেন, আমি ফিরে আসছি এবং পশ্চাৎপদ হচ্ছি না। গাজায় খান ইউনিস এলাকার বাড়ি থেকে সে দিন সকালে রাজান বের হয়েছিলেন হাসিমুখে। ২১ বছরের রাজান এখন ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘ক্ষমার প্রতীক’। ৪৩ বছর বয়স্কা তার মা সাবরিন বলেন, সে দাঁড়াল এবং আমার দিকে তাকিয়ে হাসল এরপর চোখের পলকে বের হয়ে গেল প্রতিবাদী মানুষের ভিড়ে। দিনটি ছিল প্রতিবাদের দশম জুম্মাবার। ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়ে দেখলাম রাজান ততক্ষণে দরজার বাইরে বের হয়ে গেছে, গন্তব্যে ছুটছে। যেন পাখির মতো আমার সামনে থেকে সে উড়ে গেল।

সাবরিন বলেন, কে কি বলল, তাতে আমার মেয়ে পাত্তা দিত না। সে তার শক্তিমত্তা ও স্থিরতার সাথে প্রতিবাদি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আহতদের সেবা দিয়ে যেত। আমার মেয়ের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। সে তার জাতিকে উজার করে দিয়েছে। আহত এক ফিলিস্তিনিকে সে যখন চিকিৎসা দিচ্ছিল তখন ইসরাইলি ঘাতকদের বিস্ফোরক বুলেট তার বক্ষ বিদীর্ণ করে। এটা কি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয়- এমন প্রশ্ন তুলে সাবরিন বলেন, তার অ্যাপ্রোনের পকেটে গজ, তুলা এসবই ছিল। অন্য কিছু নয়। ওকে আমি বিয়ের সাদা পোশাকে দেখতে চাইতাম, কাফনে জড়ানো অবস্থায় নয়।

ফিলিস্তিনি পতাকায় জড়িয়ে রাজানের লাশকে সামনে রেখে তার নামাজে জানাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি অংশ নেন। কান্নার রোল, প্রতিবাদী চেতনার মাঝে এক ফিলিস্তিনি বলেন, আমাদের আত্মা আর রক্ত দিয়ে রাজানকে আমরা স্মরণ করি। রাজানের মৃত্যুতে বিশ্ব স্তম্ভিত। আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়েছে, যুদ্ধ ও সঙ্ঘাতের সময় কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের কোনো ক্ষতি করা যাবে না। এ ঘটনা ইসরাইলের জন্য আরো একটি লজ্জা। ইসরাইল রাজানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্তের কথা বললেও জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছে। এর আগে ইসরাইলি নেতারা বলেই দিয়েছে গাজায় যারা রয়েছে তারা সবাই সন্ত্রাসী। তারা ফিলিস্তিনিদের সক্রিয়া সহযোগিতার জন্য হামাস কিংবা হিজবুল্লাহকে অনেক আগেই সন্ত্রাসী বলেছে। সর্বশেষ গাজায় স্কুলে শিশুদের ওপর বোমা বর্ষণ করেছে ইসরাইলি জঙ্গি বিমান।

তবুও ফিলিস্তিনিরা বসে নেই। ফিলিস্তিন ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের প্রতিনিধি নাসের আবু শরিফ বলেছেন, প্রতিরোধ শক্তিগুলো সবাই ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। ইসরাইল চূড়ান্ত পতনের দ্বারপ্রান্তে। জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দেয়ার পর তাদের প্রতিবাদে এপর্যন্ত ১৮৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। রাজানের নামাজে জানাজায় তার বাবা আশরাফ বলেন, কোনো সাধারণ বুলেট নয়, ইসরাইলি স্নাইপারদের বিস্ফোরক বুলেট আমার ফেরেশতার মতো মেয়েটির বক্ষকে বিদীর্ণ করেছে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে বড় এ মেয়েটি প্যারামেডিক হতে চেয়ে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা করছিল। প্রতিদিন আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে সে ইউনিফর্ম রক্তাক্ত করে বাড়ি ফিরত। রাজানের এক সঙ্গী বলেন, আমরা আহতদের কাছে যাই সেবা দিতে। চিকিৎসা সামগ্রী ছাড়া আমাদের কাছে আর কিছুই থাকে না। রাজানের আগে মুসা আবু হাসনাইন নামে আরেক প্যারামেডিককে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি স্নাইপাররা। নাজান গত মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকের কাছে বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য প্যারামেডিক ও সাংবাদিকদের গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হতে দেখি। সাদা অ্যাপ্রোন বা প্রেস চিহ্নিত জ্যাকেট দেখেও ইসরাইলি স্নাইপাররা গুলি চালায়। আমি বিশ্বকে বলি আমাদের দিকে তাকাও, দেখ কেন ইসরাইলিরা আমাদের টার্গেট করছে। আমরা কিছু করিনি। আহতদের সেবা করছি কেবল।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল