২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমিত হবে কেন?

চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমিত হবে কেন? - ছবি : সংগ্রহ

আমাদের দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স নির্ধারিত। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করা যাবে, ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে একজন শিক্ষার্থী যত মেধাবী আর উচ্চশিক্ষিতই হোক না কেন, সরকারি চাকরিতে তার আর আবেদন করারই যোগ্যতা নেই! যুগের পর যুগ ধরে চালু থাকা এ নিয়ম পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে দেশের মানুষ নানাভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। কেউ পাত্তা দিচ্ছে না তাদের যৌক্তিক দাবিকে।

৩০ বছর বয়স হয়ে গেলেই কি একজন মানুষের চাকরি করার সব কর্মশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়? ৫৯ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসরে গিয়েও আমাদের দেশের অনেক সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নতুন করে চাকরি নিতে দেখা যায়। ৫৯ বছর বয়স হয়ে গেলেও, চাকরি না করলেও চলে, এমন অসংখ্য মানুষ যে দেশে নতুন কোনো চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে, সে দেশে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়া একজন উচ্চশিক্ষিত বেকারের, যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছে ভালো একটা চাকরির স্বপ্নে, তার জন্য শুধু ৩০ বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়ার পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে!

সেশান জট, নানারকম অবাঞ্চিত ছুটি, হরতাল, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনির্দিষ্টকালের জন্য ভার্সিটি বন্ধ, যেকোনো অজুহাতে পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন যে দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, সে দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমিত করার মানে যে মেধাবী বা উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের চাকরি করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, কথাটি বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

“...অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষার্থীরা জানেই না ‘সেশন জট’ কাকে বলে, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা’ বলতে কী বোঝায় বা কিভাবে করতে হয় ‘পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন’।” কথাগুলো অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রদীপ দেব নামে এক বাংলাদেশীর লেখা ‘ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন’ নামক একটি বই থেকে মীরা প্রকাশন, পৃ-৮৪ নেয়া। অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোনো উন্নত দেশ, যেখানে ২৫-২৬ বছর বয়সে অনেকে শুধু মাস্টার্স নয়, পিএইচডিও সম্পন্ন করে ফেলে, সেসব দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০-এর মধ্যে সীমিত করলে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা কাক্সিক্ষত চাকরিতে প্রবেশে তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে অনেকের ¯œাতকোত্তর শেষ হতে না হতে বয়স ৩০-এর কাছাকাছি চলে যায়।

মালেশিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনে ৯২ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহাথির মোহাম্মদ নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প ৭০ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ৬০ বছর বয়সে বিশ্বের একটি উন্নত দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে বাধাগ্রস্ত হননি। আমাদের দেশেও অনেক এমপি-মন্ত্রী আছেন, যারা ৬০-৭০ বা তার চেয়েও বেশি বয়সে এসব পদে নির্বাচিত হয়েছেন। কী অসুবিধা? কোনো অসুবিধা যদি না থাকে, তাহলে একজন শিক্ষিত তরুণ বেকার তার ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য একটি চাকরি নিতে বয়সের বাধ্যবাধকতার মুখোমুখি হবে কেন? যতদিন মানুষের কর্মশক্তি থাকে, তত দিন মানুষ কাজ করবে, এটাই হওয়া উচিত নিয়ম। কিন্তু অল্প বয়সেই মানুষকে অকর্মণ্য, অযোগ্য, আনফিট গণ্য করে মানুষের জীবনকে হতাশাগ্রস্ত করার কী প্রয়োজন আছে! এতে তো হাতে ধরে দেশে বেকার সংখ্যা বাড়ানো হয়। ৩০ বছর বয়সী একজন তরুণকে চাকরিতে প্রবেশের আগেই অযোগ্যের কাতারে ফেলে দেয়াটা কতটুকু সঠিক, কতটুকু মানবিক, তা গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।

আমাদের দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩০ বছর বয়সের পরও চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ থাকে। অন্য সব প্রতিষ্ঠানে যখন সম্ভব, সরকারি চাকরিতে আরো বেশি সম্ভব হওয়া দরকার। কারণ মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ একটি সরকারি চাকরি। বিশ্বের অনেক দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স সম্পর্কে আমরা অনেকে জানি না। কানাডিয়ান সিভিল সার্ভিসে প্রবেশের বয়স ২০ থেকে ৬০ বছর, শ্রীলঙ্কায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছর, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২০ থেকে ৫৯ বছর। বিশ্বের আরো অনেক দেশে এরকম চাকরিতে প্রবেশের পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ সংবাদগুলো অবশ্যই অবাক করার মতো, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চাকরিতে প্রবেশের এ অবাধ সুযোগই যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক।হ
লেখক : শিক্ষক, রোকনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বশিকপুর, লক্ষ্মীপুর

ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার
আবদুল হামিদ
সম্পদ আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন। সম্পদের অফুরন্ত ভাণ্ডার একমাত্র আল্লাহর কাছে রয়েছে। মানুষ তার মেধা, শ্রম ও সময় ব্যয় করে অসীম চাহিদার তুলনায় সীমিত সম্পদ আহরণ করতে পারে। পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাবে আমাদের সমাজের কিছু লোক তার মেধাকে ব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। একচ্ছত্র মালিকানার ফলে সে তার সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে এবং এরা দিন দিন আরো ধনী হতে থাকে। অপর দিকে, সমাজের দুর্বলশ্রেণীর নি¤œ আয়ের লোকজন দরিদ্রতার গ্লানি থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। দিন-রাত, ঝড়-বৃষ্টি ও তপ্তরোদ উপেক্ষা করে পরিশ্রমের পর ঠিকমতো দু’বেলা খাবার তাদের ভাগ্যে জুটে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুঁজিপতিরা যাদের শ্রম আর প্রচেষ্টাকে ব্যবহার করে তারা পুঁজিপতি ও বিলিয়নপতি হয়েছেন তাদের অধিকারের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না।

নিজের সঞ্চয়ের ভাণ্ডারকে আরো ভারী করার জন্য অধীনস্তদের ওপর শোষণ-নির্যাতন, অশুভ আচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করেন না। আল্লাহ তায়ালা চান- ব্যক্তিগত মালিকানা থাকা সত্ত্বেও মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি দিক এবং এ বিশ্বাস পোষণ করুক যে, এই সম্পদ মহান আল্লাহর অনুগ্রহের দান। আর এই বিশ্বাসের আলোকেই তার অর্থনৈতিক কার্যক্রম আবর্তিত হোক, আল্লাহর বিধান ও অভিপ্রায় অনুসারে তা উপার্জন ও ব্যয় করুক এটাই আল্লাহর চাওয়া। তাই বিত্তবানদের মনে রাখতে হবে যে, তার উপার্জিত সম্পদে সমাজের আর ১০ জনেরও অধিকার রয়েছে। কারণ, এ সম্পদ উপার্জনে শুধু তার প্রচেষ্টাই যথেষ্ট ছিল না। মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ ও সমাজের অপরাপর মানুষের শ্রমের ফলেই তার এই সম্পদ আহরিত হয়েছে, যা আজ তার নিয়ন্ত্রণে, তার মালিকানাধীন। সম্পদের মালিক হতে পারার কারণে শুধু নিজেই তা ভোগ করবে, অন্যকে কিছুই দেবে না, এই কারুণী মানসিকতা আল্লাহ মোটেও পছন্দ করেন না। আহরিত সম্পদের সুষম বণ্টন হলে সমাজের দরিদ্র মানুষকে দৈন্য ও নিগ্রহিত হতে হবে না, অন্তত নিজের ন্যূনতম প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারবে। সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সব মানুষই তার অত্যাবশ্যকীয় চাহিদাগুলো পূরণ করে নিতে পারবে।

ইসলাম দানের অনুপ্রেরণাকে এতটুকু পর্যন্ত প্রসারিত করেছে যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদই আল্লাহর পথে বিলিয়ে দেয়ার প্রতি আল কুরআনে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামকে দান খয়রাত করতে বললে তারা রাসূল সা:-কে প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা কী পরিমাণ দান করব? মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে যে, কী পরিমাণ তারা দান করবে? আপনি বলে দিন, প্রয়োজনাতিরিক্ত সবকিছু’ (সূরা বাকারা)। অন্য দিকে, প্রয়োজনকে বল্গাহীন না করে সীমিত পর্যায়ে জীবনযাপন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখা যে সঙ্গত নয়; এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বহু আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে- ‘আর যারা সোনা-রূপা (ধন-সম্পদ) জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদেরকে আপনি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। কিয়ামতের দিন সেগুলো জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং সেগুলো দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল, পার্শদেশ এবং পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে এবং বলা হবে এগুলোই সেই সম্পদ যা তোমরা (জাকাত না দিয়ে) পুঞ্জিভূত করে রেখেছিলে’ (সূরা তাওবা- ৩৪)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘যারা মালকে পুঞ্জিভূত করে রাখে এবং বার বার গণনা করে, আর মনে করে যে, তার মাল তাকে চিরঞ্জীব করে রাখবে। কখনোই নয়, অবশ্যই তাকে হুতামায় (জাহান্নামে) নিক্ষেপ করা হবে’ (সূরা হুমাজা: ২-৪)। সূরা বাকারার ১৯৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আর আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর এবং (মাল জমা করে রেখে) নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কর না’ (সূরা বাকারা- ১৯৫)।

কুরআনের সূরায়ে তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতের ঘোষণা অনুযায়ী মূলত ফকির, মিসকিন, যাকাত সংগ্রহকারী কর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি, কৃতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদরত মুজাহিদ, বিপদগ্রস্ত মুসাফির ও নওমুসলিমকে যাকাত দেয়া যাবে। নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী ও গরিব ভদ্রলোক কে যুগচাহিদা ও গুণাগুণ বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জাকাত দিতে হবে। কারণ, তারা মানুষের কাছে লজ্জার কারণে হাত পাতবে না। তাদের চিহ্ন দেখে চিনে নিতে হবে যে, তারা গরিব। জাকাত যাকে দেবেন তাকে এমনভাবে দেয়া ভালো যেন সে ব্যবসা ইত্যাদি করতে পারে এবং পরবর্তী বছর সেও জাকাতদাতা হয়ে যায়। ভিক্ষার মতো অল্প অল্প করে জাকাত দিয়ে সমাজ থেকে দারিদ্র্যতা দূর করা যাবে না।
লেখক : শিক্ষক, জামেয়া ইসলামিয়া
আনওয়ারে মদিনা মাদরাসা, ইসলামপুর, সিলেট

রাজনীতিতে মাদকের ছোবল
মুহাম্মদ ওয়াছিয়ার রহমান

সরকার দেশব্যাপী মাদক কারবারিদের গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। সরকারের কথিত অল আউট যুদ্ধে ২৭ মে পর্যন্ত ৯০ জনের প্রাণ হারায়। কিন্তু এই অভিযানে ৯০ প্রাণ হারা লোকের মধ্যে সরকারি দলীয় কোনো লোকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সুতরাং অভিযানের আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাঠে মাদক কারবারির ছড়াছড়ি এভাবে পাওয়া গেছে, যাদের ব্যাপারে সরকার কী করে তা এখন দেখার বিষয়-

আওয়ামী লীগ : ১১ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ২০০ পিস ইয়াবাসহ সলঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনকে দাদনপুর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে র‌্যাব-১২। ১৫ জানুয়ারি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে নবাবপুর ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি লুৎফর রহমানকে ইয়াবাসহ আটক করে র‌্যাব-৮। পরে আওয়ামী লীগ লুৎফরকে সংগঠন থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। ২৩ জানুয়ারি যশোরের বাঘারপাড়ায় বন্দবিলা ইউনিয়নে প্রেমচরা গ্রামে আওয়ামী লীগ দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ নেতা রুস্তম মোল্লা ও আলম মোল্লার সমর্থকদের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। ২৬ জানুয়ারি মেহেরপুরে সিন্দুরকাটা গ্রামের তিন রাস্তার মোড় সংলগ্ন কাঁঠালবাগান থেকে ৪৭ পিস ইয়াবাসহ আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ। ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী রনি আহমেদকে বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। ৫ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এনামুল হককে ১৫২ পিস ইয়াবাসহ তার বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। ২০ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মাদক সেবনের তথ্য উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করায় গজারিয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য জসিম উদ্দিনের ওপর হামলা করে মাদকব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম সিকদার ও তার সহযোগীরা। আমিনুল ইসলাম তার বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার মাদকের আসর ও নারী নিয়ে অনৈতিক কারবারের আড্ডা বসায়।

ছাত্রলীগ : ২৯ জানুয়ারি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ছালামতপুর নয়াবাড়ী ব্রিজের উপর থেকে ৫৬৭ পিস ইয়াবাসহ ছাত্রলীগ উপজেলা সহ-সভাপতি ও দু’টি হত্যা মামলার আসামি সোহান আহমেদ মুছাকে আটক করে র‌্যাব-৯। ১৭ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শিবগঞ্জে উথলী হাট এলাকা থেকে ৬০ পিস ইয়াবাসহ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নয়ন খলিফা মিলনকে আটক করে পুলিশ। ৮ মার্চ গাজীপুরের টঙ্গীতে গাজীপুরা এলাকা টহল দেয়ার সময় পুলিশ ১৮ ক্যান বিয়ারসহ ছাত্রলীগ মহানগর কমিটির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি মাদক কারবারি রাকিব মণ্ডলসহ দুইজনকে আটক করে। ১৯ এপ্রিল সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থেকে সরুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ সাহিদুজ্জামান হিরু ও যুবলীগ ইউনিয়ন সভাপতি আসাদুজ্জাান মিন্টুকে ৪৭ পিস ইয়াবাসহ আটক করে ডিবি পুলিশ। বরগুনার বেতাগীতে পৌর বিএনপির অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও তছনছ করে ছাত্রলীগ। ৯ মে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগ উপ-হাইস্কুল বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমানকে ৩০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। ১২ মে মানিকগঞ্জে সিঙ্গাইর কলেজ ছাত্র-সংসদের ভিপি ও উপজেলা ছাত্রলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন মিরুকে পাঁচ পিস ইয়াবাসহ চর আজিমপুর এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। ১৯ মে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মহল্লার লঞ্চঘাট এলাকা থেকে সরকারি ইয়াসিন কলেজে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের রহমান অর্পিকে এক হাজার ৫০০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। ২১ মে চাঁদপুর উত্তর মতলবে সাহেব বাজার থেকে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম, তার সহযোগী শাহাদাত ও রোমানকে ৫১ পিস ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ।

যুবলীগ : ৪ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ২০০ পিস ইয়াবাসহ দরবেশপুর ইউনিয়ন যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক হাসানকে গাছিবাড়ির সামনে থেকে আটক করে পুলিশ। ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইলে এলাহি কমিউনিটি সেন্টারে যুবলীগ থানা জরুরি বর্ধিতসভায় হুমকি দেয়া হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার খিলক্ষেত থেকে ৩০ পিস ইয়াবাসহ যুবলীগ নেতা আক্তার হোসেন ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে পুলিশ। ১৯ ফেব্রুয়ারি পাবনার বেড়া থেকে সম্ভুপুরা গ্রামে যুবলীগ কর্মী আবদুুর রাজ্জাককে ১৭০ পিস ইয়াবাসহ তার বাড়ি থেকে পুলিশ আটক করে।

১৬ এপ্রিল জামালপুরের সরিষাবাড়ীর মহাদান ইউনিয়ন যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক লাভলু মেম্বার ও তার সহযোগী আবদুর রাজ্জাককে ১৬ পিস ইয়াবাসহ বিলপাড় বড় পুকুরপাড় এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। ১২ মে মারদারীপুরের কালকিনি উপজেলা চত্বর থেকে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সরদার নিজামুল হক ও তার সহযোগী হারেস সরদারকে চার বোতল ফেন্সিডিলসহ আটক করে পুলিশ। ১৪ মে নাটোরের নলডাঙ্গায় উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লিটনসহ ১৬ জন মাদক কারবারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দেন। এর মধ্যে তৌহিদুর রহমান লিটনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। ২৩ মে পিরোজপুরের নাজিরপুরে শ্রীরামকাঠি ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন শেখ ও তার সহযোগী সোহান মল্লিককে তিন কেজি গাঁজা ও ৫৫ পিস ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ।

ঈদে ট্রেন বিড়ম্বনা
মোহাম্মদ অঙ্কন
সকাল ৮টা থেকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট মিলছে না। নিয়ম অনুযায়ী ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ছাড়া হয় ঈদের ১০ দিন আগে। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে যখন কাক্সিক্ষত টিকিট চাওয়া হয়, জবাব আসে- ‘টিকিট নেই’। দু-চারবার চাওয়ার পর বলা হলো- ‘১২টা-১টার পর আসেন’। সবাইকে যদি এভাবেই হতাশ করে ফিরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে টিকিট কিনছে কারা? প্রায় প্রতিটি স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে কালোবাজারিদের হাত আছে, এসব দৃশ্য দেখে তা বুঝতে আর বাকি থাকে না। জনগণের নির্বিঘেœ চলাচল করার জন্য দেশব্যাপী ট্রেন সার্ভিস চালু রয়েছে। কিন্তু ট্রেনের টিকিট বিড়ম্বনা যেন যাত্রীদের মনমেজাজ বিষিয়ে তুলেছে। কোনো উপায় না পেয়ে তারা পুরো ভাড়া দিয়ে ‘স্ট্যান্ডিং’ টিকিটে ভ্রমণ করছেন। ভাড়ার পরিমাণ কম নয়। সড়ক পথে রাস্তাগুলো সঙ্কীর্ণ হওয়ায় প্রায়ই বাসে মিনিবাসে দুর্ঘটনা ঘটে। তাই জনগণের ট্রেন ভ্রমণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী ট্রেনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি। আজকাল ট্রেনের দিকে তাকালে মনে হয়, ট্রেনটি যেন শহরের সব লোক নিয়ে রওনা দিয়েছে! অর্থাৎ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে ছুটে চলে।

ঈদুল ফিতর আসন্ন। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এ সময় ট্রেন ভ্রমণ বৃদ্ধি পায় অনেক। ১ জুন থেকে ‘ঈদ স্পেশাল’ নামে অগ্রিম টিকিট ছাড়া হয়েছে। এই টিকিট শুধু ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাবে। প্রশ্ন হলো- দেশে শুধু একটি স্টেশনে কেন টিকিট দেয়া হবে? এমনকি, ঢাকার অন্যান্য স্টেশনে টিকিট দেয়া হচ্ছে না কেন? টিকিট কেনার জন্য মানুষজন দূর-দূরান্ত থেকে দুর্ভোগ পাড়ি দিয়ে কমলাপুর যাবেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াবেন। কিন্তু লাইন শেষ হবার আগেই টিকিট শেষ হয়ে যাবে।
তারপর হতাশ হয়ে অন্য পথ ধরতে হবে অথবা কালোবাজারিদের খুঁজতে হবে। অনেক বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কিনে বাড়ি ফিরতে হবে। এভাবে ঈদের আনন্দ আহাজারিতে পরিণত হয়।

ভুক্তভোগী হয়ে বলছি, ট্রেনে এভাবেই বিড়ম্বনা বাড়ছে। সময়মতো টিকিট মিলছে না, তার ওপর দাম বাড়ছে। অথচ ভ্রমণের মান বাড়ছে না। আজকাল ট্রেনেও দুর্ঘটনা ঘটছে। যাত্রীরা গাড়ির বিলম্বের দুর্ভোগ নিয়ে ভ্রমণ করছেন। কিন্তু এভাবে আর কত দিন! তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন, রেল খাতে সব অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা হোক। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement