২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অবশেষে উৎসের সন্ধান মিলেই গেল

অবশেষে উৎসের সন্ধান মিলেই গেল - ছবি : সংগৃহীত

জন্ম পরিচয় মানুষেরই মৌলিক অধিকার। তাই পরিচয় গোপন করার চেষ্টা জঘন্য অপরাধ। কোনো কারণে যারা দত্তক শিশু নিয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে শিশুর পরিচয় গোপন করার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। দত্তক নেয়া দোষণীয় না হলেও এটা উচিত নয়, কোনোক্রমেই। কোনো কোনো ধর্মমতে এতে সমর্থন থাকলেও ইসলামে নেই।

শিশু মনে ভাবনা জাগে- সে কোথা থেকে, কেমন করে এলো। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘জন্ম কথা’ কবিতায় শিশু মনের এ অভিব্যক্তি অত্যন্ত সুন্দরভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। এ উৎস সন্ধান করতে গিয়ে বিভ্রান্ত ডারউইনের ধারণা হলো- কোটি বছর আগে বানরই তার পূর্বপুরুষ হয়ে থাকবে হয়তো। কিন্তু বেচারা ভুল করলেন, কিছু বানরের ওপর বিবর্তন ধারা কার্যকর হলো, যা ডারউইন পর্যন্ত এসে গেল, অথচ কিছু বানরের ওপর কার্যকর না হওয়ার কারণে তারা কোটি বছর পরও অবিকল বানরই রয়ে গেল।

সম্প্রতি এ দেশীয় কিছু মানুষকে উৎসের খোঁজে মরিয়া মনে হয়। সন্দেহ সৃষ্টি হলে তা দূর করার প্রয়াশ দূষণীয় নয়, বিশেষত জন্ম পরিচয়ের বেলায়। সুতরাং বিষয়টিকে টেরাচোখে না দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়াই শ্রেয়।

বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের বিশ্বাস আদম আ: ও হাওয়া আ: থেকেই পৃথিবীতে মানবধারার শুরু। কুরআন পাকের ভাষ্যও তাই। তবে কুরআন পাকের ঘোষণা অনুযায়ী মানুষ যাতে একজন থেকে অন্যজনকে এবং এক জাতি হতে অন্য জাতিকে আলাদা করে চেনার ব্যাপারে বিভ্রান্তিতে না পড়ে, চেহারা-সুরত, বর্ণ ও আকার-প্রকারে পার্থক্য শুধু এ জন্যই। এতে উচ্চবর্ণ, নিম্নবর্ণ, অভিজাত-কমজাত বলে বড়াই করার বা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পুকুরের কাতল মাছ বা পাবদা মাছের মতো সাত শ’ কোটি মানুষের চেহারা-সুরত যদি একই রকম হতো তা হলে কে কার স্বামী বা স্ত্রী কে বাদি আর কে বিবাদি তা চেনার উপায় থাকত কি?

তবে আমাদের এ সন্ধান পরিক্রমায় আদম-হাওয়া পর্যন্ত খোঁজ-খবর নেয়ার প্রয়োজন আদৌ নেই বলে মনে হয়। এ উপ-মহাদেশের বিপুল ও বিচিত্র জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে জানা যায় পাকিস্তানের খাইবার গিরিপথ বেয়ে মধ্য এশিয়া ও ইউরোপ থেকে আর্যদের আগমন ঘটে ভারতে। ভারতের আদিবাসী দ্রাবিড়দের পরাজিত ও বিতাড়িত করে তারা সিন্ধু ও গঙ্গা অববাহিকার উর্বর সমভূমি দখল করে নেয় প্রথমেই। দ্রাবিড়রা দক্ষিণ ভারতে পালিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত টিকতে পারল না। আর্যরা প্রকৃতিগতভাবে যাযাবর ও যোদ্ধা। কৃষিজীবী দ্রাবিড়দের থেকে পুরো ভারত দখল করে নিতে তাদের খুব বেগ পেতে হলো না। তবে এখানকার মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি উর্বর মাটি ও পানির সহজ লভ্যাংশ প্রলুব্ধ হয়ে যাযাবর আর্যরা ভারতে স্থায়ী বাসিন্দা রূপে শেকড় গেড়ে রয়ে গেল। আর্যদের পর ভারতে নানা দেশ থেকে নানা মানুষের আগমন ঘটে। কবি রবীন্দ্রনাথের ‘ভারত তীর্থ কবিতায় কবি এই বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন ‘কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা, দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে, সমুদ্রে জল হারা, হে আয় আর্য হেথায় অনার্থ দ্রাবিড় চীন, শক আর সুনদন পাঠান মুঘল এক দেহে হলো লীন।’

আমরা যে শেকড়ের সন্ধান করছি এতক্ষণ আলোচ্য কবিতাটিতে যেন তারই সন্ধান মেলে। তবে কবির ভাষায় ‘শক, গুণ, দল এক দেহে লীন’ হলেও পাঠান-মুঘল’রা কিন্তু আদৌ লীন হয়নি। এর ব্যাখ্যায় বলা যায়, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী কোনো না কোনোভাবে প্রাচীন ভারতীয়দের মতোই মূর্তি ও প্রকৃতি পূজারী ছিলেন, কিন্তু এ ক্ষেত্রে মুসলমানরা ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ও উন্নততর এক ধর্ম চেতনার ধারক যা তাদেরকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে। অবশ্য এ জন্য দূর অতীতে তাদেরকে সে আগুনে পুড়িয়ে মারার মতো নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে, তা আজও অবসান হয়নি।

মুসলমান বণিক, বিজেতা আর ধর্ম প্রচারক যে যেভাবেই ভারতে এসে থাকেন না কেন, তাদের প্রায় সবাই এ দেশেই রয়ে গেছেন। মুসলমানরা ভারতে শুধু নতুন ধর্মই নিয়ে আসেননি, নিয়ে এসেছিলেন, উন্নতর এক সভ্যতাও। কবিগুরুর ভাষায়, ‘পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার’, এ উপহার সোনাদানা, খনিজ তেল, খুরমা ও খেজুর অবশ্যই নয়।
বরং তা ছিল এক বিপ্লব যা শুধু ধর্মীয় অঙ্গনেই নয় বরং পরিবর্তন এনেছিল জীবনবোধের সব ক্ষেত্রে নতুন জিজ্ঞাসা জন্ম দিয়েছিল হাজার বছরের পুঞ্জীভূত অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও।

উৎসের সন্ধান করতে গিয়ে জানা গেল ভারতে মুসলমানদের আগমন ঘটে আজ থেকে প্রায় ১৩০০ বছর আগে। বণিক, বিজেতা আর ধর্মপ্রচারক পীর-দরবেশদের মাধ্যমে। এর থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, পশ্চিম দেশীয় বহিরাগত মুসলিম ও স্থানীয় ধর্মান্তরিত মুসলিম নিয়ে বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষের মুসলিমসমাজ। তবে ধর্মান্তরিত মুসলিমরাই সংখ্যার দিক থেকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ। অনুসন্ধানে আরো জানা গেল, মুসলমানদের পূর্বপুরুষ সে ভারতীয় হোক আর আরবীয় উভয়ের আদি পরিচয়ে তারা ঘোরতর পৌত্তলিক ছিলেন এবং দুই অঞ্চলেই প্রায় অভিন্ন এক পৌত্তিলিক ধর্ম।

সংস্কৃতি ও সমাজ গড়ে তুলেছিলেন তারা। সেই বৈদিক যুগের আমাদের দাদা-দাদীরা বিভিন্ন দেব-দেবী, গাছ-পাথর, জীব-জন্তু, চন্দ্র-সূর্য এমনকি লিঙ্গ ও যোনি পূজা করতেন। পুরো সমাজটাকে তারা জাতিভেদ প্রথার কঠিন অক্টোপাসে বেঁধে ফেলেছিলেন। ছোঁয়া-ছুঁই জাত-পাত্রের কঠিন অনুশাসনে এক শ্রেণীর মানুষকে তারা পশুর চেয়েও অধম করে রেখেছিলেন। জাদু-টোনা, শুভা-শুভ, কাল-ক্ষণ, ভূত-প্রেত ইত্যাদি অজস্ত্র অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকেই তারা সমাজজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ ঐতিহ্যে রূপ দিয়েছিলেন। সে যুগের দাদা-দাদীদের উচ্ছৃঙ্খল যৌনজীবন, অবিশ্বাস্য রকম নোংরামী ও নির্যাতনমূলক কদাচারে ভরপুর ছিল। শক্তিমানদের জন্য অন্যের স্ত্রী বলপূর্বক বিয়ে বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন গর্হিত কর্মরূপে বিবেচিত হতো না। নারীদের মানবীয় মর্যাদা ও অধিকার বলতে কিছুই ছিল না। পতিতাবৃত্তি শুধু স্বীকৃতিই ছিল না বরং কোনো কোনো পতিতাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হতো। জমিদার ও রাজাদের নিজ নিজ পতিতালয় থাকত এবং এ জন্য বড়াই করা হতো। নারীর বস্ত্রহরণ সে যুগে বৈধ লীলা হিসেবে নন্দিত হতো। সে যুগের দাদা-দাদীরা ভূত-প্রেত ও ইতরপ্রাণীর সাথে বিয়ে বা যৌন সম্পর্ক করতেন। অক্ষম দাদাদের জন্য সন্তানের আশায় দাদীদের অন্য পুরুষের বিছানায় পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। এ ধরনের সন্তানকে ক্ষেত্রজ সন্তান বলা হতো। এক নারীর একাধিক পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণেরও রেওয়াজ ছিল সেই যুগে।

আমাদের বৈদিক যুগের দাদা-দাদীরা গরু, বানর, হনুমান, গাছ, পাথর ইত্যাদি হেন বস্তুত নেই যাকে দেবতা জ্ঞানে পূজা না করতেন। তাদের সংখ্যা ৩৩ কোটিও ছাড়িয়ে যায় যা তখনকার ভারতের জনসংখ্যারও বহুগুণ বেশি ছিল। আমাদের দাদা-দাদীরা গো-মলকে পবিত্রতম বস্তু এবং শুচিতার শ্রেষ্ঠতম উপকরণ বলে বিশ্বাস করতেন। তাদের সামাজে নরবলি, পশু বলির ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিধবা নারীকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারা স্বর্গপ্রাপ্তির উপায় মনে করা হতো। বৈদিক যুগের দাদা-দাদীদের মধ্যে মদ, জুয়া ও পাশাখেলার ব্যাপক প্রচলন ছিল। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুদি ব্যবস্থার অত্যাচারে জনজীবন বিপর্যস্ত ছিল। তবে অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত এ দাদা-দাদীদের কিছু মহৎ গুণও ছিল। তারা অত্যন্ত সত্যাশ্রয়ী ও অতিথিপরায়ণ ছিলেন। জ্যোতির্বিদ্যা, যুদ্ধবিদ্যা এবং ভেষজ চিকিৎসালয় তাদের দখল ছিল উল্লেখ করার মতো।

আমাদের বৈদিক যুগের দাদা-দাদীদের ধর্ম, সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত পোস্টমর্টেমের পর আরবীয় তথা পশ্চিম দেশীয় দাদা-দাদীদের ‘ডিএনএ টেস্টের দিকে এবার নজর দেয়া যাক। অবাক হওয়ার বিষয়, আইয়্যামে জাহেলিয়াত’ এর যুগের আরবীয় দাদা-দাদীরাও বৈশিক যুগের দাদা-দাদীদের মতোই প্রায় অভিন্ন এক সমাজ ও সংস্কৃতি এক সভ্যতার (নাকি অসভ্যতা?) গোড়াপত্তন করেন। জাহেলি যুগের আরব দেশীয় দাদা-দাদীরাও বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করতেন। তবে তাদের সমাজে প্রাণীপূজা, লিঙ্গ ও প্রকৃতি পূজার প্রচলন ছিল বলে জানা যায় না, এ দেশীয় দাদা-দাদীদের মতোই তাদেরও যৌন জীবনে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। তবে পশুমৈথুন, জীবজন্তু ও ভূত-প্রেতের সাথে বিয়ে প্রচলন আরবীয়দের মধ্যে ছিল না। সে যুগে আরবদের মধ্যে বিধবা নারীকে পুড়িয়ে মারার রেওয়াজ না থাকলেও মেয়ে শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়ার সামাজিক বৈধতা ছিল। অবশ্য আজকের ভারতে প্রতি বছর লাখ লাখ কন্যাশিশুকে মায়ের গর্ভেই হত্যা করা হচ্ছে। বিধবা বিয়ের ব্যাপারে আরবীয় দাদা-দাদীরা ভারতীয় দাদা-দাদীদের চেয়ে অসম্ভব রকম উদার ও সংস্কারমুক্ত ছিলেন। ভারতের মতো আরবেও মদ, জুয়ার প্রচলন ছিল। জাহেলি যুগে কুশিদ প্রথা ভারতের আরবেও প্রচলিত ছিল। কথায় কথায় মিথ্যা, যুদ্ধবিগ্রহ, খুন-খারাবি ও লুটপাট আরবদের সামাজিক কালচারে পরিণত হয়েছিল। বৈদিক যুগের দাদা-দাদীদের মতো ছোঁয়া-ছুঁই, জাত-পাতের বিধিনিষেধ আরবদের মধ্যে না থাকলেও কৌলিন্যের অহমিকা ভয়ঙ্কর রূপেই বিরাজ করছিল। মরা অঞ্চল বলেই হয়তো আরব মুল্লুকের দাদা-দাদীদের জলাশয়ে বিবস্ত্র হয়ে গোসল ও বস্ত্রহরণের মতো সংস্কৃতি গড়ে না উঠলেও উলঙ্গ দাদা-দাদীরা এক সাথে পবিত্র কাবা তাওয়াফ করতেন এবং এটাকে উচ্চ মার্গে পৌঁছার আলামত বিবেচনা করা হতো।

আলোচ্য পোস্টমর্টেম ও ডিএনএ রিপোর্ট থেকে সন্দেহাতীতভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, আমাদের আদি দাদা-দাদী, সে ভারতীয় হোন আর আরবীয় উভয় শুধু ঘোরতর পৌত্তলিকই ছিলেন না বরং জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে একই রকম জাহেলিয়াতের মধ্যে অবস্থান করছিলেন। এহেন অবস্থায় ইসলামের আবির্ভাব আরবদের জীবনে যে বিপ্লব এনেছিল তারই ঢেউ আরব সাগর পেরিয়ে ভারতের বেলাভূমিতেও আছড়ে পড়েছিল। তবে উৎসের সন্ধান করতে গিয়ে যে বিষয়টি আমাদেরকে বিশেষভাবে চমৎকৃত করেছে তা হলো, বেদ, পুরান ও উপনিষদে বর্ণিত রাসূল সা: সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সেখানে ‘আল্লাহ’ ‘রাসূল’ মুহাম্মদ শব্দগুলো আজো অবিকৃতভাবেই দেখা যায়।

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে পাঁচ হাজার বছর আগে লিখিত এ সব গ্রন্থে আল্লাহ ও রাসূল মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে এমন উক্তিগুলো কিভাবে এলো? উত্তর সহজ। কুরআন পাকের ভাষ্য, যুগে যুগে প্রতিটি জনপদেই আল্লাহ নবী-রাসূলদের পাঠিয়েছেন। সুতরাং ভারতেও কোনো না কোনো নবী-রাসূল এসেই থাকবেন। আদম-হাওয়ার অবতরণ স্থানে আদম পাহাড় (শ্রীলঙ্কায়) নামটা আরবরা দেয়নি। আজও ভারতীয়রা মানুষকে আদমিই বলে ডাকেন। সুতরাং অনুসন্ধানে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া অযৌক্তিক বা অসঙ্গত নয় যে, আরব দেশীয় দাদা-দাদীরা যেমনি হজরত ইব্রাহীম আ:-এর জীবন ও শিক্ষা ভুলে গিয়ে একটি ভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন। তেমনি ভারতে প্রেরিত নবী-রাসূলরা শিক্ষা ভুলে গিয়ে আমাদের বৈদিক যুগের দাদা-দাদীরাও আর একটা ভিন্ন সমাজ গড়ে তুলেছিলেন আর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ওপরে দেয়া হয়েছে। সুতরাং বলা চলে আমাদের দাদা-দাদীদের একটা অংশ হলেও সৌভাগ্যক্রমে বিভ্রান্তির আঁধার থেকে আলোর জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছেন অর্থাৎ উৎসমূল তা শেকড়ের সন্ধান লাভে সক্ষম হয়েছেন হাজার বছর আগে। এই সৌভাগ্যেরই উত্তরাধিকার আজকের এ অঞ্চলের মুসলমানরা।

রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছেন, সভ্যতা এখানে পশ্চিম থেকেই এসেছে। আমরা যে বাংলা সালের হিসাব রাখি এই বাংলা সাল যে আরবি হিজরি সাল থেকেই এসেছে এটা জানা থাকলে অনেক হিন্দুই হয়তো এ দিন পূজা-অর্চনা থেকে বিরতই থাকতেন। গোলাপ ফুল ইরান বা পারস্য থেকে ভারতে এনে থাকবেন মুসলমানরাই। বোধকরি এ জন্যই আজো পূজাতে গোলাপের ব্যবহার নেই। অথচ ‘হিন্দু’ শব্দটি নিজেই যে ফারসি এটা অনেকেই জানেন না। আমাদের দাদা-দাদীরা কেবল ধর্ম ও সংস্কৃতিতেই যে বিপ্লবের সূচনা করেছেন তা নয়, ভারতের সব ভাষাতেও তাদের অবদান স্বীকৃত। এই যে আমাদের বাংলা ভাষা, দুই হাজার খাঁটি বাংলা শব্দের বিপরীতে পাঁচ হাজার আরবি-ফরাসি শব্দ ভাষাকে করেছে গতিশীল ও সমৃদ্ধ।

উৎসের সন্ধানে যারা মরিয়া এ আলোচনা তাদের মহৎউদ্যোগকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ সহায়ক হলেও সময় ও শ্রম স্বার্থক হবে মনে করি। তবে উৎস খোঁজার নামে সময় ও সভ্যতার চাকা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার অবাস্তব চেষ্টা আত্মপ্রহসনেরই নামান্তর। কারণ সতীদাহপ্রথা বা ভূত প্রেতের বিয়ের যুগে ফিরে যাওয়া যেমনি অবাস্তব, তেমনি আরবদের মতো শিশুকন্যা জীবিত করে দেয়া বা উলঙ্গ হয়ে কাবা তাওয়াফের মতো জাহেলিয়াতে ফিরে যাওয়াও অসম্ভব। তবে দাদা-দাদীদের ইতিহাস ও চরিত্র জেনে রাখতে কোনো দোষ বা পাপ নেই। তদুপরি, ইতিহাস জানা থাকা ভালো, আর সেই চেষ্টাটুকুই করা হলো মাত্র।


আরো সংবাদ



premium cement