২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জিয়ার অবদান ও বর্তমান বাংলাদেশ

জিয়াউর রহমান - ছবি : সংগ্রহ

বাংলাদেশের রাজনীতির দুর্ভাগ্য হলো- ক্ষমতাসীন দলটির ওপর গ্রাম বাংলার ভূতের আছরের মতো, ক্ষমতার চরম অপব্যবহার ও কর্তৃত্ববাদের আছর। তাদের আছে দেশের সবকিছু কুক্ষিগত করে নেয়ার অতৃপ্ত বাসনা। এই প্রক্রিয়ায় অন্য কেউ বাধা হিসেবে গণ্য হলে তখনই ‘বিপর্যয়’ দেখা দেয়। এটা অনস্বীকার্য, তদানীন্তন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং সবাইকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানান। তার এ ঘোষণা তার দলের জন্য সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে নিকট অতীতে। জিয়ার প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দল ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে এককভাবে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবতীর্ণ হলো বাংলাদেশ জাতীয় রাজনীতিতে। আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর ক্রমশ জিয়া, জিয়া পরিবার এবং তার দল জিঘাংসার শিকারে পরিণত হলো। নানাভাবে জিয়া পরিবারকে নিশানা বানানো হয়েছে। তাদের অর্জনকে হেয় করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথাসাধ্য।

জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সে সুযোগ তিনি সাহসের সাথে গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু এ জন্য তিনি কোনো কৃতিত্ব নেননি। তখন কেউ কেউ স্বাধীনতা ঘোষণার ব্যাপারে অত সাহসী হতে পারেননি। জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাই দেশী-বিদেশী সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এ ছাড়া, জিয়া ছিলেন সে সাহসী বীর যিনি চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তার কমান্ডে যুদ্ধে এক ব্যাটালিয়ন পাকিস্তানি সৈন্য ধ্বংস করা হয়। এমনকি তার কমান্ডিং অফিসারও নিহত হন। ড. জি ডব্লিউ চৌধুরী তার বই ‘লাস্ট ডেজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন- While army was successful in bringing the peace of graveyard of Dacca city, its position in the rest of the East Pakistan was unvariable. Its position was most desperate in the major seaport of East Bengal Chittagong where the Second-in-Command of the Tenth East Bengal Regiment Major Ziaur Rahman, killing the West Pakistani Commanding Officer, announced the formation of the Provisional Government of Bangladesh from Chittagong radio station on March 26. স্মরণীয় বিষয় হলো- চট্টগ্রাম থেকে তিনবার স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী, (একবার আগ্রাবাদ, দু’বার কালুরঘাট রেডিও) হলেন মেজর জিয়া। তিনিই ঘোষণা করেছিলেন ''We revolt' [দ্রষ্টব্য : দক্ষিণ রণাঙ্গন-মেজর রফিক পিএসসি.]
জিয়ার কৃতিত্বকে ম্লান করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ নিজেদেরই হেয় করল। জিয়া প্রধান সেনাপতি হিসেবে পদোন্নতি লাভের হকদার ছিলেন। তাকে খাটো করতে গিয়ে তার জুনিয়রকে সে পদে নিযুক্ত করা হলো। অথচ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের চরম দুর্যোগ মুহূর্তে তিনি কোনো ধরনের প্রতিরোধব্যবস্থা নিতে অপারগ হলেন। কর্নেল (অব:) অলি আহমদ তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, জিয়া যদি সে ক্রাইসিস মুহূর্তে প্রধান সেনাপতি থাকতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার মতো ঘটনা ঘটত না।’ কর্নেল শাফায়েত জামিল তার লিখিত বইতে এ ইঙ্গিতই করেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এম এ মোহাইমেন তার লিখিত ‘ঢাকা-আগরতলা-মুজিবনগর’ নামক বইতে।

বর্তমান সরকার নিজেদের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠিত হয় না। তা তারা ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনেও দেখিয়েছেন। কারচুপি, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেয়াসহ তাদের তৎপরতা দেখাতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। এমনকি কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত খুলনা মেয়র নির্বাচনেও পরিকল্পিতভাবে তা করা হয়েছে, যা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবদুল খালেক তালুকদার স্বীকার করেছেন, তিনি নির্বাচনের দিন কোনো বিএনপি নেতাকর্মীকে মাঠে দেখেননি। তা হলে তারা কোথায় গেল? কেন তারা মাঠে থাকার সাহস বা সুযোগ পাননি?
নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ক্ষমতাসীনদের কর্মী ও নেতাদের জন্য নির্বাচনী মাঠ এমনভাবে প্রশস্ত করেছে যে, তারা অবাধে ভোটের অঙ্গন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হলেন। এটাকে নির্বাচন কমিশন ‘চমৎকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশবাসীর কাছে নিজেদের খাটো করেছে।

তিনটি উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডে যদি কোনো কারণে ব্যত্যয় ঘটে- যার সমদুয় আশঙ্কা আছে- তাহলে দেশ আবার অতলে তলিয়ে যেতে পারে। এ তিনটি খাত হলো- ০১. গার্মেন্টস; ০২. কৃষি উৎপাদন ও ০৩. প্রবাসীদের রেমিট্যান্স। এ খাতগুলোর প্রবর্তনে প্রেসিডেন্ট জিয়ার কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। তিনিই প্রথম বিদেশে শ্রমিক রফতানির ব্যবস্থা করে ছিলেন। তার খালখননের আন্দোলন দেশ ও জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং ১৯৭৪-এর মন্বন্তর পর মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছিল। গার্মেন্টস সেক্টরে উদ্যোগ সৃষ্টির কাণ্ডারীও তিনি ছিলেন, যা বর্তমানে আমাদের প্রধান রফতানি খাত হিসেবে চিহ্নিত।
দেশকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও সরকার, একটি শান্তিময় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রচলন প্রভৃতি ক্ষমতাশীনদের ধাতে নেই। সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দলীয়করণের পরিণতি কখনো শুভ হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।
লেখক : স্কোয়াড্রন লিডার (অব:), বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।


আরো সংবাদ



premium cement