২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তারা কেন সব মৃত্যুতে মর্মাহত নন?

সিরিয়ায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল - ছবি : সংগ্রহ

ভূমধ্যসাগরের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটি ভূখণ্ড এই সিরিয়া। অথচ এই ছোট্ট ভূখণ্ডটি এখন মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া।
গত ১৪ এপ্রিল সকালে ঘুম থেকে জেগেই শুনতে পেলাম, সিরিয়ায় হামলা হয়েছে। মিসাইল হামলা। গণমাধ্যমের ভাষ্য যদি নির্ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ওই হামলায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ বহু স্থাপনা ধ্বংস হওয়ার কথা। তিনটি বড় দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স যৌথভাবে এ হামলা চালিয়েছে এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই তিন শক্তির দু’টিই এককালের ঔপনিবেশিক শক্তি। সময় বদলেছে, কিন্তু তাদের ঔপনিবেশিক চরিত্র এখনো আগের মতোই আছে।
এ পরাশক্তিদের নেতৃত্ব দিচ্ছে নব্য ঔপনিবেশবাদী যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রবল প্রতাপশালী প্রেসিডেন্ট তিনি। ট্রাম্প যে দিন প্রেসিডেন্ট হলেন, সে দিনই পৃথিবীর মানুষ ১০ নম্বর বিপদ সঙ্কেত পেয়ে গেল। এখন কেবল প্রার্থনা- যেন দুটো দেশ কম ধ্বংস হয়, পরমাণু যুদ্ধ যেন লেগে না যায়। ট্রাম্পের মতো একজন ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ প্রেসিডেন্টের নজর সিরিয়ায় পড়েছে। সবাই এ জন্য শঙ্কিত।
২০১১ সালের ঘটনা। সিরিয়া সঙ্কটের শুরু হলো আরব বসন্তের মধ্যে। তবে আরবে কোনো বসন্তের দেখা পাওয়া যায়নি। পশ্চিমা গণমাধ্যম যেটাকে ‘বসন্ত’ বলে বোঝাবার চেষ্টা করেছে, দেখা গেল ওটা বাস্তবে ‘কালবৈশাখী ঝড়’। সিরিয়ায় যখন এ ঝড় শুরু হলো তখন শুরুতেই সিরিয়া হলো দুইভাগ। এক দিকে সরকারি পক্ষ, অপর দিকে সরকারবিরোধী। বিরোধীদের হাতে উঠে এলো অস্ত্র এবং তাদের জন্য এলো পশ্চিমা আশীর্বাদ।

আরব বসন্তের নামে সরকারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান সব দেশে হলো না। বেছে বেছে কেবল সেই দেশগুলোতেই এটা ভয়ঙ্কর রূপ নিল, যে দেশগুলোর সাথে পশ্চিমাদের শত্রুতার সম্পর্ক। সৌদি আরবেও এ ঝড়ের প্রকোপ বেশি হওয়ার কথা;, কিন্তু সেখানে কোনো বসন্ত এলো না। পশ্চিমারা যেই সরকারগুলোকে শত্রু মনে করল সেখানেই সরকারবিরোধী হাওয়া লাগল। লিবিয়া-সিরিয়ায় সেই হাওয়া ভয়াবহ ঝড়ের আকার ধারণ করে। সশস্ত্র বিদ্রোহীরা যুদ্ধ আরম্ভ করল সরকারি বাহিনীর সাথে। লিবিয়ার পতন হলো। সিরিয়া টিকে থাকল। শুরু হলো গৃহযুদ্ধ। যুদ্ধের মধ্যেই চলতে থাকে ভাগাভাগি। সিরিয়ার একেক এলাকা চলে গেল একেক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে।
যত দিন গেছে দেশটিতে কালবৈশাখীর তাণ্ডব বিস্তৃত হয়েছে। কে যে কাকে মারছে, কারা কিসের লক্ষ্যে লড়াই করছে, বোঝা মুশকিল। সরকার বা বিদ্রোহী বা জঙ্গি বা আমেরিকা বা রাশিয়া- সব পক্ষের হাতে মানুষের মৃত্যু ঘটতে থাকে। এই যজ্ঞে মৃত্যু হওয়াটাই যেন বড় কথা। এর জন্যই এত আয়োজন।

এরই মধ্যে আইএসের উপাখ্যান রচিত হয় এবং অজস্র মানুষের প্রাণের আত্মাহুতিতে সেই উপাখ্যান সমাপ্ত হলো। লজ্জিত হই আইএস ইস্যুতে পশ্চিমাদের নির্লজ্জতা দেখে। পশ্চিমারা বিদ্রোহীদের সমর্থন দিলো (এখনো দিচ্ছে)। সেই সমর্থন পেয়ে মোটাতাজা হলো আইএস। তাদের ইচ্ছেমতো বাড়তে দেয়া হলো। চার দিকে ছড়িয়ে পড়তে দেয়া হলো। তারপর যখন ইরাক-সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ওদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল, তখন হঠাৎ পশ্চিমারা উপলব্ধি করল, এরা জঙ্গি! এদের নির্মূল করতে হবে যেকোনো উপায়ে। ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হলো নির্মূল অভিযান। সেই বিখ্যাত গানের চরণ- ‘তুমি হাকিম হইয়া হুকুম করো, পুলিশ হইয়া ধরো।’
পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো আইএস নির্মূল করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ এবং লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়িও নির্মূল করে ফেলল। চাকু দিয়ে শিরñেদ করার চাইতে বোমা মেরে বাড়িসুদ্ধ মাটিতে গেড়ে দেয়া কম অমানবিক নয়। আমার ধারণা, ইরাক বা সিরিয়ার জনগণ পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে রোজ একটি প্রার্থনা করেন। সেটা হচ্ছে ‘হে আল্লাহ, পৃথিবীর কোনো জাতিকে যেন পশ্চিমা সাহায্য নিতে না হয়!’

পরিহাসের বিষয়- পশ্চিমা সাহায্য আবারো নিতে হচ্ছে এবং নিতে হচ্ছে সিরিয়ার জনগণকেই। সিরিয়ার জনসাধারণ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে সাম্রাজ্যবাদী নাটের গুরুদের কুম্ভিরাশ্রু বর্ষণ। রাসায়নিক অস্ত্রে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার ঘটনায় তারা নাকি ভীষণ মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ! তাই একজোট হয়ে হামলা চালিয়ে অন্যায়ের জবাব দিচ্ছে; কিন্তু তাদের কৃত মহা অন্যায়ের জবাব দেবে কে? রাশিয়া এক দানবীয় শক্তি। সে মানবকে বাঁচাতে আসেনি। নিজের ভাগ বুঝে নিতে এসেছে। তার বুকেও পশ্চিমাদের সমান রক্ততৃষ্ণা। তার ভাগ তাকে বুঝিয়ে দেয়া হলেই সে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। তখন দানবে দানবে হ্যান্ডশেক হবে। জঙ্গিদের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না, তেমনি রাসায়নিক অস্ত্রের হাত থেকে নিরপরাধ মানুষকে সুরক্ষা দেয়াও উদ্দেশ্য নয়। যদি তাদের মধ্যে সেই চেতনা থাকত তাহলে সিরিয়া সঙ্কটের জন্মই হতো না। মুসলমানের রক্ত, মুসলমানের সম্পদ এবং মুসলমানের ধ্বংস চায়। কোনো মুসলিমপ্রধান দেশের অতি ক্ষুদ্র সঙ্কটকেও তারা ধ্বংসযজ্ঞ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এটাই তাদের পলিসি। তাদের বন্দুকের নল ঘুরেছে মুসলিমদের দিকে।

আমাদের যারা ধ্বংস করতে মরিয়া, আমরা তাদের কাছেই ন্যায়বিচার আশা করি। তাদের ন্যায়ের বাণী কপচানো দেখে বিভ্রান্ত হই- ‘ওরা বোধহয় আমাদের বাঁচাবে’। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলাই না। এ পরাশক্তিরা ন্যায়ের পক্ষে ততক্ষণ, ন্যায় তাদের পক্ষে যতক্ষণ। যখনই ন্যায়ের দাবি তাদের স্বার্থের প্রতিকূলে চলে যায়, তারা স্বরূপে আবির্ভূত হয়ে ন্যায়কে পদদলিত করতে বিলম্ব করে না। এর বহু নমুনা দেখা যায়। সিরিয়ার সরকার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে বড় অপরাধ করেছে, এখন পশ্চিমারা দেখছে- এখানে ন্যায়ের বাজারদর বেশি। তাই ন্যায়ের পক্ষ নিলে তাদের লাভ। নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে তাদের হৃদয়ে নাকি লেগেছে শোকের ঢেউ। এ অজুহাতে সিরিয়াকে হামলা করে দুর্বল করে দিচ্ছে। এই সিরিয়ারই প্রতিবেশী দেশ ফিলিস্তিন। সেখানে পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট ইসরাইলি সেনারা আবারো নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের বুকে গুলি চালিয়েছে। এ মৃত্যুতে তাদের কোনো শোক নেই, তাদের হৃদয়ও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেনি। কারণ ওখানে ন্যায় লাভজনক নয়, অন্যায় লাভজনক!

নিরীহ মানুষের মৃত্যু নয়, ন্যায়-অন্যায় নয়, লাভ-ক্ষতির পাল্লায় নির্ধারিত হয় পশ্চিমাদের কর্মপন্থা। একটি প্রাণের চাইতে একটি বুলেটের মূল্য তাদের কাছে অনেক বেশি। সেই বুলেট তারা মুসলমানদের স্বার্থে ব্যবহার করবে এটা কেবল বোকাদের পক্ষেই ভাবা সম্ভব!
লেখক : সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement
অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান

সকল