২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৫৮, এপ্রিল শেষে নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা করোনা বিশ্বজুড়ে ছড়ানোর আশঙ্কা

-

পৃথিবীব্যাপী ৫৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৮৫৮ জনের। আক্রান্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৭৯ জন। অপর দিকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৬ হাজার ৪৩৬ জন। চীনের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এপ্রিলের শেষের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: ঝং নানশান বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে, এপ্রিলের শেষের দিকে মূলত এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসবে’।
তবে প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখনই কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নেয়া গেলে বিশ্বজুড়ে এর প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস গেব্রিয়েসাস।
ভাইরাসটি ‘নির্ণায়ক বিন্দুতে’ পৌঁছেছে এবং এর ‘মহামারী হয়ে ওঠার আশঙ্কা’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একের পর এক পদক্ষেপের মধ্যেই তেদ্রোস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারগুলোকে দ্রুত ও আরো জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নতুন এ পর্যায়ে ভাইরাসটি এখন চীনের বাইরের দেশগুলোতে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো চীনের চেয়ে দেশটির বাইরে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চীনের ভেতর ভাইরাসটিকে ‘বেঁধে রাখা’ সম্ভব না হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন চিকিৎসা উপকরণের মজুদ বাড়াচ্ছে; বিশ্লেষকরা বিশ্বজুড়ে নতুন অর্থনৈতিক মন্দারও আশঙ্কা করছেন।
গত কয়েক দিন ধরে ইরান ও ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ইরানের নারী ও পরিবারবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকারও আছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়াসহ অন্তত নতুন ১০টি দেশে ভাইরাসে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। তেদ্রোস বলেন, ‘(চীন ছাড়া) বাকি পৃথিবীতে যা ঘটছে, তা নিয়েই এখন আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এখন এমন এক সংবেদনশীল পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, সংক্রমণ পরিস্থিতি যে কোন দিকে যেতে পারে, নির্ভর করছে কিভাবে তা আমরা মোকাবেলা করব। ভাইরাসটির মহামারী হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। এখন আতঙ্কিত হওয়ার সময় নয়। এখন সময় সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও জীবন বাঁচানোর।’
ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের হুবেই থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ৮৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের বাকি সব মহাদেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চীনসহ প্রায় অর্ধশত দেশে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। বিশ্বে মৃতের সংখ্যা পেঁৗঁছেছে দুই হাজার ৮৫৮ জনে।
এ দিকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে ভ্রমণবিষয়ক নানান বিধিনিষেধ ব্যবসাবাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে শঙ্কায় বিভিন্ন শেয়ারবাজারের সূচক পড়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকংয়ের পাশাপাশি জাপান ও ইরাকও তাদের দেশের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে।
সৌদি আরব বিদেশী ওমরাহযাত্রীদের দেশে ঢোকায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত জুলাইয়ে দেশটিতে হজ করতে যাওয়া বিদেশীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। ইরান দেশের ভেতর মানুষের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে; তেহরান ও অন্যান্য শহরের জুমার নামাজও বাতিল করা হয়েছে। চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আসা সব বিদেশীর দেশে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
ভাইরাস এরই মধ্যে ইতালিতে ১৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। দেশটি তাদের ১১টি শহরকে ‘কোয়ারেন্টাইন’ করে রেখেছে। গ্রিস তাদের কার্নিভাল-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বাতিল করেছে। বৃহস্পতিবার দেশের ভেতর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন। এর মধ্যে ৪১ জনই হুবেই প্রদেশের। এ দিন আরো ৩২৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। তাদের নয়জন ছাড়া বাকিরা সবাই হুবেইয়ের। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭৮ হাজার ৮২৪ জনে। দক্ষিণ কোরিয়ায় আরো ২৫৬ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
চীনে আক্রান্তদের মধ্যে ৩৬ হাজার ১১৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলেও তথ্য দিয়েয়ে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে ইরানে ২৬ জন, ইতালিতে ১৭ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৩ জন, জাপানে আটজন, হংকং ও ফ্রান্সে দুইজন করে চারজন এবং ফিলিপিন্স ও তাইওয়ানে দুইজন; মোট ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement