করোনার প্রভাবে বিশ্ব শেয়ারবাজারে ধস
- রয়টার্স ও গার্ডিয়ান
- ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব। ২০০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দার পর গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারগুলোতে সবচেয়ে ভয়াবহ দরপতন ঘটেছে। তা ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কর্মীদের ব্যবসায়িক ভ্রমণ নিষিদ্ধ করতে শুরু করেছে ইউরোপের বড় বড় কোম্পানি। ফলে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সেখানকার অর্থনীতিতে।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আর সরবরাহ ব্যবস্থায় সঙ্কট দেখা দেয়ায় ধারণা করা হচ্ছে মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো জোন। বৃহস্পতিবার মার্কিন শেয়ারবাজারে সূচক পড়েছে ৪ শতাংশ। শুক্রবার পতনের হাত ধরেছে এশিয়ার শেয়ারবাজার। জাপানের শেয়ারবাজার নিক্কেইতে সূচকের পতন ঘটেছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। সিডনির এএসএক্স২০০ তে পতন হয়েছে ৩ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক হারিয়েছে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ আর হংকংয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে সাংহাই-৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
ভারতে শুক্রবার সকালে এক হাজার ১৪০ পয়েন্ট পড়ে যায় সেনসেক্স। পয়েন্ট অর্থাৎ ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ পড়ে ৩৮ দশমিক ৬০৫-এ নেমে যায় সেনসেক্সের সূচক। অপর দিকে নিফিটিতে ৩৪৮ পয়েন্ট অর্থাৎ ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ পড়ে সূচক গিয়ে পৌঁছায় ১১ হাজার ২৮৫-এ। মিৎশুবিশি ইউএফজে মরগান স্ট্যানলি সিকিউরিটিজের প্রধান বিনিয়োগ কৌঁসুলি নরিহিরো ফুজিতো বলেন, ‘এটা কতদিন অব্যাহত থাকবে এবং কতটা খারাপ পর্যায়ে যাবে তা কেউ বলতে পারছে না।’ শুক্রবার অপরিশোধিত তেলের দাম ২ দশমিক ২ শতাংশ কমে ব্যারলপ্রতি দাম হয়েছে ৫১ দশমিক ১ ডলার। মার্কিন ডলারের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার ডলার, ইন্দোনেশিয়ার রুপিয়া আর ভারতের রুপির কিছুটা দরপতন ঘটেছে। করোনাভাইরাসের উৎস দেশ চীনের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশটির সাথে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এর ফলে দেশটির রফতানি ও পর্যটন বাণিজ্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকস জানিয়েছে, চীনে নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণের হার কমে এলেও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটির প্রবৃদ্ধি কমে আসবে। দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে।
ভ্রমণ বন্ধ ইউরোপীয় কোম্পানির
তেমনি করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কর্মীদের ব্যবসায়িক ভ্রমণ নিষিদ্ধ করতে শুরু করেছে ইউরোপের বড় বড় কোম্পানিগুলো। ফলে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সেখানকার অর্থনীতিতে। বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নেসলে জানিয়েছে, তারা ২ লাখ ৯১ হাজার কর্মীকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিদেশ ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ক্ষেত্রে যেখানে সম্ভব বিকল্প ব্যবস্থা বা যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ সারতে হবে। এ ছাড়া, গত দুই সপ্তাহে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশে ভ্রমণ করা কর্মীদের অন্তত ১৪ দিন যদি সম্ভব হয় বাসায় থেকে কাজ করতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জনপ্রিয় কসমেটিক্স কোম্পানি লরিয়েল জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আগাম সতর্কতা হিসেবে তারা মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত কর্মীদের সব ব্যবসায়িক ভ্রমণ স্থাগিত করেছে। কনজুমার জায়ান্ট ইউনিলিভার বলছে, তারা ইতালিসহ ভাইরাস সংক্রমিত দেশগুলোতে যাওয়া-আসায় কর্মীদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শুধু ‘অতি জরুরি’ বাণিজ্যিক কাজে বিদেশ যেতে পারবেন বহুজাতিক এ প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।
করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে একই ব্যবস্থা নিয়েছে ইতালিয়ান ব্যাংক ইউনিক্রেডিট ও আমস্টারডামভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রোসাস। মার্কিন কৃষিপণ্য প্রতিষ্ঠান কারগিল জানিয়েছে, তারাও কর্মীদের অপ্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক ভ্রমণ বাতিল করেছে।
শুধু নেসলে, লরিয়েল ও ইউনিলিভারেরই বিশ্বজুড়ে অন্তত ৫ লাখ ৩২ হাজার কর্মী রয়েছে। যদি আরো কোম্পানি এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়, তবে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বিমান পরিচালনা শিল্প। এমনিতেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে চাপের মুখে রয়েছে তারা। অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল করে বিমান অলস বসিয়ে রেখেছে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন।
জার্মানির লুফথানসা ও এয়ারফ্রান্স কেএলএম গত সপ্তাহে ঘোষণা দিয়েছে, তারা কর্মীদের অবৈতনিক ছুটি নিতে বলেছে, পাশাপাশি নতুন কর্মী নিয়োগও বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য ‘ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ট্রেনিং কোর্স’ বাতিল করেছে লুফথানসা। এ ছাড়া যাত্রীচাহিদা কমে যাওয়ায় অন্তত ১৩টি বিমান বসিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। একই কারণে লন্ডন-মিলান চলাচলকারী ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন জানিয়েছে, তাদের লন্ডন ক্যানারি হোয়ার্ফ অফিসের এক কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে সেখানকার তিন শতাধিক কর্মী বাসায় বসে কাজ করছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা