২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজায় ইসরাইল-ইসলামিক জিহাদ যুদ্ধবিরতি

-

ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ গ্রুপ ও ইসরাইলের মধ্যে দুই দিনের তুমুল লড়াইয়ের পরে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চলছে। মিসর ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতার পরে সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় (২০:৩০ জিএমটি) এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। লেবাননভিত্তিক ইসলামিক জিহাদের সিনিয়র নেতা ইহসান আতায়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, গাজা উপত্যকায় সোমবার রাতের পর কোনো মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়নি। দুই দিনের লড়াই চলাকালে ইসরাইলি বিমানগুলো গাজা উপত্যকা লক্ষ্য করে কয়েক ডজন বিমান হামলা চালিয়েছে এবং ইসলামিক জিহাদ দক্ষিণ ইসরাইলে রকেটে বোমা নিক্ষেপ করেছে।
রোববার ইসরাইলি সেনারা দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় খান ইউনিসের পূর্ব দিকে অত্যন্ত সুরক্ষিত ইসরাইলি বসতিতে একটি বিস্ফোরক ডিভাইস লাগানোর অভিযোগে ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখার সদস্য মোহাম্মদ আল-নারসমকে গুলি করে হত্যা করার পরে সর্বশেষ উত্তেজনা শুরু হয়।
ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বুলডোজার দ্বারা পিষ্ট করে নির্মমভাবে নিহত আল-নারসমের লাশ তুলে নিচ্ছে ইসরাইলিরা এবং লাশটি ইসরাইলি সেনাদের সংরক্ষণে রয়েছে। সিরিয়ায় ইসলামিক জিহাদকে লক্ষ্য করে হামলা করেছিল ইসরাইল, যেখানে ইরান-সমর্থিত গ্রুপের কিছু নেতাও রয়েছেন। আর এই হামলা ইসরাইলকে লক্ষ্য করে রকেট ও মর্টার শেল ছুড়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্ররোচিত করেছিল ইসলামিক জিহাদকে। ইসরাইলের বিমান হামলায় ইসলামিক জিহাদের আরো দুইজন সদস্য নিহত হয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় ইসলামিক জিহাদ একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। তবে ইসরাইল গাজায় লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাওয়ায় কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ইসলামিক জিহাদ জানায়, ইসরাইল অব্যাহত আগ্রাসনের জন্য দায়ী। এজন্য তারা রকেটে বোমা হামলা আবার শুরু করে। এরপর ইসরাইলও বিমান হামলা চালায়, ইসরাইল-গাজার মূল সীমান্ত ক্রসিং ও মাছ ধরার একটি এলাকা বন্ধ করে দেয়।
ইসলামী জিহাদের আরেক মুখপাত্র আবু হামজা বলেন, ‘শত্রুরা আগ্রাসন বন্ধে নিজেদের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ইসলামী জিহাদের সশস্ত্র শাখার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আলকুদস ব্রিগেড ঘোষণা করেছে যে তারা খান ইউনিস ও দামেস্কে হত্যাকাণ্ডের অপরাধের বিষয়ে তার সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানো শেষ করেছে এবং আমাদের জনগণ ও আমাদের ভূমির দখলদারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে যে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগ পর্যন্ত ইসলামিক জিহাদ ৮০টি রকেট হামলা করেছিল, তবে ৯০ শতাংশেরও বেশি বাধাপ্রাপ্ত পেয়েছিল। গাজা সংলগ্ন ইসরাইলি অঞ্চলে স্কুল বন্ধ ছিল, রাস্তাঘাট বন্ধ ছিল এবং বাইরের জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞাগুলো বলবৎ রয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, মঙ্গলবারও এই নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকর থাকবে।
বুলডোজারে পিষে ফেলা ফিলিস্তিনির লাশ ফেরত চায় পরিবার
এ দিকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর বুলডোজারে নৃশংসতার শিকার হওয়া ফিলিস্তিনি যুবক মোহাম্মদ আলী আল নাইমের শোকাহত স্বজনেরা তার লাশ ফেরত চাচ্ছেন। পশ্চিম তীরের খান ইউনিসের বাড়িতে একজন বাবা-স্বামী-সন্তান হারানোয় সমবেদনা জানাতে ছুটে আসছেন অনেকে। ইসরাইলি নিপীড়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি তারা দাফনের জন্য দ্রুত মোহাম্মদের লাশ ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গত রোববার সকালে গাজার খান ইউনিস এলাকায় সীমান্ত বেষ্টনীর কাছে গুলি চালায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এতে নিহত হয় ২৭ বছরের ফিলিস্তিনি যুবক মোহাম্মদ আলী আল নাইম। স্থানীয় এক সাংবাদিকের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, গুলি করে হত্যার পর ওই যুবকের লাশ অন্যরা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে দ্রুত এগিয়ে আসতে থাকে ইসরাইলি বুলডোজার। এরপর লাশটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে থাকে। পরে সেটি নিয়ে যায় তারা।
মোহাম্মদের মা মিরভাত বলেন, তারা যেটা করেছে তা মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধ। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো তুলনা হয় না, সে আমার সবকিছু। সে ছিল কোমল হৃদয়ের, ধার্মিক ও খুবই নৈতিক। ভাবতে পারছি না সে আর নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই... শেষবারের মতো তাকে দেখতে পাওয়া আমার অধিকার। তার বিদায় জানাতে চাই আর আমার কাছে তাকে সমাহিত করতে চাই যেন সবসময় তাকে দেখতে পারি।’
মোহাম্মদের স্ত্রী হিবা (২৫) জানান, মাত্র দেড় বছর আগে বিয়ে হয়েছে তাদের। সন্তানের বয়স এক বছরেরও কম। তার স্বামী একজন প্রকৌশলী ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতেন মোহাম্মদ। স্বামীকে হত্যার সেই নৃশংস ভিডিওটি দেখতে চান না বলে জানান হিবা।


আরো সংবাদ



premium cement