২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ের পথে রণশীলরা

পশ্চিমাবিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এবারের জাতীয় নির্বাচনে
-

ইরানের পার্লামেন্টারি নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল অনুসারে বড় ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে রয়েছে রেভল্যুশনারি গার্ডসংশ্লিষ্ট রণশীলরা। জীবনমানের পতন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে জনগণের ােভ ও পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব শক্তিশালী হওয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এবারের জাতীয় নির্বাচনে।
পার্লামেন্টারি নির্বাচনে রণশীলদের সম্ভাব্য জয়ের মানে হবে প্রেসিডেন্সি বাদে দেশের মূল মতার নিয়ন্ত্রণে থাকছে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শক্তিশালী সমর্থকরাই। পশ্চিমের সাথে সদ্ভাব রাখার টিকিটে চার বছর আগে জয় পাওয়া ইরানের সংস্কারবাদীরা পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তাদের বহু প্রস্তাবেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে মতার কেন্দ্রে থাকা রণশীলরা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশটির ৫৫ হাজার ভোটকেন্দ্র বন্ধ করার সময়সীমা বারবার বাড়ানো হয়। ভোটারদের অংশগ্রহণের প্রবাহ মোকাবেলায় মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র খোলা রাখার দাবি করেছে সরকারপন্থী সূত্রগুলো। অন্য দিকে সরকারবিরোধীরা জানায়, ইরানের রাজনীতি নিয়ে মোহমুক্তি ঘটায় বেশকিছু বড় শহরে ভোট বর্জন করে ভোটাররা। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র খোলা রেখে পরিস্থিতির উন্নতি আশা করছিল সরকারি কর্মকর্তারা।
ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পার্লামেন্টের ২৯০ আসনের মধ্যে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীসহ রণশীলরা ৫৫ আসন পেয়েছে। নির্বাচনে রণশীলদের এগিয়ে থাকা মূলত দেশটির পশ্চিমাপন্থী রাজনীতিবিদদের বড় পতন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। মূলত ওয়াশিংটনের ২০১৫ সালে স্বারিত ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসা ও নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমের সাথে ইরানের সম্পর্ককে দুর্বল করেছে।
সংস্কারপন্থীদের প্রতি ােভ থাকলেও এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ আশানুরূপ দেখা যায়নি। অনানুষ্ঠানিক হিসাব অনুসারে, তেহরানে নির্বাচনে কেবল ২২ শতাংশ অংশগ্রহণ দেখা গেছে। এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ৪০ শতাংশের কাছে পৌঁছে, যা ২০১৬ সালের ৬২ শতাংশের চেয়ে কম।
কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ উজমা খামেনি তার দেশে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্যাপকভাবে ভোট দেয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে আসবে না বলে শত্রুরা যে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিল তা জনগণ ব্যর্থ করে দিয়েছে। তিনি ইরানের তি করার জন্য শত্রুদের চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্যও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ইরানের একদল আলেমের উচ্চ শিার কাস নেয়ার সময় এ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখার অপপ্রচার কয়েক মাস আগে থেকে শুরু হয়েছিল, যা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসে তীব্র আকার ধারণ করে। সেই সাথে নির্বাচনের দু’দিন আগে একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অজুহাতে এসব প্রচারযন্ত্র নির্বাচনকে তিগ্রস্ত করতে সর্বশেষ আঘাত হানার চেষ্টা করে। খামেনি বলেন, শত্রুরা ইরানি জনগণের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিপ্লবের সাথে শত্রুতা করেই ান্ত হয়নি সেই সাথে ইরানের নির্বাচনকেও টার্গেটে পরিণত করেছে, যাতে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে না পারে। ইসলাম স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিরোধী বলে শত্রুরা যে অপপ্রচার চালায় তা নাকচ করে দিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইরানে গত ৪১ বছরে ৩৭টি নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের এ অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে।
ভোটে অংশগ্রহণের হার কমাকে ইরানের রাজনীতির জন্য বড় প্রশ্ন বলে মনে করছেন অনেকে। তেহরান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাদেক জিবাকালাম বলেন, যখন বড় বড় শহরে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জনগণকে ভোট দান থেকে বিরত থাকতে দেখা যায় এবং এর মধ্যে সর্বাধিক প্রত্যাশিত প্রার্থীকে ৫০ শতাংশ ভোটে জয় পেতে দেখা যায়, সে মুহূর্তটি অভিনন্দন জানানো ও সম্মানের কি না তা ভেবে দেখার রয়েছে। তবে পার্লামেন্টের স্বতন্ত্র দলের সদস্য সাঈদ হাসান আলাবি বলেন, জীবনমানের পতন ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রোপটে নির্বাচনে এ অংশগ্রহণ খুব একটা মন্দ নয়। যখন অর্থ থাকে না, তখন কোনো আগ্রহও থাকে না আর এ সময় জনগণ নিজেকে বিচ্ছিন্নবোধ করে। সরকারকে এবারের নির্বাচন থেকে এ বার্তাই গ্রহণ করা উচিত।
এ দিকে ইরানে নভেল করোনাভাইরাস বিস্তারের প্রভাব দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রগুলোয়। রাজধানী তেহরানে বহু নাগরিককে মুখে মাস্ক পরে ভোট দিতে দেখা যায়। প্রাথমিক ফলাফলে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের শাসনামলের ১৪ জন সাবেক মন্ত্রিসভা সদস্যকে নির্বাচিত হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া আহমাদিনেজাদের সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরও জয় পেয়েছেন। উল্লেখ্য, আগামী বছর ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement