১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উইঘুর মুসলিম আটকের আরো তথ্য ফাঁস

-

দাড়ি রাখা, বোরকা পরা, বিদেশ যাত্রার ইচ্ছায় পাসপোর্টের আবেদন কিংবা শুধু ইন্টারনেটে বিদেশী ওয়েবসাইট ব্রাউজিংয়ের কারণে উইঘুরের অসংখ্য মুসলিমকে বিভিন্ন অন্তরীণ শিবিরে নিয়ে যায় বা আটকে রাখে চীন সরকার। ‘ফাঁস হওয়া’ নতুন এক নথিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। জিনজিয়াং প্রদেশের শিবিরগুলোতে লাখ লাখ মুসলমানের ভাগ্য কীভাবে নির্ধারিত হচ্ছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত তাদের দেখা নথিটিকে সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নথিতে চীনের দূর পশ্চিমাঞ্চল শিনজিয়াংয়ের তিন হাজারেরও বেশি বাসিন্দার ব্যক্তিগত ও তাদের দৈনন্দিন জীবনাচরণের বিস্তারিত তথ্য আছে।
১৩৭ পৃষ্ঠার এ নথিতে থাকা সারি ও কলামে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের প্রার্থনার সময়, ধরন, কীভাবে তারা পোশাক পরেন, কাদের সাথে যোগাযোগ করেন কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যদের আচরণ কেমন সেসবও লিপিবদ্ধ আছে। গত বছর জিনজিয়াং থেকে ফাঁস হওয়া অত্যন্ত সংবেদনশীল বিভিন্ন নথি যেভাবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমের কাছে এসেছিল, ঠিক একইভাবে কিছু মানুষের ব্যক্তিগত ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করেই এ নথিটিও ফাঁস হয়। কোনো সরকারি সিল বা চিহ্ন না থাকলেও নতুন এ নথিকে ‘আসল’ বলেই মনে করছেন জিনজিয়াংয়ে চীনের নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ওয়াশিংটন ভিত্তিক ভিক্টিমস অব কমিউনিজম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ ফেলো ড. আদ্রিয়ান জেনজ। তিনি বলেছেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের চর্চার কারণে বেইজিং যে নির্যাতন করছে ও শাস্তি দিচ্ছে অসাধারণ এ নথি তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ হাজির করেছে।
পশ্চিমা বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও দেশ দীর্ঘ দিন ধরেই উইঘুরের মুসলমানদের ওপর চীনের নির্যাতন ও নিপীড়ন নিয়ে অভিযোগ করে আসছে। বেইজিং শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদ মোকাবেলায় তারা জিনজিয়াংয়ে কিছু বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বানিয়েছে। নথিতে উল্লেখ করা ‘চার নম্বর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিকে শনাক্তও করতে পেরেছেন ড. জেনজ। গত বছরের মে মাসে চীনা কর্তৃপক্ষের আয়োজিত এক ভ্রমণে বিবিসির হয়ে যারা জিনজিয়াং গিয়েছিলেন, জেনজও তাদের মধ্যে ছিলেন। ফাঁস হওয়া নথির যেসব তথ্য বের করা গেছে, তার মধ্যে যেসব অংশে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সম্ভাবনা রয়েছে, প্রকাশের আগে সেসব আড়াল করে দেয়া হয়েছে।
নথিতে দক্ষিণ শিনজিয়াংয়ের হুতার শহরের নিকটবর্তী কারাকাক্স এলাকার ৩১১ জনের অতীত তথ্য, তাদের ধর্ম চর্চা এবং আত্মীয়, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের বিস্তারিত তথ্য আছে। অন্তরীণ শিবিরে থাকাদের রাখা হবে নাকি ছেড়ে দেয়া হবে এবং শিবির থেকে ছাড়া পাওয়াদের ফের নিয়ে আসা হবে কিনা, সে বিষয়ক সিদ্ধান্ত নথিটির একেবারে শেষ কলামে লেখা আছে। এসব কেন্দ্রকে চীন যে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে; নতুন এ নথির তথ্য তার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। নথির ৫৯৮ নম্বর সারিতে ৩৮ বছর বয়সী এক নারীর বিস্তারিত তথ্য আছে; কয়েক বছর আগে মুখমণ্ডল কাপড়ে ঢেকে চলাফেরার কারণে হেলসেম নামে ওই নারীকে চীনের এ তথাকথিত ‘পুনঃশিক্ষণ শিবিরে’ পাঠানো হয়েছিল।
‘বাস্তবিক অর্থে তেমন ঝুঁকি নেই’ এমনটা লেখা থাকা সত্ত্বেও ৩৪ বছর বয়সী মেমেত্তোতিকে অন্তরীণ করা হয়েছে কেবল পাসপোর্টের আবেদন করায়। বেইজিং কর্তৃপক্ষ যে এখন শিনজিয়াং থেকে বিদেশ যাত্রার আকাক্সক্ষাকেও ‘উগ্রবাদের লক্ষণ’ হিসেবে দেখছে, মেমেত্তোতিকে আটক তার নজির। কাউকে কাউকে শিবিরগুলোতে নেয়া হয়েছে ‘ঘন দাড়ি’ রাখায় কিংবা ধর্মীয় পাঠচক্র আয়োজনের কারণে । ২৩৯ নম্বর সারিতে থাকা নুরমেমেতকে পুনঃশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয় ‘ওয়েবলিংকে ক্লিক করে নিজের অজান্তে বিদেশী একটি ওয়েবসাইটে চলে যাওয়ায়’। ২৮ বছর বয়সী এ যুবকের আচরণে অন্য কোনো সমস্যা নেই বলেও তাকে নিয়ে থাকা সারি ও কলামগুলোতে লেখা রয়েছে।
১৭৯, ৩১৫ ও ৩৪৫ এ বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে ৬৫ বছর বয়সী ইউসুফের। তার রেকর্ডে লেখা রয়েছে-২০১৪ ও ২০১৫ সালে দুই মেয়ের নেকাব ও বোরকা পরা, ছেলের ইসলামী রাজনীতির প্রতি ঝোঁক এবং পরিবারের সদস্যদের ‘হানবিরোধী মনোভাবের’ কথা। রায়ের ঘরে লেখা রয়েছে- ‘প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখা’। ইউসুফের এ উদাহরণই বোঝাচ্ছে, কেবল নিজের আচরণ নয় এমন কী পরিবারের সদস্যদের যেকোনো ‘সন্দেহজনক’ আচরণের জন্যও উইঘুরের বাসিন্দাদের ‘শাস্তি পেতে হচ্ছে’।
২০১৭ সালের শুরুর দিকে ‘গ্রামভিত্তিক কাজের দল’ নামে পরিচিত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা জিনজিয়াংয়ের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোর মানুষের ধর্মবিশ্বাস, চর্চা, আচার-আচরণ নিয়ে যে জরিপ করেছিল, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করেই বাসিন্দাদের পরবর্তীতে অন্তরীণ শিবিরে নিয়ে আসা হয় বলে নথির তথ্য দেখে অনুমান করা হচ্ছে।
ওই জরিপে, কার ঘরে কতগুলো কুরআন, কাদের পোশাক কী রকম, কারা কত গভীরভাবে ধর্মচর্চা করেন সেসব তথ্য নেয়া হয়েছিল। এগুলোই পরে জিনজিয়াংয়ের নজরদারি ও পুলিশিং সংক্রান্ত ব্যাপকতর তথ্যভাণ্ডার ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশনর প্ল্যাটফর্মে (আজেওপি) জমা হয় বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল