১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন

লিবিয়ায় অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের পদক্ষেপ জোরদারে মতৈক্য

হাফতার বাহিনী তেলত্রে অবরোধ করে রাখায় আর্থিক সঙ্কট ও বাজেট ঘাটতির মুখে উত্তর আফ্রিকার দেশটি
লিবিয়া সংক্রান্ত ফলোআপ বৈঠকে উপস্থিত আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্যরা : এএফপি -

লিবিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ল্েয প্রায় এক ডজন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল রোববার জার্মানিতে মিলিত হয়েছিলেন। এর আগে দেশটিতে দীর্ঘকাল ধরে চলমান গৃহযুদ্ধের বিষয়ে আগ্রহী ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট দেশগুলো বারবার লঙ্ঘিত অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাকে সম্মান জানাতে এবং সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকরে সম্মত হয়।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে জার্মানি এবং জাতিসঙ্ঘ লিবিয়ায় যুদ্ধরত পগুলোর বাইরের সামরিক সমর্থন বন্ধ করার জন্য একটি অভিযান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করে। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘ক্রমবর্ধমান লড়াই এবং অস্ত্র সররাহের মাধ্যমে ১৯ জানুয়ারির বার্লিন সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের দ্বারা সংঘটিত চুক্তিটি বারবার লঙ্ঘন করা হয়েছে। মুয়াম্মার গাদ্দাফি মতাচ্যুত হওয়ার পর ২০১১ সাল থেকেই লিবিয়ায় অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে।’
এ দিকে লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রধান ফয়েজ আল-সেরাজ হুঁশিয়ারি করে বলেছেন, ‘তার প্রতিদ্বন্দ্বী খলিফা হাফতারের অনুগত বাহিনীর দ্বারা তেলত্রে অবরোধের কারণে ২০২০ সালে উত্তর আফ্রিকার দেশটি আর্থিক সঙ্কট ও বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হবে।’
১৮ জানুয়ারি থেকে অবরোধ শুরু হওয়ার পর লিবিয়ায় তেলের উৎপাদন দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। রাজধানী ত্রিপোলিতে আল-সেরাজ সাংবাদিকদের বলেন, অবরোধ অব্যাহত রাখার ফলে ‘বিপর্যয়কর’ আর্থিক সঙ্কট দেখা দেবে। তেলেেত্র অবরোধের কারণে লোকসান ১৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত ন্যাশনাল অয়েল করপোরেশন (এনওসি) গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন কমেছে গড়ে প্রতিদিন এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৪ ব্যারেল (বিপিডি)। তেল সম্পদ লিবিয়ায় জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস এবং অবরোধের আগে দেশটি প্রতিদিন ১২ লাখ ব্যারেল (বিপিডি) উৎপাদন করত।
রাজধানী নিয়ন্ত্রণের জন্য হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ) এবং আল-সেরাজ সরকারের জাতীয় অ্যাকর্ডের (জিএনএ) সাথে জোটবদ্ধ বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। এর আগে লিবিয়ায় রাজনৈতিক উপায়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ল্েয মস্কো ও বার্লিনে দুই দফা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উভয় সম্মেলন থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়া হাফতার লিবিয়ায় যুদ্ধবিরতি সমঝোতা লঙ্ঘন করে রাজধানী ত্রিপোলিতে সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এরই পরিপ্রেেিত ত্রিপলির আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকারকে সমর্থনের ল্েয দেশটিতে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে তুরস্ক। যদিও তুরস্ক বলেছে, সমুদ্রসীমা চিহ্নিত করার জন্য লিবিয়া সরকারের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। দুই দেশের অনুমোদন ছাড়া লিবিয়া ও তুরস্কের উপকূলবর্তী এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং পাইপলাইন নির্মাণের কাজ করা সম্ভব হবে না।
আঙ্কারা জানিয়েছে, চলতি বছরে ওই এলাকায় তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান শুরু হবে, এ জন্য শিগগিরই একটি গবেষণা জাহাজ পাঠানো হবে। এ ছাড়া লিবিয়ার বৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখা এবং সেখানকার স্থিতিশীলতা রার জন্য তুরস্ক লিবিয়ায় সেনা পাঠাচ্ছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ঐকমত্যের সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ)। ওই যুদ্ধে এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাধিক মানুষ। বিদেশী শক্তিগুলো থেকে লিবিয়ায় প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র গিয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি যাতে আর না বাড়ে, সে জন্য অস্ত্র রফতানিতে এখনই নিষেধাজ্ঞা আরওপ করতে সম্মত বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।

 


আরো সংবাদ



premium cement