২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে ৩৪ মার্কিন সেনা : পেন্টাগন ইরাকে ইরানের সাম্প্রতিক হামলা

-

ইরাকের একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে চলতি মাসে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪ সেনার মাথায় মারাত্মক আঘাত লেগেছে। গুরুতর আহত এসব সেনা মস্তিষ্কে আঘাতজনিত সমস্যার চিকিৎসাও নিয়েছেন। এতদিন পর শুক্রবার আঘাতজনিত মস্তিষ্কের ক্ষত (টিবিআই) ও কনকাসনে আক্রান্ত হওয়ার এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন।
পেন্টাগন মুখপাত্র জোনাথন হফম্যান সাংবাদিকদের বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা গেছে ৩৪ সেনা মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৭ জনকে চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল। আঘাতপ্রাপ্ত সেনাদের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য আটজনকে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াল্টার রিড (ওয়াশিংটনের কাছে সামরিক হাসপাতাল) কিংবা তাদের নিজস্ব ঘাঁটিতে এসব সেনার চিকিৎসা চলবে। ১৭ সেনা এখনো চিকিৎসকের সার্বিক পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষা বিভাগের এই মুখপাত্র বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে তাদের চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে। এ চিকিৎসা তারা ওয়াশিংটনের কাছের সামরিক হাসপাতাল ওয়াল্টার রিডে, না হয় তাদের নিজ শহরে থাকা বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে নিতে পারে। জার্মানিতে অপর ৯ জনের চিকিৎসা চলছে; আক্রান্ত সেনারা সেখানে চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকবে। ওই অঞ্চলে চিকিৎসা নিয়ে অপর ১৭ জন সেনা ইরাকে তাদের নিজেদের দায়িত্ব পালনে ফিরে গেছেন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে গত ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) কুদস বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিসহ ইরান ও ইরাকের ১০ সেনা কমান্ডারকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার ‘মারাত্মক প্রতিশোধ’ হিসেবে গত ৮ জানুয়ারি সকালে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে মার্কিন সামরিক বিমানঘাঁটি আইন আল-আসাদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। ইরাকে সবচেয়ে বড় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোর একটি আইন আল-আসাদে জোটবাহিনীর পাশাপাশি দেড় হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে। এ ছাড়া সেখানে কয়েক হাজার ইরাকি সেনাও রয়েছে।
সেই সময় ইরানের পক্ষ থেকে মার্কিন সেনা হতাহতের কথা বলা হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ইরানের হামলায় আমেরিকার কোনো নাগরিক নিহত হয়নি। মাত্র আটজন সেনা কিছুটা আহত হয়েছেন। ইরানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে বলেই তাদের আর পাল্টা হামলা করা হয়নি। যদি ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতো তাহলে ‘দাঁত ভাঙা জবাব দেয়া হতো’। তবে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর জানিয়েছিল, ওই হামলার কারণে আঘাতপ্রাপ্ত ১১ জন এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১১ সেনা আহতের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চলতি সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফোরামে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি শুনেছি তাদের মাথাব্যথা এবং অন্য কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে আমি এটা বলতে পারি যে, এগুলো ততটা গুরুতর সমস্যা নয়।’
পেন্টাগন অবশ্য নিশ্চিত করেছে, ইরাকে আইন আল আসাদ ঘাঁটিতে ইরানের ওই হামলায় কোনো মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হয়নি। তবে সামরিক কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ‘ইরাকে ১৬ সেনা এবং কুয়েতে এক সেনা চিকিৎসা নিয়েছেন। এই ১৭ জন চিকিৎসা শেষে স্বাভাবিক কাজে ফিরেছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী আহত সেনার সংখ্যা ১১ থেকে এক লাফে তিনগুণেরও বেশি হওয়ার পর পর্যবেক্ষকরা এখন ওই হামলায় হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে ইরানের ঘোষণাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।
ইরান ৮ জানুয়ারি ভোরে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর বলেছিল, তাদের হামলায় ৮০ মার্কিন সেনা নিহত এবং আরো ২০০ জন আহত হয়েছে। আহত সেনাদেরকে চিকিৎসা দিতে সি১৩০ বিমানে করে আইন আল-আসাদ ঘাঁটি থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ডবাহিনী বা আইআরজিসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন।
মার্কিন সেনা আহতের ঘটনা নিয়ে ট্রাম্প মিথ্যা বলায় তাকে অভিযুক্ত করেছেন দেশটির বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটদলীয় আইন প্রণেতারা। কংগ্রেস সদস্য ডেব্বি ওয়াসারম্যান সুলটজ বলেন, ট্রাম্প এই আহতের ঘটনাকে তুচ্ছ করে দেখেছেন। টিবিআই আক্রান্ত সেনাদের অর্ধেকের অস্ত্রোপচার দরকার পড়েছে। এতে তারা সারাজীবন প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে পারেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement