২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে রাষ্ট্রপতির সম্মতি

-

বিতর্কিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল-সিএবি, ২০১৯-এ সম্মতি দিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। পার্লামেন্টের দুই কক্ষের অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার রাতে ওই বিলে সম্মতি দেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত হয়েছে বিলটি। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে আইনটি কার্যকর হয়েছে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিষ্টানদের নাগরিকত্ব দিতে বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে ৩১১-৮০ ভোটে লোকসভার অনুমোদন পায় বিতর্কিত এই বিলটি। পরে বুধবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভারও অনুমোদন পায়। বিরোধী দলগুলো বিলটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ করলেও দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভিন্ন দাবিতে উত্তাল। আসাম-ত্রিপুরা, মেঘালয়ে শরণার্থীদের অবৈধ অভিবাসীর স্বীকৃতি বাতিল ও এই অঞ্চলকে সিএবি আওতামুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ করছে তারা।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের অবৈধ শরণার্থী হিসেবে গণ্য করা হবে না। তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার বলছে, এই আইনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষকে রক্ষা করা হবে। তবে বিরোধীদের দাবি, মুসলমানদের সুরক্ষার প্রশ্ন উপেক্ষিত থাকায় আইনটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে হেয় করেছে।
বিজেপি সরকার বলছে, নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হবে। ফলে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রমাণ করতে হবে যে, তারা ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা, প্রতিবেশী তিন দেশ থেকে সেখানে যাওয়া শরণার্থী নয়। তবে আইনে বর্ণিত অন্য ধর্মাবলম্বী শরণার্থীরা পাঁচ বছর সেখানে থাকার প্রমাণ দিয়েই নাগরিকত্ব পাবেন।
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে মোদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া বার্তা
এদিকে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাস হওয়ার পর মোদি সরকারকে কড়া বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। ওই বার্তায় ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় মোদি সরকারকে সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কিভাবে কার্যকর করা হয়, সে দিকে নজর রেখেছি আমরা। ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সবার সমানাধিকারই আমাদের দুই গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি। ভারতের কাছে মার্কিন সরকারের আহ্বান, সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে তারা যেন দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করে।’
শুরু থেকেই এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে মার্কিন কংগ্রেসের একটি অংশ। জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) পর দেশের সংখ্যালঘুকে নিশানা করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মোদি সরকার নাগরিক সংশোধনী বিল এনেছে বলে দাবি তাদের। তা নিয়ে সপ্তাহের শুরুতেই নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে সরব হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাসংক্রান্ত কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। তারা জানায়, নাগরিকত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় মানদণ্ড বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক। পার্লামেন্টের দুই কক্ষে বিলটি পাস হলে অমিত শাহ-সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো উচিত বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাছে সুপারিশও করে তারা।
সেই সময় ইউএসসিআইআরএফের সুপারিশকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি ভারত। বরং তাদের মন্তব্য পক্ষপাতদুষ্ট বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছিল নয়া দিল্লি। তার পরেই রাজ্যসভায় বিতর্কিত ওই বিলটি পাস করিয়ে নেয়া হয়। এরপরই শুক্রবার এই কড়া বার্তা দিলো ট্রাম্প প্রশাসন।

 


আরো সংবাদ



premium cement