হায়দরাবাদে ধর্ষণ-হত্যার চার আসামি পুলিশের গুলিতে নিহত
ভারতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া- বিবিসি ও এনডিটিভি
- ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ভারতের হায়দরাবাদ শহরে এক তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় আটক চার অভিযুক্ত পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। চার আসামিকে এ ভাবে হত্যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে গোটা ভারতে। অনেকে এটিকে ন্যায়বিচার বলে প্রশংসা করলেও আবার অনেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তেলেঙ্গানা পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশক জিতেন্দ্র বলেছেন শুক্রবার ভোর ৩টা নাগাদ হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা ঘটে। তিনি আরো জানান, কয়েকদিন জেল হেফাজতে থাকার পরে গত বুধবার ওই চারজনকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরে গতকাল শুক্রবার অভিযুক্তদের অপরাধ সংগঠন স্থলে, যেখানে ওই পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ করে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্দেহভাজনরা এক পুলিশ কর্মকর্তার বন্দুক চুরি করে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের গুলি করে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার ২৭ বছর বয়সী ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার তদন্তে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার অভিযোগে দেশটিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজনদের হত্যার খবর প্রকাশ হওয়ার পরে, ভুক্তভোগীর মা বলেছেন যে, ‘ন্যায়বিচার হয়েছে’। এই ঘটনা মানুষ আতশবাজি পুড়িয়ে উদযাপন করছে এবং কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পুলিশের প্রশংসা করছে। তবে পুলিশের এই তত্ত্ব মানবাধিকারকর্মীরা মানতে চাইছেন না। তারা এই সংঘর্ষের ঘটনাকে বানানো বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। হায়দারাবাদের পুলিশ কমিশনার ভিসি সাজনার বলেছেন, পুলিশ তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। তারা পুলিশ সদস্যদের বন্দুক ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি করে। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হন।
হায়দরাবাদে ওই পশু চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পুলিশকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল বিশেষত যখন ভুক্তভোগীর পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ আনে। ধর্ষণ ও হত্যার ওই ঘটনার পরে কয়েক হাজার মানুষ হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে হায়দরাবাদ থানার সামনে বিক্ষোভ করে। দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষোভ ও মিছিল হয়েছে। ভারতীয় আইনে ধর্ষণের শিকার নারীদের নাম ব্যবহার করা যায় না।
বিবিসি তেলেগুর দীপ্তি বাথিনী ভুক্তভোগীর পরিবারের বাড়িতে যান, যেখানে প্রতিবেশীদের এই ঘটনায় পটকা ফাটিয়ে এবং মিষ্টি বিতরণ করে উদযাপন করতে দেখা যায়। ভুক্তভোগীর মা বলেছেন, ‘আমি এই অনুভূতি ভাষায় বোঝাতে পারব না। আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে আবার দুঃখও লাগছে কারণ আমার মেয়ে তো আর ঘরে ফিরবে না।’ ভুক্তভোগীর বোন জানিয়েছেন, পুলিশের এই ভূমিকা ‘খুবই অপ্রত্যাশিত’। তিনি বলেছেন, ‘আমি আদালতের বিচারের প্রত্যাশা করছিলাম। এই ঘটনা আমার বোনকে ফিরিয়ে দেবে না, তবে এটি অনেক স্বস্তির।’
ব্যাপক প্রতিক্রিয়া
পুলিশের এমন পদক্ষেপের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে উদযাপন হয়েছে। অনেকে টুইটার এবং ফেসবুকে পুলিশের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন তারা ‘ন্যায়বিচার করেছেন’। ২০১২ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একটি বাসে গণধর্ষণে যে মেডিক্যাল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছিলেন, তার মাও অভিযুক্তদের এই হত্যার ঘটনার প্রশংসা করেন। হত্যার ঘটনাস্থল থেকে বিবিসির তেলুগু সংবাদদাতা সতীশ বল্লা বলেছেন, সেখানে প্রায় দুই হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে, যার ফলে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনগুলো মহাসড়কে স্থবির হয়ে আছে। সেখান থেকে মানুষ পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। এর আগে সাধারণ মানুষ পুলিশের ওপর গোলাপের পাপড়ি ছেটায় এবং মিষ্টি বিতরণ করেন।
কংগ্রেস, বিজেপিসহ নানা দলের নেতা-নেত্রী এবং অন্য রাজনীতিবিদরাও এই নির্মম গণধর্ষণ ও হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন এবং পুলিশের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সাইনা নেহওয়াল টুইট করে ‘সালাম’ জানিয়েছেন হায়দরাবাদ পুলিশকে।
তবে অনেকে এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এবং পুলিশের সংস্কারের মূল স্থপতি প্রকাশ সিং বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যেত। হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের যখন আদালতে বা অপরাধের জায়গায় নেয়া হয়, তখন প্রচুর সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। বিজেপি নেত্রী মানেকা গান্ধী এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি এই বন্দুকযুদ্ধের বিরোধিতা করি। বিচারের আগেই যদি গুলি করে অভিযুক্তকে মেরে দেয়া হয়, তাহলে আদালত, পুলিশ বা বিচার ব্যবস্থার দরকার কী?’
প্রশ্ন তুলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। তার কথায়, ‘মানুষ এই এনকাউন্টারের কারণে উৎসব পালন করছেন, কিন্তু এটা আমাদের বিচারব্যবস্থা নিয়ে একটা গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিলো। গোটা দেশের ভাবা দরকার যে ফৌজদারি বিচার বিভাগ আর তদন্ত বিভাগকে কী করে শক্তিশালী করা যায়।’ ভারতের সংসদেও এ নিয়ে বিতর্ক চলছে এখন। মানবাধিকার কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন পুলিশই যদি বিচার করে ফেলে, তাহলে আর আইন আদালতের প্রয়োজনটা কী! পুলিশ বলছে নিহতদের দেহের ময়নাতদন্ত যেমন করা হচ্ছে, তেমনই গোটা বন্দুকযুদ্ধের তদন্তও করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা