২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফ্রান্সে ইসলামভীতির বিরুদ্ধে পদযাত্রা

রাজনীতিবিদদের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত

ইসলামভীতির বিরুদ্ধে প্যারিসে পদযাত্রা হএএফপি -

কালেক্টিভ এগেইনস্ট ইসলামফোবিয়া ইন ফ্রান্স (সিসিআইএফ) নামে একটি সংগঠন গত রোববার প্যারিসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানাতে একটি পদযাত্রার আয়োজন করে। উগ্র ডানপন্থী এক সন্ত্রাসী দেশটির একটি মসজিদে গুলি চালিয়ে দু’জনকে গুরুতর আহত করার মাত্র দুই সপ্তাহ পরই এই পদযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হলো।
ওই হামলা ফ্রান্সে অস্থিরতা তৈরি করে। ইতোমধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ দেশটি ইসলাম পালনের বিষয়ে তিক্ত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের জিওন শহরে বাচ্চাকে নিয়ে স্কুল ট্রিপে যাচ্ছিলেন এক মহিলা। রাজনীতিবিদ জুলিয়েন ওদুল তার হিজাব খুলতে বলেন।
গত ১১ অক্টোবর এ ঘটনার কথা টুইট করেন ওদুল নিজে। ‘আমাদের প্রজাতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতির স্বপক্ষে আমি ওই মহিলাকে ইসলামি হিজাব খুলতে বলি। চারজন পুলিশকর্মীর হত্যার পর আমরা এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি সহ্য করব না।’ তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের কাছে অনেক সময় আছে, বাড়িতে বা রাস্তায় হিজাব পরার, কিন্তু এখানে নয়, আজ নয়।’
সিসিআইএফ বলেছে, জনপ্রতিনিধির দ্বারা জাতিগত বর্ণবৈষম্যমূলক সহিংসতার বিষয়ে ওই মহিলা প্রসিকিউটরদের কাছে অভিযোগ দায়ের করবেন। সিসিআইএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দেয়ার জন্য প্যারিসেও আরেকটি অভিযোগ দায়ের করা হবে।’
ওই মহিলার আইনজীবী সানা বেন হাডজ বলেছেন, তার মক্কেল ঘটনার দ্বারা ‘অপমানিত’ বোধ করেছেন কারণ তার ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আইনজীবী বলেন, ‘এটি কেবল ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন নয়, বর্ণবাদেরও প্রশ্ন এবং মুসলমানদের ফ্রান্স থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টার অংশ।’
‘ওই মহিলাকে ছাড়া স্কুল ভ্রমণটিও করা যেত না। কারণ অভিভাবক হিসেবে আর কোনো বাবা-মা ছিল না যারা ট্রিপে আসার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।’
ফ্রান্সে প্রকাশ্য স্থানে মুখ ঢাকা বোরখা পরা নিষিদ্ধ। প্রকাশ্য স্থানের মধ্যে পড়ে পাবলিক চলাচলের রাস্তা, যেসব স্থান জনগণের জন্য খোলা অথবা সরকারি পরিষেবা।
২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশ্যে মুখ ঢাকাকে বেআইনি ঘোষণা করে ফরাসি সিনেট। এ বিল পাস হয় ২৪৬-১ ভোটে। ভোট দেননি ১০০ জন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বিল পাশ হয় ৩৩৫-১ ভোটে। এই আইনের ফলে প্রকাশ্যে বোরকা এবং নিকাবের মতো মুখ ঢাকার পোশাক নিষিদ্ধ হয়। ধর্মীয় স্থানে প্রার্থনাকালীন অথবা গাড়িতে ভ্রমণকালীন সময়ে এ ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়েছে।
যেসব মহিলা এই আইন মানেন না, তাদের ১৫০ ইউরো জরিমানা দিতে হয়। যেসব পুরুষ নিজেদের স্ত্রীকে বোরকা পরতে বাধ্য করেন, তাদের এক বছর জেল ও ৩০ হাজার ইউরো জরিমানা হতে পারে। কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ককে বোরকা পরানো হলে এই জরিমানার পরিমাণ হয় ৬০ হাজার ইউরো এবং জেল দুই বছরের। এই আইন পর্যটকদের জন্যও প্রযোজ্য। মানবাধিকারের ইউরোপীয় আদালত এই নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। এই আইন কার্যকর হওয়ার আগে, ২০০৪ সালে ফ্রান্স মাথার আচ্ছাদনী এবং স্পষ্টত ধর্মীয় চিহ্ন ধারণের ব্যাপারে সরকারি স্কুলগুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষিদ্ধ হয় পাগড়ি, ফেজ এবং ক্রস। ২০১০ আইন পাস হওয়ার আগে দুই দশক এ নিয়ে বিতর্ক চলছিল।


আরো সংবাদ



premium cement