১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উপসাগরের নিরাপত্তায় মার্কিন জোটের টহল শুরু উপসাগরীয় অঞ্চলে তেল ও পণ্যবাহী জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ টহল বলছে যুক্তরাষ্ট্র

-

ইরানের সাথে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যেই পারস্য উপসাগরে ‘অপারেশন সেন্টিনেল’ নামে আনুষ্ঠানিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নৌ জোট। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তেল ও পণ্যবাহী জাহাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই অভিযানটি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বাহরাইন থেকে এই অভিযান শুরু হয়।
সম্প্রতি পারস্য উপসাগরে বিভিন্ন নৌযানে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। পরবর্তীকালে এমন কোনো হামলা যেন না হয় তা নিশ্চিত করতেই অভিযান শুরু করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই নৌ-জোটটি বৈশ্বিক তেল সরবরাহ নির্বিঘœ করতে চায়। গত জুন থেকে বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করছিল তারা। অবশেষে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান শুরু হলো। অবশ্য পারস্য উপসাগরে বিভিন্ন হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দায়ী করলেও তেহরান তা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানও পারস্য উপসাগরে নিরাপত্তা বাড়াতে চায়। তবে এজন্য বাইরের কোনো শক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে নারাজ দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই নৌ-জোটে বাহরাইন যোগ দেয় আগস্টে। মূলত তারাই মার্কিন পঞ্চম নৌ বহরকে স্বাগত জানিয়েছে। এরপর সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এতে যোগ দেয়। অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যও পারস্য উপসাগরকে সুরক্ষিত করতে যুদ্ধজাহাজ পাঠাতে সম্মত হয়েছে। সর্বশেষ এই জোটে যোগ দিয়েছে আলবেনিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযানের মাধ্যমে মূলত গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারী রুট হরমুজ প্রণালির সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে যেন মধ্যপ্রাচ্যের তেল পরিবহনে কোনো সমস্যা দেখা না দেয়। কারণ হরমুজ প্রণালির নিয়ন্ত্রণ মূলত ইরানের বিপ্লবী গর্ডের হাতে।
বেশ কিছু দিন ধরেই ভারত মহাসাগর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে সুয়েজ খালের মাধ্যমে সংযোগস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথ ‘রেড সি শিপিং এরিয়ায়’ উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নৌবাহিনীর কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল জিম মলয় বলেছেন, অপারেশন সেন্টিনেল একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা যার লক্ষ্য উপসাগরীয় পানিপথের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আইএমএসসির কমান্ড সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সেন্টিনেলের অপারেশনাল ডিজাইন হুমকি-ভিত্তিক হলেও এটি হুমকি দেয় না।’
ইরানের সাথে ২০১৫ সালের পরমাণু সমঝোতা ভেঙে পড়ার ভয়ে বেশির ভাগ ইউরোপীয় সরকার নৌ-জোটে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। গত বছর ওয়াশিংটন এ চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ফলে বিশ্বব্যাপী এর খারাপ প্রভাব পড়ে।
চলতি বছরের মে ও জুনে পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা হয়। গত ১৪ মে সৌদি আরবের আরামকো তেল কোম্পানির দুটি অয়েল পাম্পিং স্টেশনে ড্রোন হামলা চালানো হয়। ইয়েমেনের ইরানপন্থী হাউছি গোষ্ঠী ওই হামলার দায় স্বীকার করে। হাউছিদের এ হামলার নির্দেশ তেহরান দিয়েছে বলে অভিযোগ রিয়াদের।
এরপর অক্টোবরে জেদ্দা সমুদ্র বন্দরের কাছে ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানির (এনআইওসি) একটি তেলের ট্যাংকারে দুইবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে দাবি করে ইরান। এসব হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যেই সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুরোধে উপসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দেয়।
তবে এই পানিসীমায় বাইরের দেশগুলোর কর্তৃত্ব আরোপের প্রচেষ্টা ইতিবাচকভাবে নেবে না ইরান। ইরাক-ইরান যুদ্ধের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, ‘উপসাগরে বিদেশী সেনা মোতায়েন হলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় হুমকি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ রুহানি বলেন, ‘বিদেশী সেনারা সবসময়েই ‘যন্ত্রণা ও দুর্ভোগ’ বয়ে এনেছে। উপসাগরীয় অঞ্চলকে তাদের ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতায়’ ব্যবহৃত হতে দেয়া উচিত হবে না।’ যুক্তরাষ্ট্র হরমুজ প্রণালিকে ঘিরে রাখলে তেহরান অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়বে। এ কারণে পারস্য উপসাগরে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনে ইরান যুদ্ধে জড়াবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে দেশটির ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার পর থেকেই ওয়াশিংটন-তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement