১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাবরি মসজিদ মামলার রায়ের আগে অযোধ্যায় নিরাপত্তা জোরদার

-

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে অযোধ্যায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অযোধ্যা ‘খাকি সমুদ্রে’ পরিণত হয়েছে। সম্পূর্ণ উত্তরপ্রদেশ পুলিশে পুলিশে ভরে গেছে। রাম জন্মভূমি, বাবরি মসজিদ, হণুমান মন্দির, বাস, গাড়ি, শহরের প্রতিটি কোনায় কোনায় মোতায়েন করা হয়েছে উর্দিধারী পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ)।
আগামী ১৭ নভেম্বরের মধ্যে বাবরি মসজিদের রায় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, ওই দিন ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর মেয়াদ শেষ হবে। ২০১০ সালে অযোধ্যা মামলার শুনানিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে রায় দেয়, তাতে ২.৭৭ একরের ওই জমি সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড, হিন্দু মহাসভার রাম লাল্লা সংগঠন এবং নির্মোহী আখড়া সম্প্রদায়ের মধ্যে তিন ভাগে ভাগ করে দিতে বলা হয়; কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অপিল হয়।
বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়ে কোনো বিতর্কিত মন্তব্য না করতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার দিল্লিতে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে মোদি এমনই নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে শান্তি বজায় রাখারও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি দেশে এই মুহূর্তে মৈত্রী ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অযোধ্যা মামলার বিষয়টি নিয়ে সবাইকে এই বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দেশে সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। বিজয় এবং পরাজয়ের দাঁড়িপাল্লায় এই রায়টিকে দেখা উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেন নরেন্দ্র মোদি।
মসজিদ ছিল এবং থাকবে; কিন্তু সুপ্রিম রায় মেনে নেব : মাদানি
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ছিল এবং থাকবে, এমন মন্তব্য করে জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দের প্রেসিডেন্ট আরশাদ মাদানি বলেছেন, বাবরি মসজিদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দেবে তা আমরা মেনে নেব। অযোধ্যা মামলায় মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া কেন ভেঙে গেল, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা রাম চরুতরাকে মেনে নিয়েছিলাম; কিন্তু হিন্দুপক্ষরা তাদের দাবি থেকে সরেনি। যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল, যেখানে মুসলমানরা এবাদত করতেন, সেই তিনটি গম্বুজ ও এটার সামনের ময়দানের দাবি ছাড়তে নারাজ ছিল হিন্দুপক্ষ। ভারতীয় ওয়াক্ফ আইন অনুযায়ী এই দাবি মানা যায় না। কারণ শরিয়া আইন অনুযায়ী, এটা মসজিদ ছিল। যাই হোক, হিন্দুপক্ষ তাদের দাবি থেকে সরেনি। ফলে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনো অপশন নেই।
উল্লেখ্য, মোগল সম্রাট বাবরের নামের ষোড়শ শতকের মসজিদটি ১৯৯২ সালে হিন্দুরা ওই জায়গায় একত্র হয়ে ধ্বংস করে দেয়। এ নিয়ে পরবর্তী দাঙ্গায় দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এই মসজিদ নিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিতর্কে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। মুসলমানরা সেখানে নতুন একটি মসজিদ গড়তে চান। হিন্দুদের দাবি, সেখানে তাদের দেবতা রামের জন্ম হয়েছিল। কাজেই তারা সেখানে রামমন্দির নির্মাণ করতে চান; কিন্তু হিন্দুরা তাদের দাবির পক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করতে পারেনি।
১৫২৬ সালে মোগল সম্রাট বাবরের নামে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন তার আঞ্চলিক শাসক মীর বাকী। ১৮৮৫ সালে মসজিদ প্রাঙ্গণে হিন্দুরা তাদের দেবতা রামের সম্মানে একটি মন্দির নির্মাণের অনুমতি চাইলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। ১৯৪৯ সালে একদল হিন্দু মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে রামের একটি মূর্তি স্থাপন করে; কিন্তু সেটি না সরিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। এ ছাড়া একজন হিন্দুধর্মীয় গুরুকে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৯৮৬ সালে ফয়জাবাদ জেলা প্রশাসন মসজিদ প্রাঙ্গণ হিন্দুদের ধর্মীয় আচার পালনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এর পর ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশ শান্তই ছিল; কিন্তু ওই বছর বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপিসহ বিভিন্ন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মসজিদটি ধ্বংস করে দেয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement