২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লেবাননে জোট সরকারের ৪ মন্ত্রীর পদত্যাগ, বিক্ষোভ অব্যাহত

সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা হিজবুল্লাহর
-

গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে লেবাননের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। গতকাল রোববার চতুর্থ দিনের মতো লেবাননীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে। পদত্যাগ করেছেন সরকারের চার মন্ত্রী। সঙ্কট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি গত শনিবার ৭২ ঘণ্টা সময় চাওয়ার পরও গতকাল বিক্ষোভাকারীরা রাস্তায় নেমে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেয়।
দেশজুড়ে উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে লেবাননের জোট সরকারে ফাটল দেখা দিয়েছে। জোট সরকারের মন্ত্রিসভা ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির দীর্ঘ দিনের মিত্র খ্রিষ্টান ডানপন্থী দল লেবানিজ ফোর্সেস পার্টি। গত শনিবার গণবিক্ষোভের কারণে পদত্যাগ করেন লেবানিজ ফোর্সেস পার্টির চার মন্ত্রী। পদত্যাগের পর শ্রমমন্ত্রী ক্যামিল আবসলেইমন বলেন, সমস্যা নিরসনে সরকারের সক্ষমতার বিষয়ে তারা আস্থা হারিয়ে ফেলার পরই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলটির অপর এক নেতা সামির গাগিয়া বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। লেবাননে তার ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী সশস্ত্র দলটির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। দেশটির বর্তমান জোট সরকারের অংশীদার হিজবুল্লাহ নেতা বলেন, তার দল সরকারের পদত্যাগের বিরুদ্ধে। গত শনিবার এক সমাবেশে দেয়া ভাষণে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ঋণের দায়ে জর্জরিত লেবাননের নাগরিকরা কর ও মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, লেবাননের সরকারের প্রায় ৮৬০ কোটি বিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে যা মোট দেশজ উৎপাদনের ১৫০ শতাংশেরও বেশি।
হোয়াটসঅ্যাপ এবং একই ধরনের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসগুলোতে কর আরোপ প্রস্তাবের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিক্ষোভে নামে লেবাননিরা। পরে এ বিক্ষোভ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা এ ধরনের কর আরোপের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং জীবনমানের অবনতির জন্য প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আওয়াজ তোলেন। বিক্ষোভকারীরা লেবাননের পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং পার্লামেন্ট ভবন সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় তারা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেয়। শুধু প্রধানমন্ত্রীর দফতরই নয়; তার আবাসিক ভবনের বাইরেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক বছরেরও কম সময় আগে ক্ষমতায় আসা হারিরির জোট সরকারের জন্য এ বিক্ষোভকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজধানী বৈরুত থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক জেইনা খোদর বলেছেন, ‘চতুর্থ দিনের মতো প্রতিবাদকারীরা আবার রাস্তায় ফিরে এসেছেন এবং এটি কেবল রাজধানীতে নয়, দেশজুড়ে একই অবস্থা। তারা (প্রতিবাদকারীরা) যে বার্তা দিচ্ছে তা হলো, যেকোনো উপায়েই সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।’
সরকারের পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, এতে শুধু সময় নষ্ট হবে ও নতুন সরকার গঠনে এক থেকে দুই বছর সময় লেগে যাবে। তারাই সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে; যারা লেবাননের সঙ্কট সমাধান না করে বরং দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায়। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ সম্পর্কে তিনি বলেন, লোকজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। এখানে বিদেশী কোনো হস্তক্ষেপ বা প্রভাব ছিল না। তবে বিক্ষোভের সুযোগ যাতে কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement