২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নাগরিক অসহযোগ অন্দোলনে কাশ্মিরিরা

দোকান-স্কুল বন্ধ
-

ভারত সরকার ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরের মানুষের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করেছে। এর প্রতিবাদে কাশ্মিরের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মাত্র দুই ঘণ্টার জন্য তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখে।
ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, স্কুল ও নাগরিক কর্মকাণ্ড প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে থাকায় সরকার বাধ্য হয়েই স্থানীয় পত্রিকায় পূর্ণ পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যেখানে নাগরিকদের প্রতি দোকানপাট খোলা ও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপনের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘বন্ধ দোকান, নেই সরকারি যানবাহন, কার লাভ হচ্ছে?’ এতে মানুষকে তাদের পছন্দ বেছে নিতে বলা হয়েছে। তবে, এতে মানুষের মধ্যে খুব সামান্যই প্রভাব ফেলেছে, এবং মানুষ তাদের ‘অসহযোগিতার মাধ্যমে’ প্রতিবাদ বজায় রেখেছে। শাবির আহমদনামে এক ব্যবসায়ী প্রতিদিন তার দোকান মাত্র দুই ঘণ্টা খোলা রাখার পর সকাল সাড়ে ৯টায় বন্ধ করে দেন। ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মিরের স্বায়ত্ত শাসন বাতিলের পর এর প্রতিবাদে ‘নাগরিক অসহযোগিতা আন্দোলনের’ অংশ হিসেবে এই কাজ করছেন তিনি। শাবির তার দোকানে পর্দা ও বিছানার চাদর বিক্রি করেন। বিগত চার দিনে তার একটি পয়সারও পণ্য বিক্রি হয়নি। কিন্তু ৬০ বছর বয়সী এই দোকানদার তার ‘নীরব প্রতিবাদের’ ওপরও জোর দিচ্ছেন বেশি। তিনি বিশ্বাস করেন, ব্যবসায়ীদের এই প্রতিবাদ তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জীবন এখন শেষ হয়ে গেছে। আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভয় পাই’। তার দোকানটি পুরনো শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থল নওহাট্টাতে অবস্থিত, যেটা তরুণ কাশ্মিরি আর ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সঙ্ঘাতের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। ‘আমাদের প্রতিবাদের সব উপায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং এই একটা উপায়ই শুধু অবশিষ্ট আছে’। শাবির বলেন, ৫ আগস্ট থেকে সব মিলিয়ে ১০০ ডলারের মতো রোজগার করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তার দোকানের পাশেই ৪৫ বছর বয়স্ক জালিস আহমেদের মোবাইলের দোকান। মোবাইল সার্ভিস বন্ধ থাকায় এই পুরো সময়টাতে তার কিছুই বিক্রি হয়নি।
কাশ্মিরে প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করল পুলিশ
এ দিকে এনডিটিভি জানায়, কোনোরকমের প্রতিবাদ-আন্দোলন বর্তমান পরিস্থিতিতে কাশ্মিরে বরদাশত করা হবে না বলে জানালেন সেখানকার পুলিশ প্রধান দিলবাগ সিং। কাশ্মিরে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভও চলবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। এই ধরনের প্রতিবাদ-আন্দোলন থেকে অশান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। গত মঙ্গলবার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভ করায় শ্রীনগর থেকে জম্মু-কাশ্মিরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার বোন সুরিয়া আবদুল্লাহ ও মেয়ে সাফিয়া আবদুল্লাহ খান এবং প্রাক্তন মুখ্য বিচারপতি বাশির আহমদ খানের স্ত্রী হাওয়া বাশিরসহ বেশ কয়েকজন নারীকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যক্তিগত জামিনে গত বৃহস্পতিবার মুক্তি দেয়া হয় তাদের।
দিলবাগ সিং জানিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মিরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেরাতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। অবস্থান বিক্ষোভের প্ল্যাকার্ড থেকেও অশান্তি ছড়িয়ে পড়তেই পারে। তাই কাশ্মিরের ওপর থেকে নিরাপত্তার কড়াকড়ি তুলে না নেয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু থাকবে।
জেকেএলএফের সাবেক প্রধানকে গ্রেফতার
তা ছাড়া ইন্ডিয়া টাইমস জানায়, জম্মু-কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্টের (জেকেএলএফ) সাবেক প্রধান কমান্ডার জাভেদ আহমদ মিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় তিন দশক আগে শ্রীনগরের রাওয়ালপোরায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর চার অফিসার খুনের মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের একটি দল। মালিক বর্তমানে নয়াদিল্লির তিহাড় জেলে বন্দী রয়েছেন।
মিরের বয়স এখন ৫৪ বছর। শ্রীনগরের জামালতলা অঞ্চলের বাড়ি থেকে গত বুধবার তাকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে পরে তাকে জম্মুতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জম্মুর সিবিআই কোর্টে তাকে পেশ করা হলে, বিচারক মিরকে জামিনে মুক্তি দেন। ১৯৯০ সালের ২৫ জানুয়ারি রাওয়ালপোরায় আইএএফের চার অফিসার গুলিতে নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডারও। পুলিশের ধারণা, সন্ত্রাসবাদীরাই গুলি করে হত্যা করে অফিসারদের। শ্রীনগরের এয়ারড্রোমে পৌঁছতে ওই চার অফিসার বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেইসময় অতর্কিতে এই হামলা হয়েছিল। ওই হামলায় নারীসহহ আরো ৪০ জন গুরুতর জখম হয়েছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement