২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উত্তর সিরিয়া থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র

-

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ‘নিরাপদ সিরীয় অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠায় কোনো পদক্ষেপ নেবে না। সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইক এস্পার শুক্রবার বলেছেন, তার দেশের সেনারা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সেফ জোন প্রতিষ্ঠায় অংশ নেবে না। এর সাথে ওই এলাকা থেকে ধারাবাহিকভাবে সেনা প্রত্যাহারও অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
৯ অক্টোবর তুরস্কের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকে সিরিয়ার কুর্দি বিদ্রোহীদের উৎখাতে অভিযান শুরু করে তুরস্ক। তুরস্ক সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর ওই অঞ্চল থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আঙ্কারা বলছে, তুরস্কে আশ্রয় নেয়া ২০ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে পুনর্বাসনের জন্য সেখানে তারা একটি সেফ জোন গড়ে তুলতে চায়। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে তুরস্কে পাঠানোর ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাদের সাথে বৈঠকের পর পেন্স জানান, পাঁচ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে তুরস্ক।
শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান জানান, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলজুড়ে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ পোস্ট নির্মাণ করবেন তারা। এ ছাড়া সেফ জোনের আকারও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি। এই সেফ জোনে টহল দেবে তুরস্কের সেনাবাহিনী। আঙ্কারা চায় ফোরাত নদী থেকে ইরাক সীমান্ত পর্যন্ত পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ। গত কয়েক দিনের অভিযানের পর এই এলাকার এক চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তুর্কি বাহিনীর হাতে। বাকি এলাকার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনী বা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এমন প্রেক্ষাপটে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইক এস্পার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাঠপর্যায়ের কোনো সেনা সেফ জোন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে না। তারা তুরস্ক ও কুর্দি বাহিনী উভয়ের সাথে যোগাযোগ রাখবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আইএসবিরোধী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও ব্রাসেলস সফর করবেন। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে শুক্রবার কথা বলেছেন জানিয়ে এস্পার বলেন, আঙ্কারার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তবে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা মিচ ম্যাককনেল সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা এক নিবন্ধে তিনি মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার সাথে সাথে সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযানকে ‘কৌশলগত দুঃস্বপ্ন’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন। এর আগে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুরস্ক-সিরিয়ার এখনকার সীমান্ত পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘কৌশলগতভাবে অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা নিবন্ধে ম্যাককনেল বলেছেন, সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘বড় ধরনের কৌশলগত ভুল’। মার্কিন সেনাদের ‘পলায়ন’ ওই অঞ্চলে রাশিয়া ও ইরানের প্রভাব বৃদ্ধিতে সুযোগ করে দেবে বলেও মত তার। কেন্টাকির এই সিনেটর তুরস্কের বিরুদ্ধে সামরিক-অর্থনৈতিক সব ধরনের চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশটিকে ‘বশে রাখা’র পাশাপাশি সিরিয়ায় ‘স্বল্প মাত্রায় মার্কিন সেনা উপস্থিতি’ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির হুমকি’ নিয়ে মিত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রভাবশালী এ রিপাবলিকান অবশ্য তার নিবন্ধের কোথাও ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করেননি। ম্যাককনেলের পাশাপাশি ট্রাম্প সমর্থক বলে খ্যাত রিপাবলিকান লিন্ডসে গ্রাহামও সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একহাত নিয়েছেন। তুরস্ক সিরিয়ায় ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞে’ মেতেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। ট্রাম্প অবশ্য এসব সমালোচনাকে মোটেও পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, ‘সীমান্তে তাদের সমস্যা আছে। ওই সীমান্ত আমাদের নয়। সেখানে আমাদের প্রাণ বিসর্জন দেয়াও উচিত হবে না, বলেছেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement