১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নতুন ব্রেক্সিট চুক্তিতে ইইউ-ব্রিটেন সমঝোতা

সমঝোতার পর সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করমর্দন :ইন্টারনেট -

দীর্ঘ টানাপড়েন আর অনিশ্চয়তার পর ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে ব্রিটেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতাদের এক বৈঠকের আগে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা চুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইট বার্তায় সেই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে শুরু হয়েছে ইইউ নেতাদের সম্মেলন। সম্মেলনকে সামনে রেখে চুক্তির খসড়া তৈরিতে আলোচনা শুরু করে দুই পক্ষ। সেখানেই দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা চুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইট বার্তায় সেই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা দুর্দান্ত একটা সমঝোতায় আমরা পৌঁছেছি, পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণও ফিরেছে।’ অপর এক টুইটবার্তায় জঁ-ক্লদ জাঙ্কার বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলেই চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব-আমরা সেটা পারব। এটা ব্রিটেন ও ইইউ-এর মধ্যে একটি স্বচ্ছ ও ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতা। সঙ্কট উত্তরণের পথ খোঁজার ক্ষেত্রে এটা আমাদের শ্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। চুক্তি অনুমোদনে তৎপর হতে আমি ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের কাছে সুপারিশ করছি।’
দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা এখন ওই আইনি দিকগুলো নিয়ে কাজ করছেন। তবে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার আগে তাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। ৩১ অক্টোবরে প্রক্রিয়ামাফিক ব্রেক্সিট শেষ করার পথ সুগম করতে শনিবারই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে চুক্তির বিষয়ে অনুমোদন পাওয়ার আশা করছেন জনসন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার এক চিঠিতে বলেছেন, ইইউর ২৭ সদস্যরাষ্ট্রকে চুক্তিতে অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ করবেন তিনি। কারণ তিনি বলেন, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার শেষ সময় এখনই।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে চলতি বছরের গত মে মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি সরে দাঁড়ানোর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসন। নির্বাচিত হওয়ার পর আগামী ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটেরও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত কয়েক দিন প্রায় বিরতিহীন আলোচনা চালিয়ে পরিবর্তিত ব্রেক্সিট চুক্তির একটি খসড়া সম্পর্কে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। কিন্তু এ যাত্রায় ইইউ আগের তুলনায় সতর্ক হয়ে উঠেছে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-ও ইইউর সাথে বিচ্ছেদ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। তা সত্ত্বেও তিন-তিনবার তিনি পার্লামেন্টে তা অনুমোদন করতে ব্যর্থ হন। বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রিটেনের পার্লামেন্টে সর্বশেষ বোঝাপড়ার লক্ষ্যে যথেষ্ট সমর্থন আদায় করতে পারবেন কিনা, তাও এখনো স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে উত্তর আয়ারল্যান্ডে সরকারি জোটের শরিক দল নতুন চুক্তির বিরোধিতা করছে। দেশ হিসেবে ব্রিটেন এই চুক্তি মেনে নিলে তবেই ইইউ আনুষ্ঠানিকভাবে এই সমঝোতা মেনে নিতে প্রস্তুত। তবে কিছু সূত্র অনুযায়ী, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কয়েকটি বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়নি। ইউরোপীয় সরকারগুলোর পরিষদের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক আগেই জানিয়েছিলেন যে নীতিগতভাবে চুক্তির মৌলিক ভিত্তি প্রস্তুত হয়ে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ব্রাসেলসে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা ব্রেক্সিট চুক্তি স্বাক্ষর করবেন কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ব্রিটেনের সরকার ও পার্লামেন্ট চুক্তি অনুমোদন করলে চলতি মাসে আরেকটি জরুরি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে ইইউ নেতারা চূড়ান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। শনিবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিশেষ জরুরি অধিবেশনে নতুন ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে সমর্থনের মাত্রা স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সব পক্ষ সম্মতি জানালেও ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করার জন্য যথেষ্ট সময় আর নেই বলে ইইউ কর্মকর্তারা মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে শুধু প্রক্রিয়াগত কারণে এই তারিখ কিছুকাল পিছিয়ে দেয়া হতে পারে। ইউরোপীয় কমিশনের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ ক্লদ জাঙ্কার রসিকতা করে বলেন, ‘সবাই ইংরেজি বোঝে, কিন্তু কেউ ইংল্যান্ডকে বোঝে না।’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরিস জনসন আগেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। ইইউর সাথে বিচ্ছেদ চুক্তির আওতায় উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশকে ব্রিটেন থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করতে চাইলে তিনি বিরোধী ও বিদ্রোহী পক্ষের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়বেন। তবে কিছু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, জনসন ইইউ-পন্থী ও কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীদের সাবধান করে দিতে পারেন। এই চুক্তি মেনে না নিলে তিনি প্রথম দলকে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ভয় দেখাতে পারেন। দ্বিতীয় দলকে বলতে পারেন, এখনই চুক্তি মেনে না নিলে ব্রেক্সিটের স্বপ্ন পুরোপুরি বানচাল হয়ে যেতে পারে। নতুন নির্বাচন অথবা ব্রেক্সিটের প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজিত হলে ভোটাররা ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে রায় দিতে পারেন। উল্লেখ্য, লেবার পার্টির নেতা জেরেমি কর্বিন দ্বিতীয় গণভোটের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ইইউ ও বরিস জনসনের সমাধানসূত্রের আওতায় উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশ কার্যত ইইউর শুল্ক ইউনিয়নে থেকে যেতে পারে। তবে পণ্যের ওপর ভ্যাট কার্যকর করার বিষয়ে জটিলতা থেকে গিয়েছিল। ইইউ ও ব্রিটেনের ভিন্ন ভ্যাটের হারের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা মধ্যস্থতাকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। বিষয়টির নিষ্পত্তি হলে চূড়ান্ত আইনের খসড়া প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরে মাইক্রোবাস-মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ ভেটো ছাড়াই ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘ সদস্যপদ ঠেকানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র সখীপুরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা ভারী বৃষ্টিতে দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা, দুর্বিসহ অবস্থা বেসিক ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ভরিতে ২০৬৫ টাকা বেড়ে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড ইরানি জবাব নিয়ে ভুল হিসাব করেছিল ইসরাইল! কূটনীতিতে বাইডেনবিরোধী হতে চান ট্রাম্প পেনাল্টিতে সাফল্য রিয়ালের জয়ের মানসিকতার প্রমাণ কিমিচের একমাত্র গোলে আর্সেনালকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে বায়ার্ন বিরোধী দলকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র করছে সরকার : ড. মঈন খান

সকল