২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মস্কো-রিয়াদ সহযোগিতা জোরদারের ঘোষণা

সৌদির সাথে রাশিয়ার নতুন ২০ চুক্তি
রিয়াদের আল ইয়ামামা প্রাসাদে সফররত ভøাদিমির পুতিনের সাথে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ : ইন্টারনেট -

মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের সাথে নতুন ২০টি চুক্তি করেছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ রাশিয়া। গত সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে সৌদি বাদশাহ সালমানের বৈঠক শেষে দেশটির জ্বালানী মন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান এ ঘোষণা দেন। আলোচিত ওই বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারজেই ল্যাভরভ।
এনার্জি ইন্ড্রাস্টিজ, মহাকাশ ও স্যাটেলাইট, বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, রাজস্ব প্রশাসন, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধিসহ ২০টি চুক্তি করে দুই দেশ। সৌদি জ্বালানী মন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান বলেন, এ চুক্তির পর সৌদি-রাশিয়া উন্নয়নের নতুন ধাপে এগিয়ে যাবে। বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতায় সৌদি আরবের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন।
২০১২ সালের পর এটিই তার প্রথম সফর। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিও স্থিতিশীলতা নিয়ে পুতিন বলেন, আমি নিশ্চিত যে, সৌদি আরবের অংশগ্রহণ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিও স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। এ অঞ্চলের নিরাপত্তাসহ যেকোনো আঞ্চলিক সমস্যা নিরসনে সৌদির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে পুতিনকে রাজকীয়ভাবে রিয়াদের আল-ইয়াম্মাহ প্রাসাদে অভিবাধন জানানো হয়। তাকে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা প্রদর্শন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির বাদশাহ সালমান, যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান। রাশিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করে বাদশাহ সালমান বলেন, রাশিয়া আমাদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অংশিদার। আমাদের দুই দেশের এ যৌথ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য চুক্তি উভয়ের দেশের জনগণের জন্য বিভিন্ন ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
এ দিকে মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানকে কেন্দ্র করে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে যখন উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন এই সফরে এসেছেন পুতিন। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত কয়েক শত কোটি ডলার মূল্যের ২০টি চুক্তির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশ্বে তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং উত্তেজনা নিরসন করা।
সৌদি আরবের দু’টি তেলক্ষেত্রে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর যখন ইরানের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে এবং এ জন্য সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট ইরানকেই দায়ী করে, তখন এই সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সম্পাদিত চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে এরোস্পেস, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষি সংক্রান্ত। গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির মধ্যে অন্যতম ওপেকপ্লাস দেশগুলোর বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা নিয়ে। অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ ও এর সদস্য নয় এমন ১০টি সদস্য দেশকে মিলে বলা হয় ওপেকপ্লাস।
এর সদস্য নয় মস্কো। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে তেলের সরবরাহ সীমিত করতে এবং মূল্য বৃদ্ধিতে এই গ্রুপের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে রাশিয়া। গত সোমবারের চুক্তি স্বাক্ষর বিষয়ে সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান বলেছেন, গত সোমবারের চুক্তির মধ্য দিয়ে তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহযোগিতা ও সম্পর্ক শক্তিশালী করতে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, পুতিন ও সৌদি আরবের কর্মকর্তারা সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাশিয়া ও সৌদি আরব একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এর ফলে মস্কোর কাছ থেকে শক্তিশালী এস-৪০০ নামের বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার পথ উন্মুক্ত হয় রিয়াদের জন্য। কিন্তু সৌদি আরব এখনো ওই ব্যবস্থা নেয়নি রাশিয়ার কাছ থেকে। এর পরিবর্তে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনাকেই বেছে নেয়।
সোমবার পুতিন বলেছেন, সৌদি আরবের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সুবিধা সম্বলিত সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে জোর দিয়েছে রাশিয়া। এ সময় পুতিনকে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বলেছেন, প্রতিটি বিষয়ে আপনার সাথে আমরা কাজ করতে চাই। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তি আসবে। সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতি পাবে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ও সৌদি আরব দু’টি দেশই এখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। তাদের মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রমবার রাশিয়া সফর করেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান। কিন্তু এক বছর আগে ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়। এরপর সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ওই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন। এরই এক পর্যায়ে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ক্রাউন প্রিন্সের সাথে হাত মেলানো থেকে বিরত থাকেন পুতিন।
তবে সেই সম্পর্ক আস্তে আস্তে জোড়া লেগেছে। সৌদি আরব সফরে যাওয়ার আগে একটি আরবি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পুতিন। এ সময় তিনি সৌদি আরবের রাজপরিবারের সদস্যদের সাথে তার সুসম্পর্কের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব, আমাদের অংশীদার এবং আরব দুনিয়ায় আমাদেরপ্রন্ধুদের সাথে আমরা কাজ করছি তেলের বাজার অস্থিতিশীলতা করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনতে।
ভøাদিমির পুতিনের এমন উদ্যোগকে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষী বা পিসমেকারের ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফিওদর লুকিয়ানভ। ইরানের সাথে আগে থেকেই রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো। তার সাথে সৌদি আরবের সাথে নতুন করে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই দুই মিলে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার বিরোধ মেটানোর ক্ষেত্রে অনুঘটক হয়ে উঠতে পারেন পুতিন। গত মাসে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় তেলক্ষেত্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। সৌদি আরব তার অশোধিত তেল উত্তোলন অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এতে বিশ্বে তেলবাজারে দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে। ওই হামলার দায় ইয়েমেনের বিদ্রোহী হাউছিরা স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব মনে করে এর সাথে সরাসরি যুক্ত ইরান। কিন্তু বার বার এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান।


আরো সংবাদ



premium cement
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের কুমিল্লা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক আহত অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর সাংবাদিকের বড় ভাই উদ্ধার মালয়েশিয়ায় ২ হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে ১০ নৌ-সদস্য নিহত

সকল