২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সিরিয়ায় তুর্কি অভিযানের দ্বিতীয় দিনে তুমুল লড়াই, নিহত ১০৯

সূত্র : বিবিসি -

কুর্দি নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অভিযানের দ্বিতীয় দিনে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান জোরালো করেছে তুরস্ক। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তু দখল করেছে। এ ছাড়া সীমান্তের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে তুমুল লড়াই চলছে। সেখানে অন্তত ১০৯ জন কুর্দি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্ক। অভিযান শুরুর পর বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে হাজার হাজার মানুষ।
গত সোমবার সিরিয়ায় আইএস-বিরোধী অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় তুরস্ক। সে সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলেন, সন্ত্রাসী আস্তানা তৈরি বন্ধ করতেই তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঙ্কারা। মধ্যপ্রাচ্যে আইএস-বিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় তুরস্কের অভিযান শুরুর আগে সেখান থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের জেরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে অভিযানের বিষয়ে তুরস্ককে সতর্ক করে দেন তিনি। তুরস্কের দাবিÑ আক্রমণ শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। তবে বুধবার সিরিয়ায় অভিযান চালাতে তুরস্ককে সবুজ সঙ্কেত দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, তুরস্ক ও কুর্দিরা কয়েক শতাব্দী ধরে লড়াই করছে। আর কুর্দি যোদ্ধারা দ্বিতীয় যুদ্ধে আমাদের সহায়তা করেনি। তারপরও আমরা কুর্দিদের পছন্দ করি।
তুর্কি অভিযানের দ্বিতীয় দিনে রাস আল-আইন ও তাল আবিয়াদ শহরের মধ্যবর্তী এলাকায় তুমুল লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে কুর্দি সূত্র। তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মিও এই যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। মূলত জনবিরল এই এলাকায় বসবাস করে আরব বংশোদ্ভূতরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, রাস আল-আইন শহরে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। সামরিক বিমান ওই এলাকায় টহল ও বোমাবর্ষণ করছে বলেও জানা গেছে। হামলায় ১০৯ জন কুর্দি সেনা নিহত হয়েছেন বলে এক দলীয় সভায় বলেছেন এরদোগান। এ ছাড়া হামলায় সাতজন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, স্থল ও আকাশপথে তাদের অভিযান রাতভর সফলভাবে অব্যাহত রয়েছে। তাল আবিয়াবের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম তুরস্ক দখল করেছে বলেও জানা গেছে। ১৮১টি লক্ষ্যবস্তুতে তুরস্কের সশস্ত্রবাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
অভিযানের প্রথম ঘণ্টাতেই উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনী এসডিএফের অবস্থানে বিমান হামলা চালানো হয়। রাতভর সীমান্তে বিপুল সৈন্য সমাবেশ এবং সাঁজোয়া যান জড়ো করে তুরস্ক। তুরস্কের সৈন্যদের সাথে জড়ো হয় তাদের সমর্থিত সিরিয়ান আরবদের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মির কয়েক হাজার সদস্য। বুধবার দুপুরের পরপরই প্রেসিডেন্ট এরদোগান ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ নামে সেনা অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন। টুইটারে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ‘আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে সন্ত্রাসের একটি করিডোর যাতে তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করা এবং সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠাই তুরস্কের এই অভিযানের উদ্দেশ্য।’ উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বাহিনী এসডিএফকে তুরস্ক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। ততুরস্কের ভয়, এসডিএফ তুরস্কের অভ্যন্তরে তৎপর কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকানি দিচ্ছে। বিবিসির সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, তুরস্ক ৪৮০ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে সিরিয়ার অভ্যন্তরে ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত একটি ‘সেফ জোন’ বা নিরাপদ এলাকা তৈরির পরিকল্পনা করেছে। কুর্দি বাহিনীকে তাড়িয়ে এই ‘সেফ জোনে’ তুরস্কে আশ্রয় নেয়া ৩৫ লাখের মতো সিরীয় শরণার্থীকে পুনর্বাসন করতে চান প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
সিরিয় শরণার্থীদের ইউরোপ পাঠানোর হুমকি এরদোগানের
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো সিরিয়ায় সামরিক অভিযানকে একটি পেশা হিসেবে চিহ্নিত করলে আঙ্কারা তুরস্কের ৩৬ লাখ সিরিয়ান শরণার্থীকে ইউরোপে পাঠানো হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলে দলীয় নেতাদের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এই লড়াইয়ে কুর্দি বাহিনীর ১০৯ জন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ইস্তাম্বুল থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক সিনেম কোসগলুসাইদ বলেছেন, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে হামলার পর তুরস্ককে নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যেসব সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে তাতে সন্তুষ্ট নয় আঙ্কারা। এরদোগান স্পষ্ট জানিয়েছেন, এটি কোনো আক্রমণ নয়। সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে পরিষ্কার করার জন্যই এই অপারেশন।
তীব্র সমালোচনায় আমেরিকার মিশ্র বক্তব্য
এ দিকে তুরস্কের পরিকল্পিত তথাকথিত ‘সেফ জোনের’ বেশ কিছু অবস্থান থেকে রোববার হঠাৎ করে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের ভেতর এবং ন্যাটো মিত্রদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সমালোচকদের বক্তব্যÑ এত দিনের মিত্র এসডিএফকে এভাবে বিপদের মুখে ফেলায় মিত্র হিসেবে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা দারুণভাবে ক্ষুণœ হবে।
সমালোচনার মুখে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একের পর এক টুইটারে মিশ্র সিগনাল দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, এসডিএফ আমেরিকার ‘বিশেষ’ বন্ধু, তাদের পিঠে ছুরি মারার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, সিরিয়ায় এক হাজার মার্কিন সৈন্যের মধ্যে মাত্র ৫০ জনকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আরেক টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তুরস্ক আমেরিকার বাণিজ্যিক এবং ন্যাটো জোটের মিত্র। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি টুইট করেন, তুরস্ক যদি তাদের অভিযানে বেশি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তুরস্কের অর্থনীতি ‘ধ্বংস করে দেয়া হবে’।’

 


আরো সংবাদ



premium cement