১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উপসাগরীয় উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে চীন : শি জিনপিং

বেইজিংয়ে সফররত ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর সাথে চীনা প্রেসিডেন্টের করমর্দন :ইন্টারনেট -

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, উপসাগরীয় অঞ্চলের বিরোধগুলোর সমাধান আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে করা উচিত, সব পক্ষকে শান্ত থাকা উচিত এবং সংযম প্রদর্শন করা উচিত। গতকাল সোমবার ইরাকের সফররত প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদির সাথে বৈঠকে এ কথা বলেন শি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রের স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পেছনে ইরান ছিল বলে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রমাণ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রিয়াদ। ওয়াশিংটনের মতামতও এ রকমই। এই হামলার পর থেকেই সৌদি আরবে তেলের উত্তোলনে মারাত্মক নেকিবাচক প্রভাব পড়েছে। রিয়াদ বলেছে যে ইরানীয় অস্ত্রগুলো উত্তর থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং দেশটি সঠিক অবস্থানটি চিহ্নিত করার জন্য কাজ করছে। তেহরান এসব হামলায় কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করেছে এবং সীমিত সামরিক প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধেও প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে।
বেইজিংয়ে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে চীনের প্রেসিডেন্ট শান্তির জন্য আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেন বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়। সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রের ওপর হামলার কথা সরাসরি উল্লেখ না করে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল ও সংবেদনশীল। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অবশ্যই শান্ত থাকতে হবে এবং সংযম দেখাতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে মতপার্থক্য কমিয়ে এনে সমস্যার সমাধান করতে হবে। যৌথভাবে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে। ইরাকসহ সব পক্ষের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করতে প্রস্তুত চীন।
উপসাগরীয় অঞ্চলে ‘প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা’ নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে সৌদি আরবের মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও গত রোববার বলেছেন যে ইরানের সাথে যুদ্ধ এড়ানোই হবে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য।
মধ্যপ্রাচ্যের তুলনামূলকভাবে কূটনীতিক ক্ষেত্রে দুর্বল খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও সৌদি আরব ও ইরান উভয় দেশের সাথেই ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সম্পর্ক রয়েছে চীনের। দীর্ঘ দিন ধরেই দেশ দু’টির সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে চলতে হচ্ছে চীনের। গত শুক্রবার সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের সাথে ১৪ সেপ্টেম্বরের হামলার নিন্দা জানিয়ে কথা বলেছিলেন শি জিনপিং। তিনি বস্তুনিষ্ঠ ও সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং সব পক্ষকে পরিস্থিতির আরো অবনতির মতো পদক্ষেপ নেয়া এড়াতে বলেছিলেন। সৌদি আরব আজ পর্যন্ত চীনের শীর্ষ তেল সরবরাহকারী। অন্য দিকে চীনের চতুর্থ বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী ওপেকের সদস্য ইরাক। এই বছরের প্রথম সাত মাসে চীনে প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল তেল পরিবহন করে ইরাক।
যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেন জন কেরি
সিবিএস নিউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে চুক্তিভঙ্গ করেছে বলে স্বীকার করেছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে তার একমাত্র কারণ পরমাণু সমঝোতা থেকে ওয়াশিংটনের বেরিয়ে যাওয়া এবং এর জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন দায়ী। সিবিএস নিউজ চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ট্রাম্প।
সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় ইয়েমেনের সাম্প্রতিক ড্রোন হামলার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি সম্পর্কে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি-অবস্থানের মারাত্মক অভাব দেখা দিয়েছে।
কেরি বলেন, আমরা ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছি। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাশিত ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের ৮ মে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে তেহরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেন। তিনি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি পারস্য উপসাগরে বিমানবাহী রণতরী, বি-৫২ বোমারু বিমান ও এফ-২২ জঙ্গিবিমান পাঠান।
এ দিকে ইরান পরমাণু সমঝোতায় অটল থেকে এখন পর্যন্ত কৌশলগত ধৈর্য অবলম্বনের নীতি বজায় রেখেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো আমেরিকাকে ছাড়া এই সমঝোতা বাস্তবায়নের যে আশ্বাস দিয়েছে তার ওপর এখনো আস্থা রেখেছে তেহরান। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক আলোচনার প্রস্তাবের জবাবে তেহরান বলেছে, ওয়াশিংটন পরমাণু সমঝোতায় ফিরে এলেই কেবল তার সাথে আলোচনায় বসবে ইরান।


আরো সংবাদ



premium cement