মিসরে বিক্ষোভের সংবাদ প্রচারে মিডিয়াকে সতর্কবার্তা
- এপি ও ডন
- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
প্রেসিডেন্ট আবদুল-ফাত্তাহ আল-সিসির বিরুদ্ধে চলমান নজিরবিহীন বিক্ষোভের সংবাদ প্রচারে মিডিয়াকে সতর্ক করেছে দেশটির সরকার। তারা মিডিয়াকে ‘পেশাদার নীতি’ মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে। বিক্ষোভসংক্রান্ত প্রচারিত সংবাদকে পর্যবেক্ষণ করে সাংবাদিকদের রোববার সতর্ক করে মিসরের মিডিয়া তদারকি কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ বিক্ষোভে পুলিশের টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের কয়েক ঘণ্টা পরে এই হুঁশিয়ারিটি এলো।
শনিবার সন্ধ্যায় শিশুসহ কয়েকজন মানুষ বন্দর নগরী সুয়েজে মিছিল করে আল-সিসিকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনজন বিক্ষোভকারী। একজন বাসিন্দা বলেছেন, পুলিশ ‘রাস্তায় লোকদের তাড়া করেছিল... প্রচুর পরিমাণে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছিল।’
শুক্রবার গভীর রাতে মিসরের বেশ কয়েকটি শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। তাদের পুলিশ দ্রুত ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। অথচ আল-সিসি সরকারের গৃহীত কঠোর পদক্ষেপের কারণে বিগত বছরগুলোতে রাস্তা প্রায় প্রতিবাদহীন তথা পুরোপুরি নীরব ছিল।
মিসরের ইতিহাসে প্রথম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্ট মুরসিকে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করে করে ক্ষমতায় আসেন সিসি। দায়িত্ব নেয়ার পরই তিনি ২০১৩ সাল থেকে কার্যত জনগণের সব বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেন। এর পর থেকে যেই রাস্তায় নামার সাহস করেছে তাকেই দ্রুত গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বহু বছর ধরে জেলখানায় থাকার সাজা দেয়া হয়েছে।
রোববার জারি করা বিবৃতিতে বিদেশী গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের অনুমতি প্রদানকারী স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিসÑ এসআইএস জানিয়েছে, মিসরের প্রতিবাদের কভারেজ সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এতে সাংবাদিকদের পেশাদার আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে, মিডিয়াতে মতামত প্রকাশে সমতা বিধান করে উপস্থাপন করতে এবং এতে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্থান দেয়ার জন্য বা প্রতিনিধিত্বকারীদের দৃষ্টিভঙ্গিকেও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। অতীতেও সংবেদনশীল ঘটনাগুলোর প্রচারের ক্ষেত্রে এ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে অনুরূপ বিবৃতি জারি করছিল এসআইএস।
এসআইএস হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল যে ‘সোস্যাল মিডিয়ার খবরকে সংবাদের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। কারণ এতে অনেক ভুয়া নিবন্ধনকারী রয়েছে এবং জালিয়াতি হয়।’ গত কয়েক বছরের বিক্ষোভের ভিডিওগুলোসহ তারা যেভাবে সম্প্রচার করেছে, তাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিক্ষোভ সম্পর্কিত ভুয়া তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
তবে সোস্যাল মিডিয়াও বিক্ষোভের প্রকৃত ভিডিও প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কারণ সোস্যাল মিডিয়াই একমাত্র জায়গা, যা সরকার দ্বারা প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রিত নয়। মিসরের প্রায় সব সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল সরকার বা সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বিক্ষোভের খবর প্রচার তারা প্রায় করেনি বললেই চলে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিসর কয়েক ডজন সাংবাদিককে কারাগারে বন্দী করেছে এবং মাঝে মধ্যে কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে।
শুক্রবারের বিক্ষোভের পরে নিরাপত্তা বাহিনী কায়রো এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে কয়েক শ’ মানুষকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছে মিসরের বেসরকারি সংস্থা ইজিপটিয়ান সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল রাইটস।
নতুন করে সংঘটিত বিক্ষোভগুলোর খবর অনলাইন-ভিত্তিক প্রচারণা থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। এর নেপথ্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন একজন মিসরীয় ব্যবসায়ী, যিনি স্বেচ্ছায় প্রবাসে বসবাস করছেন এবং যিনি নিজেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াকু সৈনিক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তার বিক্ষোভের আহ্বানগুলো এমন সময়ে এসেছিল যখন কয়েক বছরের অর্থনৈতিক সংস্কার এবং কঠোর পদক্ষেপের ফলে মিসরের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা পরিস্থিতির চাপে পড়েছিল।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী সামরিক বাহিনী ও সরকার কর্তৃক সংঘটিত দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তার ভাইরাল ভিডিওগুলো অন্যদেরও দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করতে ও তাদের পরিচয় গোপন না করে দুষ্কর্ম প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত করছে। দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নেতিবাচক অভিজ্ঞতা জানিয়ে নিজস্ব ভিডিও পোস্ট করতে উৎসাহ জোগাচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা