২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উপসাগরীয় অঞ্চলের সুরক্ষা

জাতিসঙ্ঘে নতুন পরিকল্পনা দেবে ইরান

বিদেশী সৈন্যরা উপসাগরের নিরাপত্তায় হুমকি : হাসান রুহানি; মার্কিন বাহিনীকে উপসাগর ছাড়ার হুঁশিয়ারি
-

নিউ ইয়র্কে আসন্ন জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য নতুন একটি প্রস্তাব তুলে ধরবে বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের বার্ষিকী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে এমন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন।
রুহানি বলেন, ইরান উপসাগর ও হরমুজ উপকূলের নিরাপত্তা তদারকির জন্য তেহরানের নেতৃত্বাধীন প্রচেষ্টাতে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি তার বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্বের হাত বাড়িয়েছে।
দুই দিন আগেই সৌদি তেল স্থাপনার নিরাপত্তায় এ অঞ্চলে সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণার পর উপসাগরীয় অঞ্চল ছাড়তে মার্কিন বাহিনীকে সতর্ক করে দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, বিদেশী সৈন্যরা উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে ফেলেছে।
রুহানি বলেছেন, আমাদের এই অঞ্চল ও মানুষের জন্য সমস্যা এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশী বাহিনী। এ ধরনের সৈন্য মোতায়েনের কারণে অতীতে বিপর্যয় নেমে এসেছিল বলে স্মরণ করে দিয়ে ইরানি এই প্রেসিডেন্ট মার্কিন বাহিনীকে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
যদি তারা আন্তরিক হয়ে থাকে, তাহলে এই অঞ্চলকে অস্ত্র প্রতিযোগিতার স্থানে পরিণত করা উচিত হবে না তাদের।
হাসান রুহানি বলেন, বিদেশী সৈন্যরা সব সময় এই অঞ্চলের জন্য বেদনাদায়ক ও রহস্যময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং তাদের অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় ব্যবহার হওয়া উচিত নয়। ‘আমরা অন্যের সীমানা লঙ্ঘন করব না, একইভাবে অন্যকে আমাদের অঞ্চলে সীমা লঙ্ঘন করতে দেব না।’
ইরাকের সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের চাপিয়ে দেয়া আট বছরের যুদ্ধের বার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর প্রতিরক্ষা সপ্তাহ পালন করে ইরান। প্রতিরক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয় দেশটিতে। এ বছর ৩৯তম প্রতিরক্ষা বার্ষিকী পালন করছে ইরানিরা।
রোববার কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে রুহানি বলেন, ইরানের শত্রুরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও মহান জাতির মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহস হারিয়ে ফেলেছে।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ইরান খোর্দাদ-৩ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রদর্শন করে, যা গত জুনে একটি মার্কিন ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সল্প ও দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনীতে রাখা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে ইরান আটক পশ্চিমা ড্রোনের এক প্রদর্শনীরও আয়োজন করে। দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এ আয়োজনে মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ড্রোন প্রদর্শন করা হয়। গত শনিবার তেহরানে আয়োজিত এ প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ ছিল ব্রিটিশ পাইলটবিহীন বিমান বা ড্রোন ‘ফিনিক্স’। আইআরজিসির অ্যারোস্পেস ডিভিশন ড্রোনটি আটক করেছিল।
সম্প্রতি সৌদি আরবের দু’টি তেল স্থাপনায় এক ডজনের বেশি ড্রোন হামলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছে। তবে তেহরান সৌদিতে হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইরানের সাথে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর চলতি বছরে তেহরান-ওয়াশিংটন চরম উত্তেজনা শুরু হয়। ইরানের বিরুদ্ধে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এর মধ্যে সৌদি আরবের দু’টি তেলক্ষেত্রে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের সাথে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। যদিও এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হাউসি। কিন্তু সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার জন্য উপসাগরীয় অঞ্চলে রিয়াদের অন্যতম চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে দায়ী করছে।


আরো সংবাদ



premium cement