যুক্তরাষ্ট্রে ৬৪ কোটি ব্যারেল তেল মজুদ

সৌদি আরবের দু’টি তেল স্থাপনার ওপর ড্রোন হামলার পরই তেলের দাম বেড়ে গেছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তেল সরবরাহে সঙ্কট দেখা দিলে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল ‘জরুরি মজুদে’ থাকা তেল কাজে লাগানো হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বাজারে তেলের সরবরাহ অক্ষুণœ রাখার জন্য সেই ‘কৌশলগত মজুদ’ তেল ব্যবহার করতে পারেন তারা। টেক্সাস ও লুসিয়ানা অঙ্গরাজ্যে মাটির নিচে লবণের স্তরের ভেতর তৈরি গুহায় বিশাল এলাকা নিয়ে তেল মজুদ রয়েছে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি মুহূর্তে তেলের জোগান দিতে ৬৪ কোটি ব্যারেল তেল মজুদ রাখা হয়েছে।
১৯৭০-এর দশকে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময়কার তেল সঙ্কটের পটভূমিকে কেন্দ্র করেই এই তেলের মজুদ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক জ্বালানি এজেন্সির সব সদস্য দেশকেই অন্তত ৯০ দিন ব্যবহারের মতো পেট্রলিয়ামের আমদানি ধরে রাখতে হয়। তবে জরুরি প্রয়োজন মোকাবেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে ভাণ্ডার গড়ে তুলেছেÑ তার মতো বড় মজুদ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যুক্তরাষ্ট্রে মোট চারটি জায়গায় এই জরুরি তেলের মজুদ রয়েছে। টেক্সাসের ফ্রিপোর্ট এবং উইনির কাছে, লুসিয়ানায় লেক চার্লস আর ব্যাটন রুজে।
মাটির তিন হাজার তিন শ’ ফুট নিচে মানবসৃষ্ট অনেকগুলো গুহার মধ্যে এই তেল জমা করে রাখা আছে। ভূগর্ভস্থ লবণের স্তরের একটা অংশের লবণ গলিয়ে ফেলে তৈরি করা হয় এই গুহা যাতে প্রাকৃতিক গ্যাস বা তেল মজুদ রাখা যায়। মাটির ওপরে ট্যাংকে তেল জমা রাখার চাইতে এই পদ্ধতি অনেক সস্তা এবং নিরাপদ। ভূগর্ভস্থ লবণের রাসায়নিক গঠন এবং ভূতাত্ত্বিক চাপÑ দুই কারণেই এখান থেকে তেল বেরিয়ে যেতে পারে না। ফ্রিপোর্টের কাছে ব্রায়ান মাউন্ডে যে গুহাটি আছে তাতে ২৫৪ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ৪০ লাখ ব্যারেল তেল জমা রাখা যায়।
১৯৭০ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে সারা পৃথিবীতেই তেলের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষ নোয়ায় ওপেকের সদস্য ইরাক, কুয়েত, কাতার ও সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে তেল রফতানি বন্ধ করে দেয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ মাত্র তিন সপ্তাহেই থেমে যায় কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ১৯৭৪ সালের মার্চ পর্যন্ত জারি ছিল। ফলে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল প্রায় চারগুণ, ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার থেকে ১২ ডলারের কাছাকাছি। পেট্রল পাম্পগুলোয় পড়েছিল গাড়ির দীর্ঘ লাইন।
এরপরই ভবিষ্যতে সঙ্কট মোকাবেলার চিন্তা থেকে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস করে কৌশলগত পেট্রলিয়াম রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই মজুদের যে তথ্য ওয়েবসাইটে আছে তাতে বলা হয়েছে, ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তেল মজুদ রয়েছে ৬৪ কোটি ৪৮ লাখ ব্যারেল।

মার্কিন জ্বালানি প্রশাসনের এক হিসাব অনুযায়ী, মার্কিনিরা ২০১৮ সালে গড়ে প্রতিদিন ২ কোটি ৫ লাখ ব্যারেল তেল ব্যবহার করেছে। সে হিসাবে এই জরুরি মজুদে যুক্তরাষ্ট্রে ৩১ দিন চলবে। ১৯৭৫ সালের এক আইন অনুযায়ী এই জরুরি মজুদের তেল ব্যবহারের নির্দেশ শুধু প্রেসিডেন্টই দিতে পারেন। অবশ্য এখান থেকে তেল বের করা সহজ নয়। প্রেসিডেন্টের আদেশ পেলেও এখান থেকে তেল বের করে তা বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
তা ছাড়া এখানে তেল জমা রাখা হয়েছে অপরিশোধিত আকারে। গাড়ি, জাহাজ বা বিমানে ব্যবহার করতে হলে এই তেলকে আগে শোধনাগারে পাঠিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। সর্বশেষ এই জরুরি মজুদের তেল ব্যবহার করা হয় ২০১১ সালে যখন আরব বসন্তের কারণে জ্বালানি সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র জরুরি মজুদের তেল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। তার ছেলে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হারিকেন ক্যাটরিনার পর জরুরি মজুদের ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রির অনুমতি দেন। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়ও বাজেট ঘাটতি কাটাতে ১৯৯৭ সালে ২ কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি করা হয়। অনেকে অবশ্য এত বড় জরুরি মজুদ রাখার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালে ফেডারেল ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে জরুরি মজুদের অর্ধেক তেলই বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।