১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিউনিসিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ

আন্নাহদা দলের পক্ষে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী আবদুলফাত্তাহ মুরো তিউনিসের বাইরে লা মার্সায় একটি কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন; প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ইউসুফ শাহেদ তিউনিসের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন : ইন্টারনেট -

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছে তিউনিসিয়ার জনগণ। আরব বসন্তের সূতিকাগার তিউনিসিয়ায় দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক জয়নুল আবদীন বিন আলীর বিদায়ের পর দ্বিতীয়বারের মতো দেশটিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে।
২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন বেজি সাইদ এসেবসি। প্রায় পাঁচ বছরের শাসনামলে তিনি দেশটিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপের জোর দেন। তার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তির পর চলতি বছর নভেম্বরে সে দেশে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে গত জুলাই মাসে এসেবসির মৃত্যুতে তিন মাস আগেই দেশটিতে নির্বাচন হলো।
নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ২৬ জন, যার মধ্যে দু’জন নারীও রয়েছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ¦ীদের মধ্যে রয়েছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব নাবিল করৌই। ইসলামপন্থী আন নাহদা দলের প্রধান আবদুল ফাত্তাহ মুরো এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ শাহেদ।
বিশ্বের অন্যতম নবীন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে এই নির্বাচন তিউনিসিয়ার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচনে জিততে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে হবে। তবে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পেলে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ডে ভোটগ্রহণ হবে।
সকাল ৮টায় ভোটগহণ শুরু হয় এবং কিছু কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৬টা অবধি ভোটগ্রহণ চলে। অন্য কেন্দ্রগুলো নিরাপত্তার কারণে দুই ঘণ্টা আগেই ভোটগ্রহণ শেষ করে। সংবিধান অনুযায়ী তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেন। পার্লামেন্ট একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেন। তিনি অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে আগামী অক্টোবরে। বুথফেরত জরিপের ফল আজ সোমবার সকালে পাওয়া যেতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটের প্রাথমিক ফল মঙ্গলবারের আগে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। দ্বিতীয় রাউন্ড নির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে তা অবশ্যই ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হতে হবে। পার্লামেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ৬ অক্টোবর। সেই একই দিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ড ভোটগ্রহণও করা হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরব বসন্তে স্বৈরশাসনের সিংহাসন কেঁপে উঠলেও শেষ পর্যন্ত তিউনিসিয়াতেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে টিভি বিতর্কও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলা ও বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক সমস্যা বিরাজ করছে। গত বছর এসব সমস্যা নিরসনে জনগণ ফের মাঠে নেমেছিলেন।
দীর্ঘ ২৩ বছর বেন আলীর শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় গণ-আন্দোলন। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাস্তার পাশে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহূতি দেন। তার প্রতিবাদে শুরু হয় বিক্ষোভ। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে বেন আলী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সেই গণ-আন্দোলন পুরো আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পরে ছড়িয়ে পড়ে, যা আরব বসন্ত হিসেবে খ্যাতি পায়। তিন বছর পর দেশটি নতুন সংবিধান অনুমোদন দেয়। যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর করতে বিস্তারিত বিধিবিধান উল্লেখ করা হয়। দেশটিতে সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement