১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মালয়েশিয়ায় শীর্ষ দুই বিরোধী দলের জোট গঠন

মোট জনসংখ্যার ৬০% মালয় মুসলমানকে একত্রিত করাই লক্ষ্য; এ জোট আগামী নির্বাচনে মাহাথিরের জোটকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে
-

মালয়েশিয়ার দু’টি প্রধান বিরোধী দল দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগত মালয় মুসলমানদের সমর্থন একত্রিত করার লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করেছে। এ পদক্ষেপ পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদের সরকারকে হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে।
১৯৫৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে মালয়েশিয়া স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে দেশটির ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট জোটকে পরাজিত করে মাহাথিরের জোট ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে।
সাবেক ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান দল ইউনাইটেড মালয়েশিয়া ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তার এক সময়কার প্রতিদ্বন্দ্বী প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টির (পাস) সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে নিজের অবস্থানকে আরো দৃঢ় করার চেষ্টা করেছে।
শনিবার উভয় দল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেছে যে, এ পদক্ষেপ দেশটির মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মালয় মুসলমানকে একত্রিত করতে সাহায্য করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী জরিপে দুই দল সম্মিলিতভাবে ৭৫ শতাংশ মালয় ভোট পেয়েছিল এবং এটি তাদের জোটকে আগামী নির্বাচনে ভালো অবস্থান অর্জনে সহায়তা করবে।
ইউএমএনও সভাপতি আহমদ জাহিদ হামিদী জোর দিয়ে বলেছেন যে, এ পদক্ষেপ জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজনকে আরো গভীর করবে না। উভয় পক্ষের কয়েক হাজার সদস্যের উপস্থিততে হামিদী চুক্তি স্বাক্ষরকালে বলেন, ‘সাহসী ও যোগ্য মালয় নেতাদের অনুপস্থিতির কারণে এখন সরকারের মধ্যে বিভ্রান্তি কাজ করছে’। ‘ইউএমএনও এবং পিএএস নিশ্চিত করেছে যে, তাদের এই সহযোগিতা দেশের মধ্যে কোনো জাতি বা ধর্মীয় শত্রুতা, দূরত্ব ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করবে না।’
মালয়েশিয়ার জনসংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ প্রায়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মালয়। তবে দেশটিতে প্রচুর জাতিগত ভারতীয় ও নৃতাত্ত্বিক চীনা সম্প্রদায় রয়েছে, যারা সাধারণত ইসলাম ধর্মাবলম্বী নয়।
২১ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মোহামাদ ইলমান হাকিম বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি সরকারি নীতি লক্ষ্য করেছি যা আমাদের মুসলমানদের হুমকির মধ্যে ফেলেছে ... সরকার এখন কেবল মালয় ও ইসলামের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।’
হাকিম বলেন, ক্ষমতার পদে বিশেষ করে সরকার ও পার্লামেন্টে বৃহত্তর মালয় মুসলিম প্রতিনিধিত্বের জন্য ইউএমএনও এবং পাস জোটের জোর দিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।
তবে তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়ান বিশেষজ্ঞ জেমস চিন বলেছেন, ‘যারা প্রগতিশীল, আধুনিক ও বহু বর্ণীয় মালয়েশিয়া দেখতে চান তাদের জন্য ‘এটি দুঃখের দিন’।’ তিনি বলেন, ইউএমএনও এবং পাস মালয়েশিয়ানদের বলছে যে, এই দেশটি কেবল মালয় এবং মুসলমানদের জন্য।
চিন বলেন, এই চুক্তিটি বহুজাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মাহাথিরের জোটের জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকির কারণ। কারণ ইউএমএনও এবং পাসের গ্রামীণ অঞ্চলে দৃঢ় সমর্থন রয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়ায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতিগত উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ মাহাথিরের নতুন সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিক অসন্তুষ্টির মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর ফলে মাহাথিরের সরকার তার বিশেষ সুবিধাগুলো হারাতে বসেছেন। বিরোধী দল এবং মালয় প্রতিনিধিত্বকারী রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণে মাহাথিরের প্রশাসনকে তার পরিকল্পনা করা অনেক সংস্কারকাজ বিলম্ব বা প্রত্যাহার করতে হয়েছে।
জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের একটি প্রস্তাবে সমর্থন এবং রোম সংবিধিকে স্বীকৃতি জানাতে মালয়েশিয়া যে পরিকল্পনা করেছিল তা প্রত্যাহার করতে হয়েছিল বিরোধিতার কারণে।
এমনকি জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে মালয়েশিয়ায় পুলিশি তদন্তের মুখে থাকা ইসলামী চিন্তাবিদ জাকির নায়েককে সরকার ভারতের কাছে হস্তান্তর করবে না বলেও মাহাথিরকে বারবার বিবৃতি দিতে হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement