১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কেনার বিষয়ে ট্রাম্পকে এরদোগানের ফোন

-

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলোচনা শুরুর কথা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। শুক্রবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাথে আলাপকালে তুর্কি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ আগে ট্রাম্পের সাথে এক ফানালাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কেনা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। এই মাসে আসন্ন জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিয়ে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতে ওই আলোচনা অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তিনি।
রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের উত্তেজনা বেড়েছে। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্রয়ের পর যে সংকট তৈরি হয়েছে, মার্কিন নেতার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দিয়ে তিনি তা উতরে যেতে পারবেন বলে মনে করেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর আগেই জানিয়েছে, তুরস্কের কাছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রির প্রস্তাবের সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরিয়া সংঘাতে দুই দেশের নীতি ও ট্রাম্প প্রশাসনের ইরান সংশ্লিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা উপেক্ষা করে ২০১৯ সালের ১২ জুলাই রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০-এর প্রথম চালান গ্রহণ করে তুরস্ক। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনায় আঙ্কারার ওপর ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় চুক্তি অব্যাহত থাকলে এফ-৩৫ কর্মসূচি থেকে তুরস্ককে বাদ দেয়ার সতর্কতা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। হুঁশিয়ার করা হয়েছে, অর্থনৈতিক অবরোধের মুখেও পড়তে হতে পারে দেশটিকে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে এক বৈঠকের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না।
শুক্রবার রয়টার্সের সাথে আলাপকালে ট্রাম্পের সাথে নিজের ফোনালাপের প্রসঙ্গ জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি এস-৪০০ এর যে প্যাকেজই পেয়ে থাকি না কেন, আমরা তোমাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ প্যাট্রিয়ট কিনতে পারি। তবে আমি বলেছি, আমাদের দেখতে হবে যে অন্ততপক্ষে যেন তা এস-৪০০ কেনার শর্তের সাথে মেলে।’ এর মধ্য দিয়ে এরদোগান যৌথ উৎপাদন বা অনুকূল ঋণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের দায়ে তুরস্কের প্রধান রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হ্যালক ব্যাংককে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বড় অঙ্কের জরিমানা থেকে ট্রাম্পের কাছে সুরক্ষা চাইবেন কিনা জানতে চাইলে এরদোগান বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে, এ রকম ভুল এড়িয়ে যেতে পারব। দুই নেতার মধ্যে ভিন্ন ধরনের আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মত হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ তার মিত্র তুরস্ককে আর আঘাত করতে চাইবে না। কারণ এটি কোনো যৌক্তিক আচরণ হতে পারে না।
ফোরাত নদীর তীর থেকে ইরাক সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সাড়ে চারশ’ কিলোমিটারের সিরীয় সীমান্তে একটি নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠা করতে ট্রাম্প ও এরদোগানের মধ্যে আলোচনা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মার্কিন সমর্থিত সিরীয় কুর্দিশ ওয়াইপিজি যোদ্ধারা এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করছে। রোববার সেখানে দুই দেশ একটি যৌথ সামরিক টহল দিয়েছে। কিন্তু এরদোগান বলছেন, ওয়াইপিজিকে তাড়াতে একটি অভিযানের ব্যাপারে ওয়াশিংটন গড়িমসি করছে।
ওয়াইপিজিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে মনে করছে তুরস্ক। কাজেই সীমান্ত থেকে তাদের তাড়াতে ওঠেপড়ে লেগেছে দেশটি। তবে চলতি মাসে নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠিত না হলে তুরস্ক একাই অভিযান চালাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এতে তিন বছরের মধ্যে উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের তৃতীয় সামরিক অভিযানের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরদোগান বলেন, শান্তির জন্য একটি করিডোর অপরিহার্য। আমাদের সীমান্তে সন্ত্রাসীদের করিডোর আমরা সহ্য করব না। এ ক্ষেত্রে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার, আমরা সেটিই করে যাব। ওয়াইপিজির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের জোটে ক্ষুব্ধ ন্যাটো মিত্র তুরস্ক। কুর্দিশ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে গত এক দশক ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহ করছেন কুর্দিশরা। আঙ্কারার আশঙ্কা, দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে কুর্দিশ সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement