২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
অন্য ১০টি রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বহাল

কাশ্মিরকে ভারতের ফিলিস্তিন বানানো হচ্ছে : সীতারাম ইয়েচুরি

-

কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মিরকে ভারতের ফিলিস্তিনে রূপান্তর করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্কসবাদী (সিপিআইএম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। মঙ্গলবার এ কে গোপালান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ইয়েচুরি বলেন, দেশের সব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দল জম্মু ও কাশ্মিরে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবিতে ২২ আগস্ট বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।
তিনি বলেন, ‘এটি (২২ আগস্টের প্রতিবাদ) কেবল একটি সূচনা হবে, কারণ আমরা জম্মু ও কাশ্মিরকে ভারতের ফিলিস্তিনে রূপান্তরিত করতে দিতে পারি না। ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের সাথে যে আচরণ করছে তা আমরা এদেশে হতে দিতে পারি না... মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
ভারতের রাজ্যসভার প্রাক্তন এই সদস্য বলেন, ভুল তথ্য ও মিথ্যা প্রচারণার চালিয়ে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরই ভারতের একমাত্র বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত অঞ্চল, এমন অজুহাত টেনে মোদি সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছে, যাকে ভুল বলে উল্লেখ করেন ইয়েচুরি।
ভারত প্রাথমিকভাবে আসাম, নাগাল্যান্ড এবং জম্মু ও কাশ্মির এই তিনটি রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। তবে তারপরে আরো আট রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (অরুণাচল, হিমাচল, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, সিকিম, ত্রিপুরা ও উত্তরাখণ্ড)। সুতরাং বর্তমানে ১১টি রাজ্য বিশেষ মর্যাদা উপভোগ করছে। যেখান থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মোদির বিজেপি সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদাকে কেড়ে নেয়।
তিনি বলেন, ‘৩৭০ অনুচ্ছেদ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ অধিকার প্রদান করে সংবিধানে এমন আরো ১০টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোর বেশির ভাগ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং গুজরাটের বিশেষ রয়েছে। তাই এটি বলা ঠিক হবে না যে জম্মু-কাশ্মিরই একমাত্র রাজ্য যাদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।’
এ ছাড়াও ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য হওয়ায় জম্মু-কাশ্মিরের এই বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ইয়েচুরি।
তনি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার কেড়ে নেয়ার পেছনে রাজ্যটির স্বায়ত্তশাসন পাওয়াই একমাত্র প্রশ্ন নয়। ভারতের এমন বিশেষ অধিকার পাওয়া আরো রাজ্য রয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরকে শিকার বানানো হয়েছে কারণ, এটিই ভারতের একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য। সরকারের সাম্প্রদায়িক এজেন্ডাই ছিল এর পেছনের মূল প্রেরণা এবং এ কারণেই তারা আমাদের সংবিধানে থাকা ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং ফেডারেলিজমের নীতিগুলোকে আক্রান্ত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরে আরো বেশি হিন্দু বসতি নির্মাণের জন্যই অঞ্চলটির জনমিতিক ধরনকে পাল্টে ফেলতে এই নকশা করে সরকার। ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে রূপান্তরিত করতে চায়। এটা ঠিক এমন এক মডেল আজ, যা ইসরাইল অনুসরণ করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটি সত্য যে, বহিরাগতরা জম্মু ও কাশ্মিরের জমি কিনতে পারে না, তবে এটাই একমাত্র স্থান নয়। একই অবস্থা বিদ্যমান হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও সিকিমের মতো রাজ্যেও। আজকের লড়াইটি ভারতকে একটি একক রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরির লড়াই, যা আরএসএস-এর ভারত পরিকল্পনা। আমাদের প্রজাতন্ত্রকে একটি ‘ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র’ হিসাবে রূপান্তরের আরএসএস পরিকল্পনার বাস্তবায়নে এই লড়াই।’
হাসপাতালে ওষুধ নেই, ঘরে ঘরে খাবার সঙ্কট
দ্য হিন্দু জানায়, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কারফিউ চলছে জম্মু ও কাশ্মিরে। সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে সেখানে। ‘খাঁচাবন্দী’ কাশ্মিরে বাজারঘাট ও দোকানপাট সব বন্ধ। বন্ধ সব ধরনের পণ্য সরবরাহ। উপত্যকাজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি খাবার ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল, ফার্মেসি কোথাও ওষুধ নেই। খাবারের মজুদও শেষ হয়ে গেছে বাসিন্দাদের। ঘরে ঘরে হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়লেও চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। জরুরি রোগীকে হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ডাকার ক্ষমতাও নেই।
ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা জানায়, সেনা-পুলিশের পেলেট গান বা ছররা গুলিতে আহত গুরুতর রোগীদেরও হাসপাতালে নিতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি হাসাপাতালে যেতে পারছেন না চিকিৎসক ও কর্মীরাও। রোগী ও স্টাফরা যাতে সহজেই হাসপাতালে যেতে পারে সেজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ভারত সরকারের কাছে যৌথ চিঠি লিখেছেন ১৮ জন চিকিৎসক। চিঠিতে তারা বলেছেন, মানুষ তাদের স্বজনদের হাসপাতালে নিতে পারছে না। অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে পারছে না। রোগীকে হাসপাতালের নেয়ার চেষ্টা করলেও তাদের কয়েক মিটার পরপরই থামিয়ে দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পরিচয়সহ নানা প্রশ্ন করে হয়রানি করছে। শুধু রোগীয় নয় চিকিৎসক ও কর্মীদের হাসপাতালে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে। রোগীর জীবন বাঁচাতে শিগগিরই কারফিউ তুলে নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আবেদন জানিয়েছেন তারা।
বেসরকারি ওই হেলিকপ্টারটি ওই এলাকার বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিল। সেখানে ত্রাণ কাজে নিয়োজিত ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের সদস্যরা হেলিকপ্টারটিকে বিধ্বস্ত হতে দেখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
ত্রাণ সামগ্রীগুলো উত্তরকাশির মোরি থেকে মোলদিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে উত্তরাখণ্ডের কয়েকটি অংশে বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রাজ্যজুড়ে ৩৫ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় বহু লোক আটকা পড়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরকাশি জেলায় অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের পাশাপাশি উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায়ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রবল বৃষ্টির সময় ভূমিধসে হিমাচলে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement