২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বিক্ষোভ দমনে কাশ্মিরে ব্যাপক ধরপাকড়

-

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই টুকরো করে দেয়ার পর দুই সপ্তাহ ধরে সেখানে ব্যাপক ধরপাকড় করা হচ্ছে। আটকদের বেশির ভাগ তরুণ। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সেখানে কমপক্ষে চার হাজার মানুষকে বন্দী করা হয়েছে।
কাশ্মিরি রাজনীতিবিদ শেহলা রশিদ দিল্লিতে টুইট করে জানিয়েছেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা রাতে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তার ভাষায়, ‘তারা বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করছে, খাবার ফেলে দিচ্ছে বা চালের বস্তায় তেল ঢেলে দিচ্ছে এবং শেষে বাড়ির তরুণদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি লিখেছেন, সোপিয়ানের একটি আর্মি ক্যাম্পে চারজন তরুণকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেরা ও নির্যাতনের সময় তাদের সামনে মাইক্রোফোন ধরে রাখা হয়েছিল যাতে তাদের চিৎকারের আওয়াজ শোনে গোটা এলাকা ভয় পায়।
সোপিয়ানের আর্মি ক্যাম্পে কাশ্মিরি তরুণদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে তার অডিও মহল্লায় শোনানোর খবর অবশ্য অস্বীকার করেছে ভারতীয় বাহিনী। আর শেহলা রশিদের বক্তব্যকে ‘গুজব’ আখ্যায়িত করে সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দাবি করেছেন আইনজীবী অলক শ্রীবাস্তব। তার দাবি, ‘ওই সব কথিত নির্যাতনের অডিও বা ভিডিও কোথায়? কিংবা নির্যাতিতদের নাম, পরিচয় বা ঘটনা কোথায় ঘটেছে সেগুলোই বা কেন তিনি জানাতে পারছেন না?’
ঠিক দুই সপ্তাহ আগের আরেক সোমবার মোদি সরকার পার্লামেন্টে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে সেখানে এ যাবৎ কতজনকে আটক করা হয়েছে, তা নিয়ে একেবারেই মুখ খুলতে রাজি নয় প্রশাসন। সরকারি মুখপাত্র নির্দিষ্টভাবে কোনো সংখ্যা জানাতে অস্বীকার করলেও এএফপি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্ধৃত করে বলছে, আটকের সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই চার হাজারের কম নয়।
স্কুল-কলেজে তালা
জম্মু ও কাশ্মিরে সোমবার থেকে আংশিকভাবে স্কুল খোলার কথা থাকলেও বেশির ভাগ স্কুলই এদিন খোলেনি বা খুললেও শিশুরা আসেনি। শ্রীনগর থেকে বিবিসির রিয়াজ মাসরুর এদিন জানান, ‘আবার স্কুল খোলার ঘোষণা হলেও শহরে তা কার্যকর করা হয়নি।’ তিনি জানান, ‘প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ক্লাস এইট পর্যন্ত শিশুরা স্কুলে আসবে। পরে সেটাকে শুধু ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত শিশুদের জন্য চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তবে কারফিউর ভেতর বাবা-মায়েরা শেষ পর্যন্ত ছোট ছোট শিশুদের স্কুলে পাঠানোর ঝুঁকি আর নেননি।’ ফলে প্রশাসন যাই দাবি করুক কাশ্মিরের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দূরে আর তারই মধ্যে শত শত তরুণকে আটক করা বা তুলে নেয়ার খবর যথারীতি আরো আতঙ্ক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
টার্গেট জামায়াত সমর্থকেরা
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিনাক্ষি গাঙ্গুলি বিবিসিকে জানান, পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। তার ভাষায়, ‘দেখুন ডিটেনশন তো শুধু গত দুই সপ্তাহে নয়Ñ তার বহু আগে থেকেই হচ্ছে। ইয়াসিন মালিক কিংবা হুরিয়াতের আরো বহু নেতাকে তো অনেকদিন ধরেই আটকে রাখা হয়েছে। সরকার যদিও বলছে যে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা খুব অল্প কিছু লোককে আটক করেছে, আমরা কিন্তু বলব আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, তারা এখানে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না।’ শ্রীনগরের লেখক ও গবেষক বশির আসাদ দিল্লিতে বিবিসিকে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রচুর লোককে আটক করা হচ্ছে। মূলত নিশানা করা হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ও ভাবধারার লোকজনকে। বস্তুত কাশ্মিরে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল মাস দুয়েক আগেই। এখন তাদের সমর্থকদের জেলে আসা-যাওয়া লেগেই আছে।’
রাজনৈতিক কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা (ছাত্রী) ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভিপি শেহলা রশিদ জম্মু কাশ্মিরের পরিস্থিতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর পোস্ট করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়। তবে শেহলা রশিদ দাবি করেন এসব গোপন ও অপ্রকাশিত তথ্য। শেহলা রশিদের ওই দাবিকে ভুয়া বলে জানিয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। ভারতীয় সেনার বক্তব্যের পর সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী অলোক শ্রীবাস্তব শেহলা রশিদের ওপর ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং শেহলাকে গ্রেফতার দাবি জানান। শেহলা রশিদ কাশ্মিরের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত খবর নিয়ে ১০টি টুইট করেছিলেন। তিনি টুইটে দাবি করেছিলেন যে, বর্তমানে কাশ্মিরের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। কাশ্মিরের সেনা আর পুলিশ রাতে কাশ্মিরিদের বাড়ি ঢুকে শিশুদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বাড়ির খাবারও নষ্ট করে দিচ্ছে তারা। এ ছাড়াও রাতে কাশ্মিরের মানুষের ঘরে ঢুকে শিশুদের তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন শেহলা রশিদ।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement