১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচনের আগে মন্দার সঙ্কেতে উদ্বিগ্ন ট্রাম্প

-

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা দানা বাঁধছে ইতোমধ্যেই। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। ট্রাম্প প্রশাসনের আশঙ্কা, যত দিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘণ্টা বাজবে, তত দিনে হয়তো গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি হবে মার্কিন অর্থনীতি। নির্বাচনে হেরে গেলে আমেরিকার অর্থনীতি রসাতলে যাবে বলে মার্কিনিদের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ট্রাম্প। এভাবে ভোট প্রচারে মন্দার ভয়কে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্পের দাবি, ব্যক্তিগতভাবে তোমরা আমাকে ভালোবাস বা ঘৃণা কর, আমেরিকাকে বাঁচাতে ও শক্তিশালী করতে তাকে ভোট দিতে হবেই। ভোটে জিতে তিনি ফিরলে আমেরিকা বাঁচবে ও বেকারত্বের হার কমবে।
কিন্তু দেশটির অর্থনীতির অবস্থা আশঙ্কাজনক। শেয়ারবাজারে বা কারখানায় উৎপাদন সঙ্কোচনে মন্দার লক্ষণ ইতোমধ্যেই স্পষ্ট। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে ধাক্কা লেগেছে অর্থনীতিতে। যুক্তরাজ্য ও জার্মানি অর্থনীতি সঙ্কুচিত করাও উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কল-কারখানায় উৎপাদন কমেছে ০.৪ শতাংশ। শিল্প সঙ্কুচিত হয়েছে ০.২ শতাংশ। টানা তিন মাস কমেছে বাড়ি তৈরি। আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে প্রায় এক দশক পরে সুদ কমিয়েছে মার্কিন শীর্ষ ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। ২০০৭ সালের পরে বুধবার এই প্রথম দেশটিতে দুই বছরের সরকারি বন্ডের তুলনায় কমে গিয়েছিল ১০ বছর মেয়াদের বন্ডের প্রকৃত আয় (ইল্ড), যা সাধারণত মন্দার আগে ঘটে। নির্বাচনের আগে এটি ট্রাম্পের জন্য একটি দুঃসংবাদ।
চীনে তৈরি সেলফোন ও খেলনা আমদানিতে শুল্কারোপের হুমকির পর দেশটির শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন ঘটে। পরে এই শুল্কারোপ পিছিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এতে শেয়ারবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ১৪ আগস্ট বন্ড মার্কেটে সৃষ্ট সতর্কবার্তা অনুসরণ করে শেয়ারবাজারে আবার দরপতন হয়। যাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ৮০০ পয়েন্ট কমেছে। ৩০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি নোটের মূল্যমান রেকর্ড পরিমাণ কমে এ দিন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বন্ড ও শেয়ারবাজারের প্রবণতা বলছে খুব কাছেই একটি মন্দা অবস্থান করছে।
শুল্ক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির গতি স্পষ্টভাবেই কমে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন বিনিয়োগ ব্যাংক স্টিফেলের প্রধান অর্থনীতিবিদ লিন্ডসে পিগজা। বিষয়টি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে ট্রাম্প প্রশাসনকে। গত এক সপ্তাহ ধরে শেয়ারবাজারের সব খবরের দিকে নজর রাখছেন ট্রাম্প। বাজার নিয়ে তার মূল হতাশাটি ফেডারেল রিজার্ভ ও এর চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে ঘিরে। একই সাথে তিনি এখন চীনের সাথে বাণিজ্যবিষয়ক চুক্তিতে উপনীত হতে নিযুক্ত দল নিয়েও হতাশ। তার দৃষ্টিতে এ দুই ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণেই প্রশাসন এমন বেকায়দায় পড়েছে। তিনি মনে করেন, বাণিজ্য ক্ষেত্রে এই অচলাবস্থা তার অর্থনীতি ও রাজনীতি দুইয়েরই ক্ষতি করবে, যা তার পুনর্নির্বাচনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গত মাসেই অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে বলে কিছু উপদেষ্টার সতর্কবার্তাকে আমলে নেননি ট্রাম্প। বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুরূপ সতর্কবার্তা এলেও তিনি বাণিজ্য আলোচনা চলার সময়েই চীনের ওপর নতুন করে শুল্কারোপের ঘোষণা দেন। সে সময় তার একটাই বক্তব্য ছিল, আমেরিকার অর্থনীতি অত্যন্ত স্থিতিশীল। অথচ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে যখন অর্থনীতির সঙ্কটগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, তখন তিনি সব আঙুল তাক করছেন ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) দিকে। তিনি বলছেন, সুদহার যথেষ্ট কমানোর সাহস দেখাতে না পারায় অর্থনীতির এই অবস্থা।

 


আরো সংবাদ



premium cement