১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌদি-ইয়েমেন যুদ্ধের নেপথ্যে

-

রফিক আল ওয়াদি ও তার ক্যামেরাম্যান সৌদি আরবের সাথে লাগোয়া ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় তিন দিনের জন্য যুদ্ধের নানা চিত্র ও তথ্য সংগ্রহে আমাদের সহযোগিতা করছিলেন। সব সময় একটি ভয়ই আমাদের মনে কাজ করছিল, আর তা হলো যেকোনো সময় পর্যবেক্ষক কোনো ড্রোন বা হেলিকপ্টার গানশিপ সবার জীবনকে মুহূর্তেই শেষ করে দিবে। সম্প্রতি ইয়েমেন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে মিডল ইস্ট আইর প্রতিবেদক নাসেহ সাকের সরেজমিন একটি প্রতিবেদক সংগ্রহ করেছেন।
রফিক আল ওয়াদি (ছদ্মনাম) একজন হুথি সামরিক প্রতিবেদক। নিরাপত্তাজনিত কারণে তার আসল নাম প্রকাশ করতে মিডল ইস্ট আই প্রতিবেদককে নিষেধ করেন। যদিও তিনি অভিযানের সময় কিছু ছবি মিডল ইস্ট আই’র প্রতিবেদকের সাথে শেয়ার করেন। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ওয়াদি হাতে মাইক্রোফোন, কাঁধে একে ৪৭ রাইফেল ঝুলিয়ে সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলের নাজরান শহরের ওপর নজদারি চালাচ্ছেন। ওই সীমান্ত এলাকাগুলোতে আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হেঁটেছি। ওয়াদি বলছিলেন, আমি ৯৫ ভাগ নিশ্চিত ছিলাম এখান থেকে ফিরে যবো না। ছবিগুলো সম্পর্কে মিডল ইস্ট আইকে ওয়াদি বলেন, গত জুনে সৌদি আরবের নাজরান শহরের নিকটবর্তী সৌদি নিয়ন্ত্রাণাধীন অঞ্চলে যখন হুথিরা হামলা চালায় তখন দিনের বেলা ছবিগুলো তোলা হয়। এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিদ্রোহীরা সাঁজোয়া যানে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে এবং পরিত্যক্ত সামরিক উপকরণ জব্দ করছে। এসবের মধ্যে চমকপ্রদ ছবি হুথি সমর্থিত গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
হুথিদের দাবি তারা সৌদি ন্যাশনাল গার্ড ও সৌদি সমর্থিত যোদ্ধাদের কাছ থেকে ২০টি সামরিক এলাকা দখল করেছে। এ ছাড়াও সৌদি জোটের অন্তত ২০০ যোদ্ধাকেও তারা হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে। তবে হুথিদের এ দাবির ব্যাপারে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। হুথিরা যেসব এলাকা শনাক্ত করেছে এসব এলাকার অধিকাংশই ইয়েমেনের ভূখণ্ডের ভেতরের। এসব অঞ্চল সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত। হুথিদের হামলার জবাবে সৌদি বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে জবাব দেয়। আবার, প্রায়ই ইয়েমেনের ভেতরে ঢুকে বিমান হামলা চালায়।
মিইইকে ওয়াদি বলেন, গত জুনে যেসব অঞ্চল দখল করা হয়েছিল তা হুথিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তা ছাড়া সুদাইস পাহাড়ের একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে হুথিরা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে সৌদি আরবের একটি পাল্টা হামলা প্রতিহত করে। ওয়াদি বলেন, তিনি যে এলাকায় অবস্থান করছেন সেটি সীমান্তবর্তী ইয়েমেনি ভূখণ্ড হলেও ২০১৫ সাল থেকে এ অঞ্চলটি সৌদি সামরিক জোটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কঠিন সব নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে হুথি কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে মিডল ইস্ট আই প্রতিনিধি হুথির সামরিক প্রতিবেদক ওয়াদির সাথে আল ইশাশ শহরে সাক্ষাৎ করে। শহরটি সীমান্ত থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মিইই প্রতিবেদক হুথি কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে যতটা সম্ভব সাদা থেকে উত্তরপূর্বের সীমান্তের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
এ অঞ্চলটি ইয়েমেনের সবচেয়ে গোলযোগপূর্ণ এলাকা।
এমইই প্রতিবেদক বলেন, স্থানীয় হুথি যোদ্ধা আবু হাকিম ছিলেন আমাদের ড্রাইভার। কর্তৃপক্ষ আমার তত্ত্বাবধানে তাকে নিয়োজিত করেছে। সে আমাদের সফরের জন্য একটি টয়োটা গাড়ি জোগাড় করে দেয়।
ওয়াদি ও অপর একজন হুথি সমর্থক আমাদের সফরসঙ্গী ছিলেন। এমনকি ছবি তোলার জন্যও তাদের অনুমতি নিতে হচ্ছিল। বিনা অনুমতিতে ছবি তুলে ফেললে সেটি তারা মুছে দিবে বলছিল। স্থানীয়দের সাথে কথা বলার সময় তারা আমাদের নজরে রাখছিল। স্থানীয় ড্রাইভাররা বলছিলেন, আমরা বাদশাহ সালমানের হামলার ভয়ে ভীত। ওয়াদিন হিসাব মতে, সামরিক অভিযানের সময় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ২০০ হুথি সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।
ওয়াদি একজন সামরিক প্রতিবেদক হলেও তিনি প্রয়োজনে যুদ্ধেও অংশ নেন। নিজের ক্যামেরাকে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন ওয়াদি। মূলত একজন ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন তিন সন্তানের জনক ওয়াদি। ২০১৫ সালে সাদায় তাদের স্কুল বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর সামরিক প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। ওয়াদি জানান, তার ভাইসহ পরিবারের আরো অনেক সদস্যই সৌদি জোটের হামলায় নিহত হয়েছেন।
মিডল ইস্ট আইর প্রতিবেদকের ভাষ্য মতে, ভ্রমণের সময় পথে পথে চোখে পড়ে ইয়েমেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাড়িঘর। অপুষ্ট শিশু আর অনাহারক্লিষ্ট ক্ষুধার্ত মানুষের মুখ। ইয়েমেনের এই বহুজাতিক লড়াইয়ের মূল কারণ হচ্ছে আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখা ও বিস্তার করা।
২০১৪ সাল থেকে সরকারি বাহিনীর সাথে লড়াই করছে হুতি বিদ্রোহীরা। তবে পরের বছর থেকে যুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করে যখন সৌদি জোট এতে হস্তক্ষেপ করে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। ৩৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। দেশটির জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ দুই কোটি ৪১ লাখ লোকের জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা প্রয়োজন। ইয়েমেনের জনগণের জীবনযাত্রায় হোদেইদা বন্দর মূল ভূমিকা পালন করে। সেখানে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর থেকে যুদ্ধবিরতি চললেও থেমে থেমে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছেই। দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’

সকল