২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিয়ানমারে সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

সেনাপ্রধানসহ ৪ জেনারেলের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
সংবিধান সংশোধনের দাবিতে ইয়াঙ্গুনে গতকালের সমাবেশ হএএফপি -

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধান সংশোধন করতে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেয়া উদ্যোগের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সমাবেশ করেছে কয়েক শ’ মানুষ। গতকাল বুধবার সকালে ইয়াঙ্গুনে সংবিধান সংশোধনের দাবিতে বিক্ষোভ করে তারা। আবার সংবিধান সংশোধনের বিরোধিতা করে এ দিন বিকেলে ওই শহরেই পাল্টা বিক্ষোভের আয়োজন করে বিরোধীরা।
সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি-এনএলডির অন্যতম নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল মিয়ানমারের সেনানিয়ন্ত্রিত সংবিধান সংশোধন করা। তবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় তিন বছর পর এ বছরের ২৯ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো সু চির দলের পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধনের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেয়া হয়। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব আলোচনার জন্য গৃহীত হবে কি নাÑ এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে সেনাপ্রধান নিয়োগকৃত ও অনির্বাচিত ২৫ শতাংশ সেনা এমপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। সেনাবাহিনী ভোটাভুটি বর্জন করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য গৃহীত হয়। অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন দল এনএলডি, সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ও কয়েকটি জাতিগত দল বিতর্কে অংশ নেয়। তবে অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় কোনো সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্বকারী এমপির নাম ছিল না। বিতর্ক শেষে সংবিধান সংশোধন উদ্যোগ সফল করতে একটি কমিটি গঠনের ব্যাপারে সম্মত হয় মিয়ানমারের পার্লামেন্ট। সংবিধান সংশোধনের পক্ষে তিন হাজার ৭৬০টি প্রস্তাবসংবলিত একটি রিপোর্ট গত সোমবার (১৫ জুলাই) মিয়ানমারের পার্লামেন্টে জমা দেয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার সংবিধান সংশোধনের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে যে অ্যাক্টিভিস্টরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা সু চির দলের কেউ নন। এ দিন বিক্ষোভকারীরা মাথায় লাল রঙের কাপড় পরে ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় নামেন। ওই লাল কাপড়ে লেখা ছিল : ‘২০০৮ সালের সংবিধান সংশোধন করুন।’
বিক্ষোভের আয়োজক পিয়াই ফিয়ো জ বলেন, ‘বর্তমান সরকার সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ২০০৮ সালের সংবিধান বহাল থাকার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।’ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর তদারকির দায়িত্ব নির্বাচিত নেতাদের হাতে ছেড়ে দেয়ারও দাবি জানান তিনি।
কিয়াউ খিনে উয়িন নামে আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, তিনি সংবিধান সংশোধনের পক্ষে বিক্ষোভ করছেন কারণ বিদ্যমান সংবিধানে দেশের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে সু চির ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। তার অভিযোগ, ‘জোরপূর্বক’ এ সংবিধান আরোপ করা আছে। কিয়াউ আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ চাই যেটি জনগণের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে’।
গতকাল বুধবার পাল্টা এক বিক্ষোভ ডাকে সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবের বিরোধীরা। বিক্ষোভে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিতরণকৃত লিফলেটে বলা হয় ‘যারা তাদের বর্ণ ও ধর্মকে ভালোবাসেন’ তাদেরকে সংবিধান সংরক্ষণের উদ্যোগে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
এ দিকে রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার অভিযোগে দেশটির সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ চার সামরিক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর অর্থ হলো মিয়ানমারের ওই সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোনো সম্পত্তি থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে তারা কোনো ব্যবসায়িক লেনদেনও করতে পারবে না। এই চারজন হলেনÑ মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ভাইস সিনিয়র জেনারেল সো উইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান ও এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং। মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের জন্য যারা দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে কোনো উদ্যোগই মিয়ানমার সরকার নেয়নি, এতে আমরা উদ্বিগ্ন। তা ছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সারা দেশেই নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন চালিয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আসছে।’


আরো সংবাদ



premium cement