ফিলিস্তিনের জন্য সাহায্য সংগ্রহে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মশালা শুরু
- আলজাজিরা
- ২৬ জুন ২০১৯, ০০:০০, আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯, ২২:১০
ফিলিস্তিনকে সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহে পারস্য উপসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইনের রাজধানী মানামাতে শুরু হয়েছে এক অর্থনৈতিক কর্মশালা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে দুই দিন। যার লক্ষ্য অধিকৃত ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মোট পাঁচ হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ।
আয়োজকদের দাবি, এসব অর্থের বেশির ভাগই আসবে বিভিন্ন অনুদান থেকে আর বাকিটা দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে আনা হবে। বিশ্লেষকদের মতে, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন ‘শান্তির লক্ষ্যে সমৃদ্ধি’ নামে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে; এটা তারই প্রথম ধাপ। যেখানে দীর্ঘ দিন ধরে চলা জটিল রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনের পরিবর্তে প্রথম ধাপে ফিলিস্তিনের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করাই পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য। যদিও চলতি বছরের শেষ নাগাদ পরিকল্পনার রাজনৈতিক অংশটিও প্রকাশ করা হবে বলে এরই মধ্যে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন সূত্র।
এ দিকে এবারের শান্তি পরিকল্পনাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে ‘শতবর্ষের সেরা চুক্তি’ নামে অভিহিত করেছেন। সম্মেলনের আগে পরিকল্পনাটির প্রণেতা ট্রাম্প জামাতা জ্যারেড কুশনার এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে ফিলিস্তিনের জনগণ একটি অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় বন্দী ছিল। ‘শান্তির লক্ষ্য সমৃদ্ধি’ নামে পরিকল্পনাটি এমন একটি কাঠামো দেবে যা বাস্তবায়নের ফলে ফিলিস্তিনি জনগণসহ অঞ্চলের সবাই এক উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ পাবে।’ অপর দিকে হোয়াইট হাউজ নিজেই এখনো বিশ্বাস করতে পাড়ছে না যে, এই পরিকল্পনা কোনো দিন বাস্তবায়ন সম্ভব। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন, এই পরিকল্পনা যেকোনো সময় ব্যর্থ হতে পারে; যাতে তিনি মোটেই বিস্মিত হবেন না। পম্পের এই সন্দেহের কারণ, যাদের জন্য এই কর্মশালার আয়োজন সেই ফিলিস্তিনিদের কেউই এই বৈঠকে উপস্থিত নেই।
চলমান রাজনৈতিক জটিলতা এড়াতে আয়োজকরা ইসরাইলকেও এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যদিও মার্কিন চাপে পড়ে জর্দান, মিসর এবং মরক্কোর প্রতিনিধিরা কর্মশালায় উপস্থিত থাকবেন বলে আগেই জানিয়েছে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবসহ আমিরাতের অর্থমন্ত্রীরাও উপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছে। তা ছাড়া বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পক্ষ থেকেও পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে বলে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনকে সহায়তার জন্য এই বৈঠকে যে অর্থ তোলা হবে, তার বেশির ভাগই আসবে আরবের ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যার অর্ধেক ব্যয় হবে অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং গাজার উন্নয়নের কাজে।
ট্রাম্প জামাতা কুশনার বলেছেন, ‘আমি চাই এই অঞ্চলকে একটি প্রথম শ্রেণীর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে। পরিকল্পনার সবচেয়ে ‘সাহসী’ প্রস্তাব হলো ইসরাইলের ভেতর দিয়ে পশ্চিম তীর ও গাজাকে সংযোগকারী একটি করিডোর নির্মাণ।’
যদিও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এবং ইসরাইলের কোনো ধরনের সম্মতি ছাড়া এই করিডোর নির্মাণ ঠিক কেমন করে সম্ভব, সে কথা কুশনার অবশ্য তার টুইটে ব্যাখ্যা করেননি। কর্মশালায় অংশ নেয়া অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, নিজেদের নিরাপত্তাজনিত কারণে ইসরাইলের রক্ষণশীল সরকার কোনো দিন এই করিডোর নির্মাণে সম্মত হবে না। অপর দিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মতে, বর্তমানে তাদের অর্থনৈতিক সাহায্য প্রয়োজন সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সবার আগে চাই জনগণের রাজনৈতিক অধিকার। গত রোববার রামাল্লায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাস বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য আরব দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো দিন অর্থ চাইতে হবে কেন? সে কাজ তো আমরাই পারি।’
দেশটির সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী মুনিব আল মাসরি বলেছেন, ‘আমাদের সমস্যা পুরোপুরি রাজনৈতিক; এটা কোনো অর্থনৈতিক সমস্যা নয়।’ যদিও এই একই কথা বলেছেন ফিলিস্তিনের বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী হানান আশরাভি। তার মতে, ‘আমরা দরিদ্র সে কথা সঠিক, তবে আমাদের এই দারিদ্র্যের কারণ ইসরাইল। তাই অবিলম্বে আমাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন, এরপর দেখুন আমরা ঠিক কেমন করে সমৃদ্ধির দিকে ধাবিত হই।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা